ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে বসছেন ট্রাম্প-পুতিন, শুরু প্রস্তুতি

ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবার সরাসরি আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠককে কেন্দ্র করে আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজ শহরের স্থানীয় জনগণ নানা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা পিট নোলান এই ঘটনাকে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখছেন। তার মতে, এই বৈঠকের ফলে আলাস্কা ও অ্যাঙ্কোরেজ শহর আন্তর্জাতিকভাবে আরও পরিচিতি পাবে। তিনি মনে করেন, এটি আলাস্কার জন্য একটি অসাধারণ অর্জন এবং অ্যাঙ্কোরেজ শহরের জন্য একটি বিশাল সুযোগ। রয়টার্সকে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনা।
তবে টাইলার উইলসন নামে অন্য এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, বৈঠকটি তার কাছে আগ্রহজাগানিয়া। তবে, তিনি এতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। তার ধারণা, ট্রাম্প যদি সত্যিই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী হন। তবে ইউক্রেনকে সমর্থন জানানো সেই নীতির পরিপন্থী বলে মনে হয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে কিয়েভ এবং মস্কো দুই পক্ষকেই কিছু এলাকা ত্যাগ করতে হতে পারে। তিনি আরও বলেন, পুতিনের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে তিনি দ্রুতই বুঝে ফেলবেন রুশ নেতা কোনো সমঝোতায় আসতে রাজি কি না। এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইতোমধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইউক্রেনকে চাপের মুখে ফেলে একতরফাভাবে একটি শান্তিচুক্তি চাপিয়ে দিতে পারে।
যদিও দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন এবং রুশ তেল ক্রেতাদের ওপর শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তবে তার ‘ভূমি বিনিময়’ সম্পর্কিত মন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করতে আলাস্কা আবার রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে পারেন। তবে জেস ব্রাউন নামে অ্যাঙ্কোরেজের এক বাসিন্দা এই ধরনের ধারণাকে অবাস্তব বলে মনে করেন।
অন্যদিকে প্যাম ক্রাভেজ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ট্রাম্পের এই সফরের সময় তিনি বিক্ষোভ করবেন। তিনি ট্রাম্পের অভিবাসন ও অর্থনৈতিক নীতির বিরোধীতা করেন।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পুতিন যুদ্ধবিরতির কোনো ইচ্ছাই প্রকাশ করেননি বরং নতুন হামলার জন্য তার সেনা পুনর্বিন্যাস করছেন। এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, যদি কেউ শান্তি চায়, তাহলে সে এমনভাবে প্রস্তুতি নেয় না। রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে চায় না।
ইউক্রেনের সামরিক ফ্রন্টের মুখপাত্র জানিয়েছেন, নতুন হামলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাশিয়া তাদের যোদ্ধা ও সামরিক অস্ত্র জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে স্থানান্তর করছে। ট্রাম্প বলেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে আলাপ করলে বুঝতে পারবেন কোনো চুক্তির সম্ভাবনা আছে কি না। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে পুতিন ও জেলেনস্কিকে একসঙ্গে বসিয়ে আলোচনা করানো যেতে পারে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, ইউক্রেনের শান্তিচুক্তিতে কিয়েভের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এটি একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা আইএসডাব্লিউ জানিয়েছে, রাশিয়া এখনও পুরো বিজয়ের আশা করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আলাস্কায় অনুষ্ঠিতব্য এই সভা বিশ্ব রাজনীতির গতি কোন দিকে নিয়ে যাবে? রাশিয়া-ইউক্রেন কি সত্যিই কোনো জমি ছাড়তে প্রস্তুত হবে? নাকি এটি শুধু একটি রাজনৈতিক নাটক মাত্র?
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: