• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

তিন ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা

উদ্ধার হওয়া ৭৫ জন বাংলাদেশিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ১৩ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
উদ্ধার হওয়া ৭৫ জন বাংলাদেশিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর

ভারতের গুজরাটের বস্তি থেকে তুলে এনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও নৌবাহিনী কর্তৃক বঙ্গপোসাগর তীরবর্তী সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় একটি চরের মধ্যে ফেলে যাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশিকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া, জম্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক অপর তিনজনের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় কোস্টগার্ড বাদী হয়ে মামলা দায়েরের পর সোমবার (১২ মে) আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে রবিবার (১১ মে) রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ড তাদের ৭৮ জনকে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) বেলা ১১টার দিকে শ্যামনগর থানা চত্ত্বরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন ভারতের গুজরাট থেকে তুলে নিয়ে কিভাবে তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রেস ব্রিফিং করেন। প্রেসব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান।

এসময় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম, কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার, শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির মোল্লাসহ পুলিশ ও কোস্টগার্ডে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন। পরে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের উপস্থিতিতে শ্যামনগর থানা থেকে তাদেরকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রেসব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান জানান, গত ৯ মে শুক্রবার ভোররাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৫ জন বাংলাদেশি মুসলিম এবং ৩ জন ভারতীয় মুসলিমকে জোরপূর্বক পুশ ইন করা হয়। তাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন যাবৎ ভারতের গুজরাট রাজ্যে বসবাস করে আসছিল এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসায় জানা যায়, গত ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে ভারতীয় প্রশাসন তাদের বাসা থেকে আটক করে এবং গত ৯ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ভোররাতে গোপনে সুন্দরবনের মান্দারাড়ি চরে রেখে যায়।
পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তিরা মান্দারবাড়িয়া চর হতে মান্দারবাড়ি ফরেস্ট অফিসে এসে আশ্রয় নেয়। ফরেস্ট অফিস কর্তৃক কোস্ট গার্ডকে অবহিত করলে গত ১০ মে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন অতিদ্রুত পুশ ইন করা ৭৮ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করতঃ প্রয়োজনীয় খাবার ও ঔষধ সামগ্রী সরবরাহ করে।

পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়ে কোস্টগার্ডের এই কর্মকর্তা জানান, ভারতীয় পুলিশ তাদের বস্তিগুলোতে হানা দেয় এবং বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও তাদেরকে পরিবারের সদস্যদের সামনে অমানবিক নির্যাতন করার পাশাপশি পরিবারের অন্যন্যা সদস্যদেরও পাশবিক নির্যাতন করে। তারপর তাদের চোখ বেঁধে একটি সামরিক বিমানে এবং পরিবারের অন্যন্যা সদস্যদের অপর একটি সামরিক বিমান যোগে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করে।

পরবর্তীতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুন্দরবনের একটি জায়গায় রেখে যায় এবং জাহাজে অবস্থাকালীন সময়ে শারীরিক নির্যাতন, অমানবিক আচরণ, ধর্মীয় অবমাননাসূচক মন্তব্য করে। এসময় তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করেনি। এছাড়া এখনও পর্যন্ত তাদের স্ত্রী সন্তানদের সঠিক অবস্থান তারা জানতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১১ মে রাতে সাতক্ষীরা শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
প্রেসব্রিফিংয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে আব্দুর রহমান, মোঃ হাসান শাহ ও সাইফুল শেখ নামের তিনজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে, আমরা তদন্ত করে যদি দেখতে পাই তাদের বাবা মা যদি বাংলাদেশি এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণাদী সাপেক্ষে তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জন্মসূত্রে ভারতীয় তিনজন হলেন, খুলনার বটিয়াঘাটা থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামের খালিদ শেখের ছেলে আব্দুর রহমান (২০), নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মুন্না সাহা’র ছেলে মো. হাসান শাহ (২৪) ও একই গ্রামের সোহেল শেখের ছেলে সাইফুল শেখ (১৯)। জন্মসূত্রে এরা তিন জনই ভারতের গুজরাটের নেহেরীনগর ও জোপারপচ্চি এলাকার বাসিন্দা। তবে তাদের কাছে ভারতের কোন বৈধ কাগজ পত্র নেই।

পুশইন করা ৭৮ জন নাগরিকদের মধ্যে ৬৭ জনের বাড়ি নড়াইল জেলার বিভিন্ন গ্রামে। এছাড়া খুলনা জেলার ৬ জন, যশোরের ২ জন এবং সাতক্ষীরা, ঢাকা ও বরিশাল জেলার ১ জন করে লোক রয়েছে। এদের মধ্যে গুজরাটের আহমেদাবাদের বিভিন্ন বস্তিতে থাকতেন ৭০ জন এবং সুরাটে থাকতেন ৮ জন।

এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন জানান, বিএসএফ ও ভারতীয় কোস্টগার্ড গত ৯ মে ৭৮ বাংলাভাষী নাগরিককে চোখ বেঁধে বঙ্গপোসাগরের তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকা একটি চরে ছেড়ে দিয়ে যায়। সেখান থেকে উদ্ধারের পর ১১ মে রাতে কোস্টগার্ডের কাছ থেকে আমরা শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ তাদেরকে রিসিভ করি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১২ মে সোমবার সকালে তাদেরকে আত্মীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের কথা থাকলেও কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়ায় তাদেরকে সোমবার হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। রাতে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশপাশি থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

তিনি আরো বলেন, ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ায় মঙ্গলবার তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিন জন ভারতীয় নাগরিক দাবি করলেও তাদের কাছে বৈধ কোন কাগজপত্র না থাকায় উক্ত তিনজনের বিরুদ্ধ থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। তাদের সঠিক কাগজপত্র আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। তবে ওই তিনজনই পৈত্রিক সূত্রে বাংলাদেশি বলে তিনি আরো জানান।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2