অন্যের সম্পদ রক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন ফায়ারফাইটাররা: ডিজি
ছবি: ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন
যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই সবার আগে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর কর্মীগণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যের সম্পদ রক্ষায় কাজ করেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। এই অগ্রগতিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে সকল দুর্যোগে প্রথম সাড়া প্রদান করা এই প্রতিষ্ঠানটির। বৃদ্ধি পেয়েছে এর কর্মীদের সুবিধাও। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর দেশ ও জনগণের সেবায় কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে? প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য সাফল্যই বা কি? এসব বিষয়েও কথা হয় মো. মাইন উদ্দিনের সাথে।
তিনি জানান, ‘সবশেষ সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নি নির্বাপণকালীন শহিদ হয়েছেন ১৩ জন ফায়ারফাইটার। সরকারিভাবে এই ১৩ ফায়ারফাইটারকে ‘অগ্নিবীর’ খেতাব প্রদান করা হয়েছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ২১ আগস্ট ২০২২ ‘অগ্নিবীর’ খেতাবের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ১৬ আগস্ট ২০২২ ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অগ্নিবীর’ ঘোষণা করেন।’
ফায়ার ডিজি আরও জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তুরস্কে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে তুরস্কে একটি সম্মিলিত সাহায্যকারী দল পাঠানো হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর ১২ সদস্য তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়। সেখানে তাদের উদ্ধারকাজ সারা বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করে।
বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার লেডার সংবলিত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের গাড়ি যুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের যান্ত্রিক বহরে। টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) নামের এই গাড়িটি দিয়ে ৬৮ মিটার উচ্চতার বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করা যাবে। এছাড়া অপারেশনাল কাজে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল বিভাগে টার্ন টেবল লেডার প্রদান করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের সব দপ্তরের জমির নামজারিতে শৃঙ্খলা আনা হয়েছে এবং সকল জমিজমায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে জমির নামজারি সঠিক পদ্ধতিতে না হওয়ায় সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
গত ৬ মার্চ ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত পল্লবী ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ফায়ার সার্ভিসের ইতিহাসে এটিই প্রথম কোনো সেনাপ্রধানের ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন।
ফায়ার সার্ভিসের সাফল্য উল্লেখ করতে গিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, জনসেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আমরা গত বছর স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেছি। ২৩ মার্চ ২০২৩ প্রধানমন্ত্রী ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হাতে এই পুরস্কার হস্তান্তর করেন। এটি ফায়ার ফাইটারদের দেশের সেবায় আরো অনুপ্রাণিত করেছে। আমাদের মনোবল আরো উজ্জীবিত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের অন্যান্য কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, সদর দপ্তরের চত্বরে অগ্নিসেনা উদ্যান নির্মাণ, অধিদপ্তরে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন গেইট নির্মাণ, সরকারি খরচে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের হজ পালনের সুবিধা সৃষ্টি, ফায়ার সার্ভিসের শহিদ পরিবারকে বিভিন্ন উৎসবে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান, দেশের সর্বত্র পপুলার হাসপাতালে ডিসকাউন্ট মূল্যে চিকিৎসা সুবিধা সৃষ্টি, শীতবস্ত্র ও ওষুধ এবং ইফতার প্রণোদনা প্রদান, কর্পোরেট সিম চালুকরণ, সীতাকুন্ড ও বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেট অগ্নিদুর্ঘটনায় সফল নেতৃত্ব প্রদান, অবসর গ্রহণকারীদের প্রত্যয়ন পত্র প্রদান, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ২য় তলা ক্যান্টিন নির্মাণ, পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে বিভিন্ন তথ্যবহুল পুস্তক প্রকাশসহ আরো কিছু কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।
এরইমধ্যে বেশকিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু কাজ চলমান রয়েছে। সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন ফায়ার ডিজি।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: