ইউরোপজুড়ে দাবানলের তাণ্ডব: স্পেনে ১৭শ শতাব্দীর আতালাইয়া দুর্গের অস্তিত্ব ঝুঁকিতে

ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপজুড়ে দাবানলের ভয়াবহ তাণ্ডব চলছে। একের পর এক দেশ পুড়ছে আগুনে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল ও জনবসতি। এসব দাবানলের কারণে মানুষের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে অসহনীয়। ধোঁয়ার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বহু মানুষ শারীরিক অস্বস্তিতে ভুগছেন। প্রাণহানির শঙ্কা যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রকৃতিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবার স্পেনের ভেরিন শহরে অবস্থিত ঐতিহাসিক ১৭শ শতাব্দীর আতালাইয়া দুর্গ গত ১৬ আগস্ট এক ভয়ঙ্কর দাবানলের সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে।
১৬৪০ থেকে ১৬৬৮ সালের যুদ্ধের সময় প্রতিবেশী পর্তুগালের আক্রমণ ঠেকাতে এই দুর্গটি নির্মাণ করা হয়। সাম্প্রতিক দাবানলে আশপাশের গাছপালা পুড়ে গেলেও দুর্গটি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। স্পেনের এই দাবানলের কারণে এখন পর্যন্ত ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আগুনে পুড়ে গেছে বিশাল একটি এলাকা।
ইউরোপের নানা অঞ্চলে দাবানল নেভাতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে দমকল বাহিনী। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত দুই দশকে এই গ্রীষ্ম মৌসুমেই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দাবানলের দেখা দিয়েছে। জরুরি পরিষেবার তথ্য অনুযায়ী, টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও উষ্ণ বাতাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও বিপজ্জনক করে তুলেছে।
স্পেনের এই দাবানল ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশাসনের পক্ষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ দাবানলে ১,৫০,০০০ হেক্টরেরও বেশি এলাকা পুড়ে গেছে আগুনে। এক ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ঘন জঙ্গলের উপর দিয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং আকাশে বিশাল ধোঁয়ার কুন্ডলী পেকে আছে।
স্পেনের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে দাবানলের তীব্র ঝুঁকি রয়েছে। উত্তরের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এতে আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা তাপপ্রবাহের কারণে সমগ্র ইউরোপজুড়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা দাবানল নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। প্রচণ্ড গরম আগুনের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। বৃষ্টিপাত ও ঝড়-ঝাপটার প্রবণতাও বাড়ছে। কিছু অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে আবার অন্যত্র বন্যার কারণে জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হিমবাহ গলছে দ্রুতগতিতে। নষ্ট হচ্ছে প্রাণীদের বাসস্থান। বৃক্ষনিধনের কারণে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাখিরা হচ্ছে নীড় হারা। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অনেক মানুষের জীবনযাপন ব্যহত হচ্ছে। হারাচ্ছে কাজের সুযোগ। এদিকে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ার কারণে অনেক ভৌগোলিক এলাকার পানির নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও মানুষের ভবিষ্যত বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হবে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: