ব্যক্তিগত কর্মকর্তার স্ত্রীকে নগদে নিয়োগ: যা বললেন ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

“আমার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট এবং স্বজন প্রীতির অভিযোগ এসেছে। কাজটা ঠিক হয়নি- এটা আমি বিনাবাক্যে স্বীকার করছি। তাকে প্রচন্ডরকম বকাবকিও করেছি। উনার বউকে চাকরি দেয়ার বিষয়টি আমি তদন্তের ব্যবস্থা করেছি, নির্দেশনা দিয়েছি।” নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ তাইয়েব আহমেদ।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, আমি বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং এদেশের মানুষের একটি পয়সাও চুরি করবো না- এই আস্থাটা আমার উপর রাখবেন আশা করি। আমি প্রচন্ডরকম আর্থিক সততা নিয়ে বড় হয়েছি।
আমার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট এবং স্বজন প্রীতির অভিযোগ এসেছে। কাজটা ঠিক হয়নি- এটা আমি বিনাবাক্যে স্বীকার করছি। তাকে প্রচন্ডরকম বকাবকিও করেছি। উনার বউকে চাকরি দেয়ার বিষয়টি আমি তদন্তের ব্যবস্থা করেছি, নির্দেশনা দিয়েছি। নগদের অ্যাক্টিং সিইও এই বিষয়ে প্রেস রিলিযে বলবেন। তবে বলে রাখি, এখানে অন্যায়ভাবে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং আমাকে টেনে আনা হয়েছে।
নগদে সাবেক সরকারের লোকেরা ভুয়া ই-কেওয়াসি করে, ই-কেওয়াসি ছাড়া অ্যাকাউন্ট করে, ভুয়া এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে, ভুয়া ক্যাশ ব্যাক করে, অবৈধ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট লেনদেন করে অর্থ হাতিয়েছে। মানবজমিন সুকৌশলে এই দায় আমার আর নাহিদ ইসলামের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। আমি এর নিন্দা জানাই।
ট্রান্সকাম সেটেলমেন্ট একাউন্টে জমা অর্থের বিপরীতে অবৈধভাবে ইলেক্ট্রনিক মানি তৈরি করেছে,পরিমাণটা ডাক বিভাগের রিপোর্ট মতে ৬৪৫ কোটি টাকা। আমি নিজে তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থাকে এসব বিস্তারিত বুঝিয়েছি, প্রেজেন্টেশন করেছি। যাদের আগ্রহ আছে, এসব পাবলিক করে দিব। এটা ভয়াবহ অনৈতিক আচরণ হয়েছে আমাদের উপর, আওয়ামী লুটপাট আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
অথচ সন্দেভাজন নগদ কর্মকর্তাকে আমি নিজে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুরোধ করেছি। তারা ঘটনা উল্টিয়ে দিয়ে বলেছে আমি ছাড়িয়েছি। এই মিথ্যা সাংবাদিকতার জবাব কে দিবে!
যে দুই মাসের কথা বলা হয়েছে, সেসময় কোম্পানির মোট খরচ আনুমানিক ৪৩ কোটি, কিন্তু বলা হচ্ছে দুর্নীতি করে অর্থ হাতানো হয়েছে ১৫০ কোটি। এই মিথ্যা, প্রপাগান্ডা সাংবাদিকতা আমি মানতে পারছি না, বিশেষভাবে যে পত্রিকায় আমি এক ডজনের বেশি কলাম লিখেছি।
২৭মে সন্ধ্যায় নগদের দায়িত্ব বাংলাদেশ ডাক বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়ার পরে ২৮ মে মাত্র ১ কর্ম দিবস কাজ করেছেন নতুন অ্যাক্টিং সিইও, এবং সেদিন তার ব্যবস্থা গেছে আসামিদের ই-মেইল ব্লক করতে। আসামীরা ই-মেইলে কর্মকর্তাদের কনফিউজ করছিল। হুমকিও দিয়েছে। নতুন অ্যাক্টিং সিইও সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন কারো চাকরি যাবে না, ঠিক সময়ে বেতন বোনাস দেয়া হবে। এর আগে ২ সপ্তাহ কাজ করেছে শাফায়াত গং। ৫ আগস্ট থেকে ১১ মে পর্যন্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমরা সংবাদ কর্মীদের কাছে জেনেছি যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পক্ষ এজেন্সিকে দিয়ে ১৫০ কোটি দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এর আগে তারা কিছু টিভি স্টেশনকেও অ্যাপ্রোচ করেছিল। দেশের শীর্ষ ফ্যাক্ট চেকার এবং ডিজিটাল ভেরিফিকেশন এক্সপার্ট সেটা এক্সপোজও করেছেন।
নগদে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক বসানোর পরে বাংলাদেশ ব্যাংক কেপিএমজি'কে দিয়ে ফরেন্সিক রিপোর্ট করাচ্ছে (অভিযোগ আছে কেপিএমজি প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট্যান্ট)। আমি পলিসি অ্যাডভাইজার থাকাকালে এসবে আপত্তি জানিয়ে বলেছি সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে সিসিএ কিংবা সিআইডির ডিজিটাল ফরেন্সিক ল্যাব ব্যবহার করতে। ইত্যাদি বিষয়ে আমি গভর্নরকে বিস্তারিত জানিয়ে বলেছি, একটা রেগুলেটর এর অপারেশন এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন করলে প্রতিযোগীর সুবিধা হয়, সে মনোপলি হয়ে যায়। তাই নগদকে ডাক বিভাগে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে চালালে সেটা বরং টেকসই হয়। (আধা সরকারি পত্র উন্মুক্ত করার ইচ্ছা ছিল না, নিজের ক্রেডিবিলিটি নষ্ট হচ্ছে ভাবে জবাবদিহির জায়গা থেকে শেয়ার করছি)।
পাশাপাশি বিএফআইইউ'কে অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে বেশ কিছু টাস্ক দিয়েছি। ভুয়া ই-কেওয়াসি করে, ই-কেওয়াসি ছাড়া অ্যাকাউন্ট করে, ভুয়া এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে, ভুয়া ক্যাশ ব্যাক করে, অবৈধ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট লেনদেন বন্ধে, সীমান্তে হুন্ডী বন্দে এজেন্টের জিও-ফেঞ্চিং করার নির্দেশনা দিয়েছি। উনারা আমাকে সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছেন। আমি কারো ক্ষতি করিনি, দেশের স্বার্থে এসব খাতে শৃঙ্খলা আনতে দিন রাত কাজ করছি।
সিম্পলি বলি, ডাক বিভাগ থেকে আমরা দুই পক্ষের আইনি লড়াই থেকে নগদকে বাঁচাতে কাজ করছি। শাফায়াত গং এখানে হেভিওয়েট ব্যারিস্টার নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। এই দায়ও আমাদের উপর চাপানর চেষ্টা হয়েছে। একটা অস্থিতিশীল সময়ে ডাকের লাইসেন্সে, রেগুলেটরের গাইডলাইনে, টপ এক্সপার্টদের ম্যানেজ সার্ভিসে আনা গেলে নগদ ভাল চলবে- এটাই ডিও লেটারে লিখেছি। নগদ দেশের ৯ কোটি নাগরিকের সাথে যুক্ত, এইটা মরে গেলে দেশের মানুষের ফাইনান্সিয়াল ক্ষতি হবে, প্রতিযোগীরা মাফিয়া মনোপলি হবে, দাম বাড়াবে।
আমি মানবজমিনের কলাম লেখকদের একজন, লিখিত কলামগুলোর জন্য এখনো পেমেন্ট চাইনি। আমার যোগাযোগের নাম্বার তাদের কাছে আছে। মানবজমিন চাইলে নাহিদ ইসলাম আর আমার কাছে বক্তব্য চাইতে পারতো। মানবজমিন আমাকে গতকাল যে বিভীষিকাময় দিন উপহার দিয়েছে এমন দিন আমার জীবনে কখনও আসেনি। এ ধরনের সাংবাদিকতা কতটা নৈতিক সেটার বিবেচনার ভার নাগরিকদের।
বিভি/ এসআই
মন্তব্য করুন: