• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

২৫ বার আগুনে পুড়েছে সুন্দরবন! 

জসিম উদ্দিন, মোংলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৪২, ৫ মে ২০২৪

ফন্ট সাইজ
২৫ বার আগুনে পুড়েছে সুন্দরবন! 

বার বার আগুনে পুড়ছে সুন্দরবন। এতে ধ্বংস হচ্ছে বিশাল বনভূমি। ক্ষতির মুখে পড়ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন বণ্যপ্রাণী। সর্বশেষ শনিবার (৪ মে) লাগা আগুন রবিবার (৫ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে চার একরের অধিক এলাকাজুড়ে। আগুনের কবল থেকে বনভূমি রক্ষায় ফায়ার লাইন কাটতে শুরু করেছে ফায়ারকর্মীরা। এদিকে আগুন লাগার ঘটনায় বন বিভাগকে দায়ী করে মানববন্ধন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আগুন নেভানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

বন বিভাগের সূত্র মতে, এর আগে ২০০২ সালের ২২ মার্চ বনের কটকা অভয়ারণ্যে আগুন লাগে। পাশাপাশি একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়া রেঞ্জে আগুন লাগে দুইবার। ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ আগুনে পুড়ে যায় চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী ক্যাম্পের বন। ২০০৫ সালে ৮ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী এলাকায় আগুন লাগে। একই সালের ১৩ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলার বন পুড়ে যায়। ২০০৬ সালে সবচেয়ে বেশিবার বনে আগুন লাগে। ২০০৬ সালের ৯ মার্চ, ১১ ও ১২ এপ্রিল, ১ ও ৪ মে সুন্দরবনের তেড়াবেকা, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় আগুন লাগে। ২০০৭ সালের ১৫ জানুয়ারি, ১৯ মার্চ ও ২৮ মার্চ সুন্দরবনের পচাকোড়ালিয়া, নাংলী ও ডুমুরিয়া রেঞ্জে আগুন লাগে। ২০১০ সালের ২০ মার্চ গুলিশাখালীতে আগুন লাগে। ২০১১ সালের ১ ও ৮ মার্চ সুন্দরবনের নাংলীতে দুবার আবার আগুন লাগে। ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ গুলিশাখালীতে আবারো আগুন লাগে। ২০১৬ সালে ২৭ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত নাংলী, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলায় এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালের ২৬ মে সুন্দরবনের মাদ্রাসারছিলায় আগুন লাগে, ২০২১ সালে ৩ মে শরণখোলা রেঞ্জের ধাসের ভারানী এলাকায় আগুন লাগে। ওই আগুন নেভার এক দিন পর আবারও ৫ মে একই এলাকায় আগুন লাগে। মোট ২৫ বার আগুন লাগার ফলে সুন্দরবনে ৭৫ একরের বেশি বনভূমি উজাড় হয়ে গেছে।

বার বার সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনায় বন বিভাগকে দায়ী করছেন পরিবেশবাদীরা। রবিবার বনের আমুর বুনিয়া এলাকায় মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সদস্যরা। এ সময় বাপার বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি নুর আলম শেখ বলেন, গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৫ বার আগুন লেগে সরকারি হিসাবে প্রায় ৭৫ একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বনকর্মকর্তার যোগসাজশে এবং অদক্ষ মৌয়ালদের কারণে সুন্দরবনে বারে বারে আগুন লাগছে। এর দায়ভার বনবিভাগ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। পরিবেশকর্মী, সংবাদকর্মী, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা এবং অতীতে সংগঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করার কারণেই সুন্দরবনের আমুর বুনিয়া এলাকায় চার বছর পরে আবারও অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হলো।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উড অ্যান্ড ডিসিপ্লিন বিভাগের প্রফেসর ড. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, মাছ, গোলপাতা ও মধু সংগ্রহ করতে যাওয়া বনজীবীদের ফেলে দেওয়া বিড়ি-সিগারেটের আগুন, মৌয়ালদের ফেলে দেওয়া মশাল, মাছ ধরার সুবিধার্থে স্থানীয়দের লতাগুল্ম পরিষ্কার করার জন্য ইচ্ছে করে আগুন লাগার মতো বিষয়গুলো থেকে সুন্দরবনে আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটছে। তবে বনে আগুন লাগার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক সময় গাছের পাতা পড়ে পুরু স্তর তৈরি হয়। জোয়ারের পানিতে পাতা পচে সেখান থেকে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়। মিথেন গ্যাস থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। সুন্দরবনের টহল ফাঁড়ির নিকটবর্তী এলাকায় ভোলা নদী প্রায় মরে গেছে। সুন্দরবনের ছোটখাটো অনেক নদী ও খাল মরে যাওয়ার কারণে অনেক এলাকা শুকিয়ে গেছে। নদী-জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ার কারণে শুষ্ক অঞ্চল আগুনের সূত্রপাতে সহায়তা করছে। বারবার বনে আগুন লাগার ক্ষেত্রে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশও আগুন লাগা বন্ধের ক্ষেত্রে মানা হয়েছে বলে মনে হয় না। বারবার আগুন লাগার স্থানে বনকর্মীদের টহল জোরদার, দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য রিভার ফায়ার স্টেশন তৈরি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ, সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে বেড়া নির্মাণ, বনসংলগ্ন ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা নদী ও খাল পুনঃখনন ইত্যাদি সুপারিশ করা হলেও তার বেশিরভাগই মানা হয়নি। সুপারিশ আমলে না নিলে আগুন লাগার পর কমিটি গঠন করে লাভ কী? সুন্দরবনে বনজীবীদের প্রবেশ বন্ধ করে তাদের বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2