ইন্টারনেটে ভাষা-বিকৃতি প্রতিরোধে লড়ছে ‘মুরাদ টাকলা’

মুরাদ টাকলা গ্রুপ থেকে সংগৃহীত
বাংলা ভাষা। ১৯৫২ সালে যে ভাষার জন্য জীবন দিয়ে বিশ্ব দরবারে ভিন্ন পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিও। বাঙালি পেয়েছে একটি মর্যাদাপূর্ণ ভাষা। বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর দিক থেকে এই ভাষা বিশ্বের পঞ্চম। ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং শ্রুতি মাধুর্যের বিবেচনা বাংলা বিশ্ববাসীর কাছে সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আধুনিক যুগে ঘোর সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে বাঙালির গর্বের ভাষা ‘বাংলা’। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম মাত্রায় পৌঁছেছে এই ভাষার অপব্যবহার। শুধু যে সামাজিক মাধ্যমে তা নয়, রাস্তার মোড়ের বিজ্ঞাপনী প্রচার কিংবা পরীক্ষার খাতা থেকে প্রেমপত্র— কোথায় না ঘটছে ভাষা-বিকৃতি।
যে ভাষার জন্য সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার জীবন দিয়েছে সেই দেশে বসেই ভুল বানানে বাংলা ভাষাকে কবরস্থ করছে অনেকে। এই যখন পরিস্থিতি তখন বাংলা ভাষাকে রক্ষায় লড়াই করছে ‘মুরাদ টাকলা’।
আরও পড়ুন:
মুরাদ টাকলা নামটি শুনে অবাক হচ্ছেন?
ভাবছেন, মুরাদ নামের এক লোক, যার মাথায় ইয়া বড় এক টাক তাঁর কথা বলছি। ‘না’ এই মুরাদ টাকলা কোনো টাক মাথার ব্যক্তি নয়। মুরাদ টাকলা হলো ফেসবুক বা টুইটারের একাধিক অ্যাকাউন্ট। যাদের আছে রাশি রাশি ফলোয়ার। নেটমাধ্যমে মাঝে মাঝেই ঢেউ ওঠে তাকে নিয়ে। ‘মুরাদ টাকলা’এই নামেই পরিচিতি তার।
গত কয়েক বছরে অনলাইনে যেসব শব্দ খুব বেশি ব্যবহৃত হয়েছে, মুরাদ টাকলা তার মধ্যে অন্যতম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট আছে, এমন সব বাংলাদেশি কিংবা বাংলা ভাষাভাষী অন্তত একবার ‘মুরাদ টাকলা’ শব্দ দুটি অবশ্যই শুনেছেন।
আনুমানিক ২০১২ সালে ফেসবুকের কোনো একটি পোস্টের কমেন্ট বক্সে তুমুল তর্কযুদ্ধের এক পর্যায়ে জয়ন্ত কুমার (Joyonto Kumer) নামের এক ব্যক্তি কমেন্ট করেন, ‘Murad takla jukti dia kata bal, falti pic dicos kan! Lakapora koira kata bal.’ ইংরেজি হরফে ভুলভাল বানানে লেখা এই বাক্যে তিনি মূলত বলতে চেয়েছিলেন, ‘মুরোদ থাকলে যুক্তি দিয়ে কথা বল, ফালতু পিক দিছস কেন? লেখাপড়া কইরা কথা বল।’ স্বাভাবিকভাবেই এই বাক্য নিয়ে হাসাহাসি চলতে থাকে, ছড়িয়ে পড়ে সেই কমেন্টের স্ক্রিনশট। এই বাক্যের ‘Murad takla’ বা ‘মুরাদ টাকলা’ শব্দযুগল ইংরেজি অক্ষরে বিকৃত বাংলা লেখার এই ‘রীতি’র সমার্থক হয়ে দাঁড়ায়।
সেই থেকেই নেটমাধ্যমে ইংরেজি হরফে বাংলা লিখতে গিয়ে যাঁরা ভুলভাবে বিকৃত বাংলা বা ‘বাংলিশ’ লেখেন, তাঁদেরকেই ডাকা হয় ‘মুরাদ টাকলা’ নামে। এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল বানানের পোস্ট ও কমেন্ট সংগ্রহে নেমে পড়েন বাংলাদেশের বেশ কিছু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। তাদের উৎসাহে তৈরি হয় ‘মুরাদ টাকলা’-র পেজ। এক থেকে বহু হয় মুরাদ টাকলা। বাড়তে থাকে পেজ ও কমিউনিটি-র সংখ্যা। ‘মুরাদ টাকলা’-র ডিপি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে বিচিত্র সব ছবি। তার মধ্যে নারকেলের ছবির ব্যবহার নজর কাড়ে সবার।
‘মুরাদ টাকলা’ গ্রুপগুলি থেকে করা উদ্ভট বাংলা অথবা ‘বাংলিশ’-এ লেখা কমেন্টগুলির সঠিক পাঠোদ্ধার নিয়ে শুরু হয় মজার খেলা। হাস্যরসের প্রতিবাদের মাধ্যমে তারা জানান দেয় ভুল বানান সংশোধনের জন্য। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলার ভুল ব্যবহার কমাতে অবদান রাখছে বহুদিন ধরে। সংশোধন করেছে অসংখ্য নেট ব্যবহারীকে।
বিভি/কেএস
মন্তব্য করুন: