বেহাল বাংলা, বেতাল ভাষা!

সংগৃহিত
আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিনভর নানান আয়োজনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে সবাই। কিন্তু সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারেরা যে বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিতে দিধা করেনি সেই বাংলা আজ অর্ধমৃত।
বর্তমানে বাংলা ভাষা যে ঘোর সঙ্কটের মধ্যে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাস্তার মোড়ের বিজ্ঞাপনী প্রচার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পরীক্ষার খাতা থেকে প্রেমপত্র— কোথায় না ঘটছে ভাষা-বিকৃতি। যে ভাষার জন্য সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার জীবন দিয়েছে সেই দেশে বসেই ভুল বানানে বাংলা ভাষাকে কবরস্থ করছে অনেকে। মাতৃভাষা দিবসে চলুন দেখে নেই ভাষার চরম বিকৃতির কয়েকটি নমুনা। সংশোধন করি নিজেদের (ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)।
আরও পড়ুন:
উপরের প্রথম ছবিটিতে পোস্টদাতা মূলত বুঝাতে চেয়েছিলেন ‘যেমন পানি ছাড়া মাছ দুর্বল, তেমনই আটা ময়দা ছাড়া মেয়েরা দুর্বল’। কিন্তু এমনভাবে লিখেছেন যে, এর নিহিতার্থ বোঝা অবশ্য শিবের বাবারও অসাধ্য!
এই পোস্টের সরলার্থ: ‘খারাপ তখনই লাগে, যখন কাছের মানুষ অবহেলা করে ফেসবুকে ব্লক মারে’।
‘বাগ’ মানে কি ছারপোকা? নাকি অন্তর্জালে ঘুরে বেড়ানো ‘বাগ’?
আচ্ছা, ‘বাগ’ মানে ‘বাঘ’ নয়তো? ছবি দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
(পরিবেশ সচেতন পোস্ট। ‘বাঘ’ ধরা সর্বত্রই নিষিদ্ধ বাস্তুতান্ত্রিক কারণে।)
এমনিতেই জীবনে সমস্যার অন্ত নেই! তার উপরে দাম দিয়ে কেনে কে?
আসলে ‘সামোসা’-র কথা বলা হয়েছে।
এখানে আলতা-সোনো বলতে কিন্তু প্রসাধনীর কথা বলা হয়নি!
‘কিলিনিক’ অর্থাৎ ‘ক্লিনিক’। আর ‘আলতা সোনো’ খুবই সাধারণ বিষয়। ‘আলট্রাসোনোগ্রাফি’।
সরলার্থ: ‘রিলেশনের প্রথমে অনেকে বলে, তুমি আমার অক্সিজেন। কারণ, অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না... তা হলে যখন রিলেশন পুরনো হয়ে যায়, তখন কি কার্বন ডাই অক্সাইড হয়ে যায়? কারণ, কার্বন ডাই অক্সাইড মানুষ ত্যাগ করে... আর রিলেশন পুরনো হলেও অনেকে ব্রেক আপ করে দেয়...’।
ভয় পাবেন না। এখানে ‘ফুচকা অ্যান্ড কফি হাউস’ লেখার বাসনা ছিল, অন্য কিছু নয়।
‘পাচফুট’ অর্থে পঁচ ফুট নয়, ‘পাসপোর্ট’। আর ‘ছাইচ’ হল ‘সাইজ। ‘ইছকেন’ যে ‘স্ক্যান’, তা রসিকজন ভালোই বুঝবেন।
সরলার্থ: দূরে চলে গেলে সবাই ভুলে যায়। কাছে থাকলে সবাই মনে রাখে, এটাই জীবন।
‘ড্যাগারে শোন’ দেখে ঘাবড়াবেন না। ‘ড্যাগার’ অর্থাৎ ছুরিতে শান দেওয়ার কথা বলা হয়নি। দোকানের ‘ডেকরেশন’ বোঝাতে চাওয়া হয়েছে মাত্র।
এখানে বলার চেষ্টা করা হয়েছিল— ‘তুই বদমাশ/ তোর কারণে আপুর ঘর ভেঙেছে/ তুই পপিকে আঘাত করেছিস/ তুই কিসের নায়ক/ তুই নায়কের (মতো) কথা পারিস না/ তুই গুন্ডামিতে যা/ টোকাইগিরিতে যা/ বদমাশিতে যা’।
উদ্ভট বাংলা যে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোরাফেরা করে, তা নয়। প্রাত্যহিক জীবনের আনাচে কানাচে ভাষা-বিপর্যয়। এমনকি শৌচাগারও তার ব্যতিক্রম নয়।
বিভি/কেএস
মন্তব্য করুন: