এবার মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান ট্রাম্পের
রাশিয়া-চীনের সমর্থনে কঠোর অবস্থানে না থেকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সোমবার ফ্লোরিডায় নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া মাদুরোর জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অন্যথায় মাদুরোর জন্য ভবিষ্যত পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে বলে সতর্ক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট। এছাড়া মাদুরো সরকারের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে দেশটির প্রধান মিত্র রাশিয়া ও চীন। তবে শেষ পর্যন্ত কি দুই বন্ধ রাষ্ট্রের সমর্থনে প্রেসিডেন্ট মাদুরো ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন? কী বলছেন বিশ্লেষকরা।
ভেনিজুয়েলার প্রতি চীন রাশিয়ার সমর্থনের তোয়াক্কা করলেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উল্টো কঠোর অবস্থানে না থেকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানালেন তিনি। সোমবার ফ্লোরিডায় নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলে বসলেন, ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়াই হবে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। না হলে তার জন্য ভবিষ্যত হবে আরও অনকে বেশি কঠিন, এমন সতর্কবার্তাও দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয় নিকোলাস মাদুরোর ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়াই উচিৎ হবে। এটা তার জন্য একটি স্মার্ট সিদ্ধান্ত হবে। আবারও বলছি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে খুবই খারপ করছে ভেনিজুয়েলা। তারা সীমান্ত দিয়ে লাখো সন্ত্রাসী পাঠাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের পাঠাচ্ছে। এসব মেনে নেয়া হবে না।
এই রাজনৈতিক চাপের মধ্যেই ভেনিজুয়েলার তেল খাতকে লক্ষ্য করে নৌ অবরোধ আরও জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, মাদুরো সরকার তেল বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থ ব্যবহার করছে মাদক সন্ত্রাস, মানব পাচার, হত্যা ও অপহরণের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ভেনিজুয়েলা তেল খাতকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেয়ার মাধ্যমে এর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর বিরোধীতা করে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তবে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছেন। এবার প্রেসিডেন্ট মাদুরো জাতিসংঘে সদস্য রাষ্ট্র এবং ক্যারিবীয় নেতাদের কাছে একটি আবেদন পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক কর্মকাণ্ডের আন্তর্জাতিক নিন্দার আহ্বান জানিয়েছে। নৌ অবরোধ ও সশস্ত্র আক্রমণ অবিলম্বে বন্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ওয়াশিংটনের এসব পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিলের মধ্যে ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ অভিযান এবং তেলবাহী জাহাজ জব্দের ঘটনাকে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্যারিবীয় সাগরে এ ধরনের তৎপরতা আন্তর্জাতিক নৌ চলাচলের স্বাধীনতা ও পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করছে।
চীন ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি তেলবাহী জাহাজ জব্দের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এ ধরনের জাহাজ জব্দের ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে চীন। এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ভেনিজুয়েলার অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। চীন সব ধরনের একতরফা ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
ভেনিজুয়েলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতিতে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার অবস্থান সামনের দিনগুলোতে ক্যারিবীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করবে বলে মত বিশ্লেষকদের। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়েও সংশয় থেকেই যায়।
বিভি/এজেড




মন্তব্য করুন: