জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থাকে সহযোগিতা বন্ধ করার পথে ইরান (ভিডিও)
১৯৫৭ সালে একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ। যার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ করা। ১৯৫৮ সালে পশ্চিমাপন্থী পাহলভি শাসনের অধীনে এই সংস্থায় যোগ দেয় ইরান।
ইরান আইএইএ-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হলেও পরবর্তীতে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সময়ের সাথে সাথে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব আরও বাড়তে থাকে। সম্প্রতি ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির পর ইরানকে সহযোগিতা শুরু করতে আহ্বান জানায় আইএইএ। কিন্তু সহযোগিতা তো দূরে থাক, এবার আইএইএ-এর সাথে সম্পর্ক ছিন্নের পথে আগাচ্ছে ইরান।
২৫শে জুন আইএইএ-এর সাথে সহযোগিতা স্থগিত করার একটি বিল অনুমোদন করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। বিল অনুযায়ী, এখন থেকে আইএইএ-এর পরিদর্শকরা শুধু ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি পেলেই দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন। দেশটির রাষ্ট্র-ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম নুর নিউজের বরাতে এ খবর নিশ্চিত করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
নতুন এই বিলের প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ। তার মতে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ইস্যুতে আইএইএ-এর নীরবতা সংস্থাটির আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আইএইএ একটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা সংস্থা হলেও ইরান এটিকে পশ্চিমা আধিপত্যের প্রতীক মনে করে। ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে আইএইএ পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপের চাপে কাজ করে। ইরানে আইএইএ-এর পরিদর্শন রিপোর্ট প্রায়ই পশ্চিমা মিডিয়ায় ফাঁস হয়ে যায়, যা তাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ বলে মনে করা হয়।
এদিকে আইএইএ-এর সাথে সহযোগিতা স্থগিতের পাশপাশি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটি থেকেও ইরানের বের হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। ১৯৬৮ সালে ইরান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও একাধিকবার এই চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছে ইরান। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই হুমকি বাস্তবে রূপ নিতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তবে এ বিষয়ে ইরানকে সতর্ক করে দিয়েছেন আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। তার মতে এটি 'বিচ্ছিন্নতা' সৃষ্টি করতে পারে এবং এনপিটির কাঠামোতে গুরুতর ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
এর আগে ২০০৩ সালে একমাত্র দেশ হিসেবে এনপিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়া। এরপর ২০০৫ সালে উত্তর কোরিয়া নিজেকে "পারমাণবিক শক্তিধর দেশ" হিসেবে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। তার পরের বছর উত্তর কোরিয়া প্রথম পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালায়। ফলে এনপিটি চুক্তি থেকে বের হয়ে ইরানও উত্তর কোরিয়ার পথে হাটবে কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: