• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার

নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো খুশি রাখার চেষ্টা`

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ১৪ জুন ২০২৩

ফন্ট সাইজ
নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো খুশি রাখার চেষ্টা`

সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আরেকদফা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ার বিষয়টি বাংলাদেশে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে৷ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে এই ধরনের উদ্যোগ কতটা যৌক্তিক? সামনে নির্বাচন, ফলে তাদের খুশি করার বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে সরকার সবকিছুর সমন্বয় কীভাবে করতে পারে? এবিষয়ে বাংলাভিশনের কন্টেন্ট পার্টনার ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার৷ 

 

 বাজেটে কোন প্রস্তাবনা না থাকলেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ হঠাৎ করে বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ কেন?

আলী ইমাম মজুমদার : উদ্যোগটা কিন্তু হঠাৎ করে নেওয়া হয়েছে এমন না৷ বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছিল৷ বর্তমানে দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে৷ সীমিত আয়ের সরকারি কর্মচারীরা জীবন ধারণে অত্যন্ত চাপের মুখে ছিল৷ ফলে তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি ছিল৷ বেতন বৃদ্ধির জন্য বাজেটে টাকা থাকলেই হলো৷ এটা বাজেটে পাস হতে হয় না৷ সরকারের নির্বাহী আদেশে বেতন বাড়ানো হয়৷ বর্তমানে যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে কাদের দেবে? কী পরিমাণ দেবে? সেটা অস্পষ্ট৷ তবে বেতন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি৷

নির্বাচনের আগে এটা কি সরকারের কোনো কৌশল?

নির্বাচনের আগে বলেন, পরে বলেন সরকারকে কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের পুষতে হবে অর্থাৎ বেতন দিতে হবে৷ আপনার বাসার কাজের লোককে যেমন বেতন দিতে হয়, তেমনি সরকারকেও কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়৷ নির্বাচনের আগে সরকার সবাইকে খুশি রাখতে চায় এটা ঠিক৷ তাদের খুশি রাখার একটা প্রচেষ্টা হতেও পারে৷ এই প্রচেষ্টা শুভ বলে আমি মনে করি অন্তত সরকারি কর্মচারীদের জন্য৷ তাদের বেতন বাড়ানো দরকার৷


সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লে তো আবার জিনিসপত্রের দাম আরও এক দফা বাড়বে৷ এই সময় কী এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া ঠিক হচ্ছে?

এটা বলা হয়৷ কিন্তু উপমহাদেশের মধ্যে আমাদের দেশে সরকারি কর্মচারীদের বেতন সবচেয়ে কম৷ আমি যদি ভারতের সঙ্গেও তুলনা করি, বলা হয় ভারতের চেয়ে আমাদের মাথাপিছু আয় বেশি৷ অথচ ভারতের থেকে আমাদের উপরের পর্যায়ে বলেন আর নিচের পর্যায়ে বলেন বেতন অনেক কম৷ ভারতে একজন সচিবের বেতন ২ লাখ ২৫ হাজার রুপি৷ অথচ আমাদের দেশে একজন সচিবের বেতন ৭৪ হাজার টাকা৷ এসব বিবেচনায় আমরা বেতনের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছি৷ বেতন বাড়ানো উচিৎ বলে আমি মনে করি৷ তবে আমি যেটা শুনেছি, বর্তমানে খুব বেশি বেতন বাড়ছে না৷ প্রতি বছর তো এমনিতেই ৫ শতাংশ বেতন বাড়ে৷ সেটা ৮ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানোর কথা শুনেছি৷ 

সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে না৷ সেক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কী?

সাধারণ মানুষের যে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের কিছু করণীয় আছে৷ জিনিসপত্রের মূল্য যাতে সহনশীল হয়, সেক্ষেত্রে সরকার সময়মতো পদক্ষেপ নেবে এবং মানুষ তাতে সুফল পাবে৷ যেমন পেঁয়াজের দাম নিয়ে কিছুদিন যেটা চলল, সরকার বা সবাই দেখল পেঁয়াজের দাম অনায্যভাবে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে৷ প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা হলেই কৃষকের জন্য যৌক্তিক হয়৷ সেটা ১০০ টাকায় উঠে গেল৷ যখন ৭০ টাকা উঠল তখন প্রতিবেশি দেশ ভারতে ১৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে৷ তখনই কিন্তু আমদানির অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল৷ এখন আমদানির অনুমতি দিয়েছে, দেখেন কত টাকা কমে গেছে৷ সাধারণ ভোক্তাদের এটা উপকারে আসবে৷ এভাবে সাধারণ মানুষের জন্য সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে৷

প্রস্তাবনায় না থাকলেও সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা না চাপানোর ঘোষণা থাকার পরও সেটা বাড়ছে৷ এই বৈপরিত্য কেন?

কর কিন্তু সরকারি কর্মচারীরাও দেয়৷ আমরা যারা অবসরপ্রাপ্ত মানুষ আমরা কর দেই৷ হ্যাঁ, পেনশনের উপর কর নেই৷ কিন্তু অন্যান্য খাতে অর্থাৎ আমি যে ফ্ল্যাটের ভাড়া পাই সেটার জন্য কর দিতে হয়৷ পরোক্ষ কর যেটা আছে, সেটা আমরা দেই৷ আপনার মতো আমিও বাজার করতে যাই৷ বাজারে যা কিছুই আছে তার সব কিছুই আপনার মতো আমি কর দিয়ে কিনি৷ আমাদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই৷ দাম বাড়লে ভুক্তভোগী আমরাও হই৷

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লে কতভাগ মানুষ উপকৃত হন?

আমাদের বর্তমানে ১৬ লাখের মতো সরকারি কর্মচারী আছে৷ একটা পরিবারে যদি ৫ জন ধরেন তাহলে ৮০ লাখ মানুষ সরাসরি উপকৃত হন৷ তাদের ক্রয়ক্ষমতাটা কিন্তু মার্কেটে হিট করবে৷ তারা যখন বাজারে যাবেন তখন বেচাকেনা বাড়বে৷ যারা বিক্রেতা তাদেরও আয় বাড়বে৷ মার্কেটটা প্রাণবন্ত হবে৷ সেক্ষেত্রে টাকার প্রবাহ বাড়বে৷ ব্যবসা বাণিজ্যও বাড়বে৷

বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লে সংকট আরও বাড়বে কিনা?

সরকারি কর্মচারীরা কিন্তু সরকারের প্রয়োজনীয় অংশ৷ সরকার যদি কাউকে অতিরিক্ত মনে করে, তাদের কিন্তু বাদ দিতে পারে৷ তবে যতক্ষন থাকবে তাকে উপযুক্ত বেতন দিতে হবে৷ এই যে নিম্নপদস্থ কর্মচারী যারা আছে তারা তো দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন৷ যারা গ্রেড-১৯ বা ২০-এ বেতন পায় তারা তো ৮ হাজার টাকা পায়৷ সব মিলিয়ে ১২-১৩ হাজার টাকা পায়৷ দারিদ্র্য সীমা হলো যার প্রতিদিনের আয় ১ দশমিক ৯ ডলারের নিচে৷ ধরেন নিম্নপদস্থ একজন কর্মচারীর মাসে যদি আয় ১৫ হাজার টাকাও হয় এবং তার পরিবারের সদস্য যদি হয় পাঁচ জন তাহলে প্রতিজনের জন্য বরাদ্দ তিন হাজার টাকা৷ ১ দশমিক ৯ ডলার প্রতিদিনের আয় হলে সেখান থেকে এটা কত কম দেখেন? অর্থাৎ তারা দারিদ্র্য সীমার নিচেই বসবাস করছে৷ সরকারি চাকরি করে একজন দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করবে এটা নিশ্চয় আপনারা চাইবেন না? আমি মনে করি, আমাদের চাওয়া উচিৎ তারা স্বচ্ছল থাকুক৷ তবে তারা যেন মানুষকে যথাযথ সেবা দেয় এবং দুর্নীতিমুক্ত থাকে৷ তার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সেটা নেওয়া উচিৎ৷

সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের সমন্বয় করে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের করণীয় কী?

বেসরকারি খাতে কিন্তু দুইটা শ্রেণী আছে৷ গার্মেন্টস সেক্টর যদি ধরেন সেখানে কর্মকর্তা পর্যায়ে যারা আছেন তাদের বেতন কিন্তু অনেক বেশি৷ ব্যাংকগুলোতে একটু সিনিয়র যারা আছেন তাদের বেতনও অনেক বেশি৷ ব্যাংকে একজন জিএমের বেতন তিন লাখ টাকা৷ একজন এমডির বেতন ৭-৮ লাখ টাকা৷ ক্ষেত্রবিশেষ ২০-২২ লাখ টাকাও আছে৷ ইসলামী ব্যাংকের এমডি মনে হয় ২০ লাখ টাকার উপর বেতন পান৷ সে হিসেবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কমই৷ তবে হ্যাঁ বেসরকারি খাতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন অত্যন্ত কম৷ তাদের বেতন যৌক্তিক পরিমাণে আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি৷

করের আওতা বাড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উপর ভ্যাট কমিয়ে সরকার দাম একটু কমাতে পারে কিনা?

করের বিষয়টা একটু জটিল৷ এবার দেখেন বাজেটে যেটা করা হয়েছে, যাদের টিন আছে তাদের সবাইকে ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা দিতে হবে৷ যাদের আয় নেই তাদেরও৷ এটা গ্রহণযোগ্য ব্যাপার বলে আমার মনে হয় না৷ সরকারের এটা বাদ দেওয়া উচিৎ৷ আর বেসরকারি পর্যায়ের বেতন বাড়ানোর জন্য সরকারের যে মেকানিজম আছে সেটা কাজে লাগাতে হবে৷ যেমন ধরেন সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড বলে একটা ব্যবস্থা আছে৷ এই ওয়েজবোর্ড অনুসারে সংবাদপত্রের মালিকেরা যেন সাংবাদিকদের বেতন দেন সে ব্যাপারে সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ বা বাধ্য করা উচিৎ৷ সরকার যখন তাদের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তখন এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করা উচিৎ৷ পাশাপাশি শ্রমিক যারা আছেন তাদের জন্যও কিন্তু ন্যূনতম মজুরি বোর্ড আছে৷ সেখানেও মাঝে মধ্যে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে সমন্বয় করা দরকার৷ সেটাও অত্যন্ত কম৷ বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে মিল রেখে সেটা পুনঃনির্ধারণ করা উচিৎ বলেই আমি মনে করি৷

মন্তব্য করুন: