পলাতকরা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে, সব প্রতিহত করতে হবে: মুশফিকুল ফজল আনসারী

মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা ছিল ইতালির একনায়ক মুসোলিনির কার্বন কপি। যেমন মুসোলিনির চারপাশে স্তাবক শ্রেণি গড়ে উঠেছিল, তেমনি শেখ হাসিনাকেও ঘিরে তৈরি হয়েছিল এক চাটুকার পরিবেশ, যেখানে কোনো ভিন্নমত সহ্য করা হতো না।
ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মেক্সিকোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা'-শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, 'মুসোলিনির ব্ল্যাক শার্ট বাহিনীর আদলে ছাত্রলীগকে হেলমেট বাহিনীতে পরিণত করে বিরোধী মত দমনে ব্যবহার করা হয়েছিল। শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, রাজনীতিক, এমনকি সাধারণ মানুষ, কেউ নিরাপদ ছিল না। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা হয়েছিল।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'অনেকে মনে করেছিল বাংলাদেশ আর কখনো মুক্ত হবে না। কিন্তু সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে দেশের ছাত্রসমাজ, যুবক, মেহনতি মানুষ এবং দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলসমূহ। তাদের সম্মিলিত প্রতিরোধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছে। এই বিজয় কারো একক নয়, এটি সার্বজনীন, যেখানে মা, বাবা, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক সকলে যুক্ত ছিলেন।'
তিনি জানান, 'এই আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। যারা এই দমন-পীড়ন চালিয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে।'
রাষ্ট্রদূত মুশফিক আরও বলেন, 'নতুন সরকার হাসিনার হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র কাঠামো হাতে পেয়েছে যেখানে প্রশাসন দলীয়করণে বিপর্যস্ত, বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার শূন্য এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অনাস্থার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখন প্রয়োজন সর্বাত্মক সংস্কার বিশেষ করে আমলাতন্ত্রে, যারা গত ১৫ বছর ধরে একনায়কতন্ত্রের প্রশস্তি লিখে গেছে।'
তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, 'যারা গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিল, তারা এখনও থেমে নেই। আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারলেই তাদের পথ সুগম হবে। তাই এখনই সময় ঐক্য ধরে রাখার, মতের ভিন্নতাকে বিদ্বেষে রূপান্তর না করার।'
এসময় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের মানবপাচার রোধে জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বৈধ পথে নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসনের ওপর জোর দেন এবং মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত
করেন।
তিনি বাংলাদেশ-মেক্সিকো কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিতব্য অনুষ্ঠান ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে উপস্থিত সকলকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা শেষে 'জুলাই অভ্যুত্থান' বিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র ও চিত্র প্রদর্শনী হয়। পরিবেশিত হয় দেশাত্মবোধক সংগীত। মেক্সিকোতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে অতিথিদের
আপ্যায়ন করা হয়।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: