ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা ওসমান হাদির উত্থান যেভাবে
ছবি: ওসমান হাদি
শরীফ ওসমান বিন হাদি। বাংলাদেশের আপামর জনসাধরণের কাছে যার পরিচিতি মাত্র ১৫ মাসের। কিন্তু আগুন ঝরা বক্তব্য আর দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে ক্ষণিকের এই সময়েই তিনি জয় করেছেন কোটি মানুষের মন। মাত্র ৩২ বছর বয়সী এই যুবক হয়ে ওঠেছিলেন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যাবাদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক।
ওসমান হাদির আত্মপ্রকাশ হয়েছিল বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তনের মানসে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা জিইয়ে রাখতে তিনি গড়েছেন ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠন। ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও কালচারাল ফ্যাসিজমের মোকাবিলায় গড়েছেন ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারও। বাংলাদেশে স্বৈরাচারীপ্রথার বিলোপ, জুলাই গণহত্যার বিচার ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারেই জারি ছিলো তার কণ্ঠ। হাদি সমালোচনা করতে ছাড়েননি বিএনপি, জামায়াত কিংবা প্রভাবশালী কাউকেও।
প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে হঠাৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গীক হয়ে ওঠা এই তরুণের জন্ম ঝালকাঠি জেলার নলছিটিতে। মাদ্রাসা শিক্ষক বাবার হাত ধরে তার শিক্ষা জীবনের শুরু মাদ্রাসায়ই। ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। বিশ্ববিদ্যায় জীবন থেকেই হাদি শিক্ষকতা করেছেন সাইফুরস কোচিং সেন্টারে। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেছেন তিনি।
গেলো বছরের জালাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বসবাসের সুবাধে সেই অঞ্চলেই জড়িয়ে যান আন্দোলনে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জুলাই গণহত্যার দায়ে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ খুনিদের বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্ছার হন হাদি। সেই থেকেই রাজনীতিতে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতার ঘোষণা দিয়েছিলেন ওসমান হাদি। ভোটারদের কাছ থেকে তোলা টাকায় জনতার এমপি নির্বাচনের ধারনা ও নিয়মিত সেই টাকার স্বচ্ছ হিসেব প্রকাশ করেও সততার অনন্য নজির হয়েছেন হাদি।
দেশের চলমান প্রথার বিপরীতে এসব ব্যাতিক্রম কর্মকাণ্ড হাদিকে যতোটা জনপ্রিয় করে তুলেছিলো ততোটাই ক্ষোভ বাড়িয়েছে শত্রুদের। বিদেশের বিভিন্ন নম্বর থেকে আসতে থাকে হত্যার হুমকি। কিন্তু বিরামহীন হুমকি ন্যুনতম দমাতে পারেনি ওসমান হাদিকে। বরং তিনি দিয়েছেন গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়ার ঘোষণা। দিয়েছেন, শত্রুর সঙ্গেও ইনসাফের বার্তা।
কিন্তু তিনি ইনসাফ চাইলেও ইনসাফ চায়নি শত্রুরা। যার পরিণাম আততায়ীর বুলেট ঝাজরা করেছে ওসমান হাদির মাথা। তারপর এক জীবন রক্ষার লড়াই। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল, তারপর এভারকেয়ার হয়ে সিঙ্গাপুর। কিন্তু এক সাপ্তাহের সমস্ত চেষ্টাকে ব্যার্থ করে ওসমান হাদি চলে গেছেন অনন্ত পথের যাত্রায়, বিধাতার সান্নিধ্যে।
হাজী শরীয়তুল্লাহ, শহীদ তিতুমীর, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বা শেরে বাংলা একে ফজলুল হকদের মতো সংস্কারের বার্তা নিয়ে বাংলাদেশের আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনের আগ্রপথিকের তালিকায় লেখালেন শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদি। ইতিহাসের পাতায় ক্ষণজন্মা এই তরুণ কালের সারথি হয়ে থাকবেন সেই প্রত্যাশা ওসমান হাদির ভক্তজনদের।
বিভি/এআই




মন্তব্য করুন: