জ্যাম সামলাতে গিয়ে নিজেই ইফতারির সময়টুকু পায় না ট্রাফিক পুলিশ
ইফতারির আর মিনিট কয়েক বাকি। রাজধানীর কারওয়ানবাজার মোড়ে তখন রাজ্যের ব্যস্ততা। সবার লক্ষ্য গন্তব্যে গিয়ে ইফতার ধরা। সেইসব গাড়িকে দিকনির্দেশনা দিয়ে মোড় পার করে দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
চারদিকে তখন তীব্র হর্ন, আর গাড়ির ছোটাছুটি। এর মধ্যেই মসজিদের মাইকে চলছে মাগরিবের আজান। কিন্তু সম্ভাবত টেরই পাননি খোকন নামের ট্রাফিক পুলিশের এই সদস্য। টের পেলেও বোধয় কিছুই করার নেই তার। কারণ একটু হাত থামালেই বেধে যাচ্ছে যানজট।
মোড়ের অন্যপ্রান্তে দাঁড়ানো তার অন্য সহকর্মী অবশ্য আজান টের পেয়েছেন। কিন্তু বসে ইফতার করার সুযোগ নেই তারও। তাই বোতল হাতে পানি পান করতে করতেই নিয়ন্ত্রণ করছেন যানবাহন।
আজানের অন্তত ৫-৭ মিনিট পর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে যানজট। এবার ইফতার নিতে পুলিশ বক্সের দিকে রওনা হন খোকন। কিন্তু ততক্ষণে আবারও বেধে গেছে যানজট। ফলে ইফতারি নিতে পৌঁছানোর আগেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাগ দেখিয়ে আবারও তাকে পাঠালেন আগের স্থানে। ইফতারির সময়ের প্রায় ১০ মিনিট পেরিয়ে গেলেও এখনো ১ ফোটা পানিও পান করার সুযোগ হয়নি তার।
আরও মিনিট পাচেক পর পুলিশ বক্স থেকে তাদের জন্য নিয়ে আসা হলো ছোলা মুড়ির প্লেট। সার্ক ফোয়ারার ছাতার নিচে রেখে একজন সহকর্মী ডেকে জানিয়ে দেন ইফতারি গ্রহণ করতে। কিন্তু তখনো আসার সুযোগ নেই খোকনের। বললেন, মানুষকে নিজ ঘরে পৌঁছে দিয়ে ইফতার করাতে পারার মধ্যেই প্রশান্তি তাঁদের।
সোনারগাঁও ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ইনচার্জ আনোয়ার কবির বাংলাভিশনকে বলেন, আমাদের এখানে ৩০ জন সদস্য রয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে এই মোড়ে সব সময়ই একটু বেশি চাপ থাকে। তাছাড়া রোজায় ঈদ মার্কেটকে ঘিরে বসুন্ধরামুখী যাত্রী বেশি থাকায় সেই চাপটা এখানে পড়ে। ফলে এখানকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হয়।
তিনি বলেন, আমাদের সদস্যরা রোজা রেখে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছেন। তারা এক হাতে পানি বা খেজুর নিয়ে অন্য হাতে সড়ক নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু মানুষকে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছে দিতে পারাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই সর্বাধিক মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে ইফতার করার ব্যবস্থা করে দিতে। যতিও বর্তমান বাস্তবতায় সবাইকে পৌঁছাতে পারি না তবে চেষ্টায় ত্রুটি নেই।
জনগণ সহযোগিতা করলে যানজট নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সহজ হয় বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: