এনবিআরের সব চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন সব শ্রেণির চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে এর গেজেট প্রকাশ হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে রবিবার (২৯ জুন) বিকালে সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘‘অতি জরুরি আমদানি-রফতানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে সরকার এনবিআরের আওতাধীন কাস্টমস হাউজ, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব স্তরের চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।’’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দেশের বাজেট বাস্তবায়নে উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রধান অন্তরায় হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম, যার পেছনে রয়েছে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এই বাস্তবতায় সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে—যা সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে।’
দুই মাস ধরে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মবিরতি ও শাটডাউনের মতো কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। এর ফলে দেশের আমদানি-রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আন্দোলনের নামে চলমান এই কর্মকাণ্ড পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। এটি জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ থেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা প্রত্যাখ্যান করে তারা অনমনীয় অবস্থানে রয়েছে।’
সরকার এও বলেছে, ‘আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবিলম্বে কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং জাতীয় স্বার্থ-পরিপন্থি ও আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন। অন্যথায়, জনগণের স্বার্থ ও দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।’
অত্যাবশ্যক পরিষেবা কী?
চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি কাজ যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন পরিষেবাকে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। তাতে ওই পরিষেবার ক্ষেত্রে কর্মবিরতি বা আন্দোলন করা যায় না। করলে জেল-জরিমানার বিধান আছে।
অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন ২০২৩ নামের এ আইন অনুযায়ী, বর্তমানে ১৯ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা রয়েছে। যেমন: ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ই-কমার্স ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল সেবা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ, সরবরাহ ও বিক্রয় এবং এ-সংক্রান্ত স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ কাজ, স্থল, রেল, জল বা আকাশপথে যাত্রী বা পণ্য পরিবহন, স্থলবন্দর, নদীবন্দর, সমুদ্রবন্দর বা বিমানবন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস, স্থানান্তরসহ সংশ্লিষ্ট বন্দর বা বন্দর সম্পর্কিত পরিষেবা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠান এবং ডিসপেনসারি সম্পর্কিত কোনো পরিষেবা, ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়সহ এ সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা কারখানার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো পরিষেবা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত পরিষেবা এবং কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরি।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: