চোখ উঠেছে? হতে পারে করোনাও

সংগৃহীত ছবি
এ মৌসুমে ছড়িয়ে পড়ছে ছোঁয়াচে রোগ চোখ ওঠা। করোনার এ সময় চোখ ওঠা নিয়ে প্রয়োজন আরও সতর্কতা। করোনার সংক্রমণে কারও কারও চোখে প্রদাহ হতে দেখা যাচ্ছে। কাজেই এ সময় চোখ উঠলে করোনার অন্য উপসর্গ রয়েছে কি না, তা খেয়াল করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে করোনার পরীক্ষা করাতে হবে।
গরমে আর বর্ষায় চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। একে বলা হয় কনজাংটিভাইটিস বা চোখের আবরণ কনজাংটিভার প্রদাহ। সমস্যাটি চোখ ওঠা নামেই পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ার দরুন দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
রোগীর ব্যবহৃত রুমাল, তোয়ালে, বালিশ অন্যরা ব্যবহার করলে অন্যরাও এতে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া কনজাংটিভাইটিসের জন্য দায়ী ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশে যারা থাকে, তারাও এ রোগে আক্রান্ত হয়।
চোখ ওঠা রোগের লক্ষণগুলো হলো:
-সংক্রমিত চোখের সাদা অংশটি গোলাপি বা লালচে হয়ে ওঠা।
-চোখ দিয়ে পানি পড়া।
-চোখে জ্বালা ও চুলকানির ভাব।
-চোখে অতিরিক্ত পিঁচুটি আসা।
-চোখের পাতা ফুলে ওঠা।
-চোখ খচখচ করা।
-চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া।
-আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা।
-সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় চোখের পাতায় চটচটে পদার্থ লেগে থাকা।
এ রোগের কারণ:
চোখ ওঠার মূল কারণই হলো সংক্রমণ, অ্যালার্জি ও পরিবেশের যন্ত্রণা সৃষ্টিকারী পদার্থগুলো।
সাধারণত স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ক্ল্যামাইডিয়া ও গোনোকক্কাসের মতো ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে সংক্রমণ হয়। সংক্রমণ পোকার মাধ্যমে, সংক্রমিত ব্যক্তির চোখ থেকে, আবার সংক্রমিত কসমেটিক বা প্রসাধনী দ্রব্য থেকেও ছড়ায়।
ফুলের রেণু, ধুলোর কণা, পশুপাখির লোম/পালক, দীর্ঘক্ষণ ধরে শক্ত বা নরম কন্ট্যাক্ট লেন্স একনাগাড়ে ব্যবহার করলে চোখের অ্যালার্জি হয়।
সাধারণত পরিবেশের যন্ত্রণা উৎপাদক কারণ হলো- দূষণ (ধোঁয়া, বাষ্প, প্রভৃতি), সুইমিং পুলের জলে থাকা ক্লোরিন ও বিষাক্ত রাসায়নিক।
করোনা নাকি চোখ ওঠা, নির্ণয় করবেন কীভাবে?
রোগীর চোখের রোগের পূর্বেকার ইতিহাস, লক্ষণ, উপসর্গ, চক্ষু পরীক্ষার মাধ্যমে, চিকিৎসক (চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ) সিদ্ধান্তে আসেন যে রোগীর চোখ উঠেছে কি না। সংক্রমণের কারণে দেখার অসুবিধা হচ্ছে কি না, ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখেন এবং চোখের কনজাংকটিভার অবস্থা, চোখের বাহ্যিক টিস্যু বা কলা ও চোখের ভিতরকার গঠনও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন চিকিৎসক। সাধারণত, চোখ ওঠা রোগের সমস্যা সাধারণত প্রায় চার সপ্তাহ মতো থাকে। সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা চিকিৎসায় ঠিকমতো সাড়া না মেলে, তাহলে সোয়াব (চোখের পিঁচুটির নমুনা/ চোখের নির্গত বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ) সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়।
যদি করোনা হয়ে থাকে তাহলে চোখ ওঠা রোগের লক্ষণের সঙ্গে করোনার অন্যান্য লক্ষণ এক সপ্তাহের মধ্যেই দেখা দেবে।
করণীয়
কনজাংকটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সংক্রমণের কারণ অনুযায়ী করা হয়। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দেন চিকিৎসক, ভাইরাস-ঘটিত সংক্রমণ সারতে তার নিজস্ব সময় লাগে। ঠান্ডা সেঁক ও আর্টিফিশিয়াল টিয়ার্স বা কৃত্রিম চোখের পানি উপসর্গ অনুযায়ী উপশম দিতে সাহায্য করে। অ্যালার্জি ঘটিত কনজাংকটিভাইটিসের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিনস ও আই ড্রপ দেওয়া হয়। কনজাংকটিভাইটিসের সময়ে কন্ট্যাক্ট লেন্সের ব্যবহার পুরোপরি বন্ধ রাখা প্রয়োজন।
পরিবারের বাকি সদস্যদের সংক্রমিত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেন যেভাবে
-সংক্রমিত চোখ/চোখদুটি বেশি না ছোঁয়া।
-হাত ভালো করে ধোওয়া দরকার।
-নিজের তোয়ালে ও প্রসাধনী দ্রব্য অন্য কাউকে ব্যবহার করতে না দেওয়া।
সূত্র: মাইউপচার ডটকম
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: