দক্ষতা উন্নয়নে এনএসডিএর সাথে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক

দেশের শিক্ষার্থীদের পেশাগত ও কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সংযোগ শক্তিশালীকরণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পৃথক চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
আগারগাঁও অবস্থিত এনএসডিএ সভাকক্ষে শনিবার তারিখে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এনএসডিএ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, একই লক্ষ্যে বিগত ৪জুন ২০২৪ তারিখে এনএসডিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ও পৃথক দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ডিন অব এএসই অধ্যাপক মো: আব্দুল কাদের জিলানী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
এসময় অনুষ্ঠানে প্রধানঅতিথিহিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানউপদেষ্টারমুখ্যসচিবএমসিরাজউদ্দিনমিয়া। জাতীয়দক্ষতাউন্নয়নকর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহীচেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীনআফরোজ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এনএসডিএ এবং সংশ্লিষ্ট সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক গুলোর আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন শর্টকোর্স, প্রফেশনাল কোর্স, কর্মক্ষেত্রের উপযোগী দক্ষতা প্রশিক্ষণ, এবং দক্ষতা বিষয়ক সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাকরির বাজার জরিপ, সেক্টর ভিত্তিক মানব সম্পদ চাহিদা পর্যালোচনা এবং চাকুরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এনএসডিএ এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের যৌথ প্রচেষ্টায় দেশের দক্ষতা ইকো-সিস্টেম আরও সমৃদ্ধ হবে।শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন এবং দক্ষতা সনদের আয়োজন করা হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করা হবে।বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ড ও কারিকুলাম উন্নয়ন, শিক্ষকদের টিওটি (ট্রেনিং অব ট্রেইনারস) এবংমাস্টার ট্রেইনার গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও গ্রহণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানঅতিথির বক্তব্যে প্রধানউপদেষ্টারমুখ্যসচিবএমসিরাজউদ্দিনমিয়ামাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ‘থ্রি-জিরো’ তত্ত্ব বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তির বিশ্বে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি জাপানী ভাষার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অসংখ্য তরুণ সম্প্রতি জাপানী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে জাপানেবিভিন্ন সেক্টরে কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি আরো বলেন, দেশের জনশক্তি হলো সম্পদ, তা যদি আমরা আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারি এতে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র উন্মোচন হবে। শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, অন্যান্য উন্নত দেশেও আমাদের জনশক্তি ইতোমধ্যে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে।
এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে বর্তমান বিশ্বে প্রতিযোগিতামূলক শিল্পে অটোমেশনের কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। পাশাপাশি, জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তা নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাও দরকার। তরুণদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পেশায় দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করে গড়ে তোলার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এ সমঝোতা স্মারক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্চ মোকবেলায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পেশায় দক্ষতা প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ বলেন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি, প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ এবং অধিক কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সমঝোতা স্মারক গুলোর মাধ্যমে এনএসডিএ ও দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো, যা ভবিষ্যতে দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার; প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) ঊর্ধ্বতনকর্মকর্তাগণ এবং ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের (আইএসসি) প্রতিনিধিগণউপস্থিতছিলেন।
বিভি/ এসআই
মন্তব্য করুন: