• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

শহীদ মিনারের কথা

প্রকাশিত: ১২:৫২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৩:৪২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ফন্ট সাইজ
শহীদ মিনারের কথা

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। ভাষা শহীদ এবং ভাষা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানাতে আজ গোটা জাতি সমবেত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এই শহীদ মিনার ৬৯ বছর আগে ভাষার জন্য আত্মবলিদানকারী বীর বাঙালির এক অনুপম নিদর্শন। তবে ভাষা নিয়ে সংগ্রাম যেমন একদিনে শেষ হয়নি, তেমনি আজকে যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনেও রয়েছে ইতিহাস।

১৯৫২ সালের এই দিনে ‘বাংলা’কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসেন। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তুললে সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। শহীদ হন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক।

ভাষা শহীদদের সেই স্মৃতি ধরে রাখতে খুব দ্রুতই গড়ে তোলা হয় প্রথম শহীদ মিনার। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাতের মধ্যেই শেষ করেন। সেই খবর পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। দৈনিক আজাদে ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর। শিরোনাম ছিলো- ‘শহীদ বীরের স্মৃতিতে’।

ঢামেক ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) ১২ নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে মিনারটি তৈরি হয় কোণাকুণিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেঁষে। উদ্দেশ্য ছিলো, বাইরের রাস্তা থেকে যেন সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোনো শেড থেক বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁডালেই চোখে পড়ে।

প্রথম সেই শহীদ মিনার ছিলো ১০ ফুট উঁচু এবং ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জি এস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম। সংগে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাঁদের সহযোগিতা করেন দু’জন রাজমিস্ত্রী।

ঢাকা মেডিকেলের ভবন সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি ও পুরান ঢাকার পিয়ার সর্দারের গুদাম থেকে আনা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয় সেই স্মৃতির মিনার। ভোর হওয়ার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় সেটি। ওই দিনই, অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। তবে স্থায়িত্ব পায়নি ভাষা শহীদদের স্মরণে তৈরি প্রথম মিনারটি। আজাদ সম্পাদকের উদ্বোধনের দিনই পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করেন শিক্ষার্থীরা। কিছুদিনের মধ্যে সেটিও সরকারের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়।

[caption id="attachment_73547" align="aligncenter" width="1400"]ছবি: ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা হলের পিছনে নির্মিত শহীদ মিনার[/caption]

অবশেষে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার পর শুরু হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ছিলো সেই শহীদ মিনার নির্মাণের তত্ত্বাবধানে। ১৯৫৬ সালে আবু হোসেন যখন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে, ওই সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান স্থান নির্বাচন করা হয়। ওই সময়ের পূর্ত সচিব (মন্ত্রী) আবদুস সালাম খান মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য চূড়ান্তভাবে স্থান নির্বাচন করেন।

১৯৫৬ সালের ২১ ফ্রেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকারের এক মন্ত্রীর হাতে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা জানায় সরকার। তবে উপস্থিত জনতার প্রবল আপত্তির মুখে তিনি পিছু হটতে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ রিকশাচালক আওয়ালের ছয় বছরের মেয়ে বসিরনকে দিয়ে এই স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ওই সময়কার পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করে। এরপরই মূলতঃ শহীদ মিনারের নতুন স্থাপনা নির্মাণ সহজ হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবে স্মরণীয়। তাঁর রূপকল্প অনুযায়ী ১৯৫৭ সালের নবেম্বরে এই নির্মাণযজ্ঞে যোগ দেন আরেক বিখ্যাত ভাস্কর নভেরা আহমেদ। তাঁদের দু’জনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয়। নকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখভাগের বিস্তৃত এলাকা এর অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালের শুরুর দিকে। ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবুল বরকতের মাতা হাসিনা বেগমের হাতে উদ্বোধন করা হয় নতুন শহীদ মিনার। সেই থেকে এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারই বাঙালির আবেগ-অনুভূতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে চিরজাগরুক হয়ে আছে।

বিভি/ইই/এমএইচকে

 

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2