ডাক্তারদের দালাল বলায় ক্ষুব্ধ জামায়াতপন্থী এনডিএফ

‘পৃথিবীর কোন দেশে ডাক্তাররা কি বেসরকারি হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য নির্দিষ্ট সময় দিয়ে থাকেন? পরীক্ষা-নিরীক্ষা একই ডায়াগনস্টিক সেক্টরে করতে রোগীদের বাধ্য করে? ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল?’ চিকিৎসকদের নিয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। দ্রুত আসিফ নজরুলকে এই মন্তব্য প্রত্যাহার করে শের জনগনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

রবিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এনডিএফ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম এবং জেনারেল সেক্রেটারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন এই আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে এনডিএফ নেতারা বলেন, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চিকিৎসকদের দেওয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় এবং ঔষধ ব্যবহার প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘অবৈজ্ঞানিক’, ‘অনভিপ্রেত’ এবং ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’। তার এমন মন্তব্য চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও পেশাদারিত্বকে অস্বীকার করার শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নেতৃবৃন্দ এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে তার অযাচিত মন্তব্য প্রত্যাহার এবং দেশের জণগনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকগন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। বিশেষ করে, ২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র জনতাকে স্বেচ্ছাসেবামূলকভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানে চিকিৎসকরা জনতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। একই সাথে কোভিড-১৯ মহামারি সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ডেঙ্গুসহ নানা স্বাস্থ্য সংকটে বহু চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন; কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় অত্যন্ত সীমিত সম্পদ এবং প্রতিকুল পরিবেশে বাংলাদেশের চিকিৎসকগন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জনগনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে চলছেন। ২৪ এর আন্দোলনে ট্রান্সফার, শাস্তি, চাকরি হারানো ঝুঁকি, পুলিশি হয়রানি ও নানাবিধ চাপ উপেক্ষা করে মানবিকতার উদাহরণ স্থাপন করা চিকিৎসকদের। এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গী অত্যন্ত প্রশ্নবোধক। তার এই মন্তব্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ এবং ফ্যাসীবাদের দোসরদের প্রতি সহানুভুতি প্রকাশ করে।

তারা আরও জানান, বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনের চেয়ে কম বরাদ্দ, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী সংকট, পর্যাপ্ত বেডের স্বল্পতা, বেতন-ভাতা কম ইত্যাদি সত্ত্বেও বাংলাদেশের চিকিৎসকরা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছেন। তবুও চিকিৎসকরা তাদের সেবা ও মানবিকতার পথ থেকে কখনো পিছপা হননি।

কাজেই এনডিএফ নেতৃবৃন্দ মনে করেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যেখানে তার স্বাস্থ্য খাতের আলেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পরিবর্তে চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ চিকিৎসকদের সমালোচনায় মুখর হওয়া ভালো ইঙ্গিত বহন করে না। বরং যেখানে বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ দেশে অতি সম্প্রতি ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারী করেছেন, দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা রেখেছেন, দেশের জণগনের কাছে বাংলাদেশের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সেবার মানকে উচ্চে তুলে ধরেছেন, সেখানে তার বক্তব্য জনগনকে বিভ্রান্ত করছে, বাংলাদেশের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে জণগনকে ভুল বার্তা দিচ্ছে, অনাস্থা সৃস্টি করছে। এতে রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পার্শবর্তী দেশসমূহে চলে যেতে পারেন।

আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই- চিকিৎসকরা দিনরাত মানুষের জীবন বাঁচাতে লড়াই করছেন। সীমিত অবকাঠামো, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাহীন পরিবেশ এবং ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও চিকিৎসকরা নিরলসভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করা মানে কেবল চিকিৎসকদের নয়, বরং সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও দেশের জনগণের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।

আমাদের দাবি: উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে অবিলম্বে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং দেশবাসীর কাছে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। চিকিৎসক সমাজের সম্মান, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিবৃতিতে এনডিএফ নেতারা বলেন, আমরা চিকিৎসক সমাজের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় সব সময় সর্বাত্মক আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত। গঠনমূলক পর্যালোচনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সৌন্দর্য, তবে তা বস্তুনিষ্ঠ এবং সম্মানজনক হতে হবে। এনডিএফ চিকিৎসক এবং চিকিৎসাসেবার মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং রোগী তথা দেশের জণগনের স্বাস্থ্যের অধিকারের পক্ষে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করে যাবে।