• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

টিউলিপের সাজা: যা বলছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলো

প্রকাশিত: ২১:০৩, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
টিউলিপের সাজা: যা বলছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলো

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ রেহানার নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দে অনিয়মের ঘটনায় হওয়া মামলায় আজ রায় দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। রায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাচ বছর, তার বোন শেখ রেহানাকে সাত বছর এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি টিউলিপসহ তিন আসামিকেই এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। 

এই ঘটনা নিয়ে যুক্তরাজ্যের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোয় গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। বেশির ভাগ প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের আদালতে বিচারে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় তার এই সাজা ভোগ করার সম্ভাবনা কম বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনগুলোতে।

বাংলাদেশের আদালতে সাজা ঘোষণার পর টিউলিপ সিদ্দিক একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তার ওই বিবৃতিও তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবেদনে। একটি সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের বক্তব্যও তুলে ধরেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি শিরোনাম করেছে ‘টিউলিপ সিদ্দিক এমপিকে বাংলাদেশে কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে তার অনুপস্থিতিতে বিচারের পরে’। বাংলাদেশে তার অনুপস্থিতিতে বিচারে লেবার এমপি ও সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দুই বছরের কারাদণ্ড হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে তার পরিবারকে একটি প্লট দিতে খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য টিউলিপকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। এ অভিযোগ তিনি জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন।

বিবিসি বলেছে, লন্ডনে অবস্থানরত টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তাঁকে এই সাজা ভোগ করতে হবে বলে মনে হয় না। এক বিবৃতিতে টিউলিপ এই বিচারপ্রক্রিয়াকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘ত্রুটিপূর্ণ ও প্রহসনের’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। বাংলাদেশ দেশটির কাছে একটি ‘২ বি কান্ট্রি’ হিসেবে বিবেচিত, অর্থাৎ তাকে প্রত্যর্পণের অনুমতি পেতে যুক্তরাজ্যের আইনজীবী ও বিচারকদের সামনে সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।

‘বাংলাদেশের আদালত যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে তাঁর অনুপস্থিতি’ শিরোনামে প্রতিবেদন করেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্ক, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে সংঘটিত দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার দ্রুত করতে রাজনৈতিক ও জনমতের চাপ, গত বছর অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত মাসে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়া, আজকের রায় ঘোষণার পর টিউলিপের প্রতিক্রিয়া, লেবার পার্টির প্রতিক্রিয়া, এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সাবেক বিচারমন্ত্রীসহ একদল খ্যাতিমান আইনজীবীর উদ্বেগ প্রকাশসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের আরেক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশে দুর্নীতির জন্য লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে’। বাংলাদেশে একাধিক মামলার আসামি হওয়ার পর টিউলিপ সিদ্দিকের গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সরকারের ‘সিটি মিনিস্টারের’ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনেও মামলার পূর্বাপর, টিউলিপের প্রতিক্রিয়াসহ এ বিষয়ে নানা তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আজ ঢাকার আদালত রায় ঘোষণার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর চিফ সেক্রেটারি ড্যারেন জোনসের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বিবিসি ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘এটা টিউলিপের ব্যক্তিগত বিষয়, যেটা নিয়ে তাকেই কথা বলতে হবে। তবে আমার জানাবোঝা মতে, বাংলাদেশে একটি বিচার হয়েছে, যার অংশ তিনি ছিলেন না। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিতর্কে যুক্ত হতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাকে তা করতে দেওয়া হয়নি। তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এটা আইনি পরিস্থিতির চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তিনি তার বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ অস্বীকার করে যাচ্ছেন।’

যুক্তরাজ্যের আরেক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘বাংলাদেশে দুর্নীতির জন্য টিউলিপ সিদ্দিকের দুই বছরের কারাদণ্ড’। এর প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ বাংলাদেশের এই আদালতকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ আখ্যায়িত করে রায়কে নাকচ করেছেন বলেও প্রতিবেদনে ফলাও করে প্রকাশ করেছে তারা।

প্রতিবেদনে এ মামলা ও রায়সংক্রান্ত নানা তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি বলা হয়েছে, টেলিগ্রাফ এমন সব নথিপত্র দেখেছে, যাতে টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল বলে মনে হয়েছে, যা তার আগের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অবশ্য যুক্তরাজ্যের এই এমপি বৃহস্পতিবার বলেছেন, তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরার জন্য জাল–জালিয়াতি করে এসব কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে।

বিভি/এসজি

মন্তব্য করুন: