ঢাকায় বিলাসবহুল ৩৪ গাড়ি উদ্ধার, বিপাকে শুল্ক অধিদপ্তর

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পৃথক সময়ে ৩৪টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ ও উদ্ধার করে শুল্ক, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ৩৪টি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রয়েছে মিতসুবিশি, মার্সিডিজ বেঞ্চ, বিএমডব্লিউ, ল্যান্ডরোভার, ল্যান্ডক্রুজার, সিআরভি, লেক্সস, ফোর্ড, জাগুয়ার, অডি, রোলস রয়েল ও দাইয়ু। এসব গাড়ির বাজারমূল্য ১ কোটি থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। গাড়িগুলো উদ্ধার করে এখন মারাত্মক বিপাকে পড়েছে শুল্ক অধিদপ্তর।
সূত্র জানায়, গাড়িগুলো কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে জব্দ করা হয়েছে। কর ফাঁকি দিয়ে দেশে আমদানি করে বেশি দামে অন্যজনের কাছে বিক্রি করেছিল। অবৈধ গাড়ির অভিযান জোরেশোরে চলার সময় কর ফাঁকি দেয়া গাড়ির মালিক কেউ কেউ গাড়ি ঢাকার রাস্তায় উন্মুক্ত সড়কে ফেলে পালিয়েও গিয়েছিল। কেউবা বাসার গ্যারেজে লুকিয়ে রেখেছিল। কেউ নিজের অ্যাপার্টমেন্টের গ্যারেজে না রেখে অন্যের গ্যারেজে ভাড়া করে গাড়িগুলো রেখেছিল। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই গাড়িগুলো উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
যারা উন্মুক্ত সড়কে গাড়িগুলো রেখে পালিয়ে গিয়েছিল তারা কেউ কেউ পুলিশের উদ্দেশ্যে চিরকুট লিখেছিল। তারা চিরকুটে লিখেছিল যে, ‘আমি কর ফাঁকি দিয়ে গাড়িটি কিনেছি। এই গাড়ি আমি চালাবো না। আমি মাফ চাই। কর ফাঁকি দেয়ার জন্য আমি মাফ চাই। আমি গাড়িটি জনগণের উদ্দেশ্যে দান করলাম। এমন একটি চিরকুট হাতিরঝিলে ফেলে যাওয়া গাড়ির মধ্যে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশ গাড়িটি জব্দ করে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।
সূত্র জানায়, বিলাসবহুল গাড়িগুলো নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছে শুল্ক গোয়েন্দারা। এই গাড়িগুলো রয়েছে এখন ড্রাম্পিং স্টেশনে। সেগুলো বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে দিনের পর দিন নষ্ট হচ্ছে। আবার কিছু গাড়ি শুল্কের গ্যারেজে রয়েছে। এসব গাড়ি আর তেমনভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। গাড়িগুলোর পাটর্স অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাড়িগুলো উচ্চপর্যায়ের আমলাদের হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে তা কুলিয়ে ওঠা যায়নি। উপরন্তু তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
এ বিষয়ে শুল্ক, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দু রউফ জানান, তিনি বদলি হয়ে যাচ্ছেন। ওই সব গাড়ির বোঝা তিনি বহন করতে পারবেন না। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ বছর ধরে গাড়িগুলো জব্দ করা হয়েছিল। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে ড. মইনুল খান যখন দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন তিনি শুল্ক ফাঁকি দেয়া গাড়িগুলো জব্দ করার ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেন। গাড়ির জব্দের জন্য বিভিন্ন বাসা বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন তিনি। তার অভিযানের কারণে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তার কাছে গোপন তথ্য আসতো যে, কারা কারা এসব গাড়ি গ্যারেজে সংরক্ষণ করে রেখেছে বা কর ফাঁকি দিয়ে আমদানি করেছে। তার অভিযানের কারণে কেউ কেউ ঢাকার বিভিন্ন সড়কে গাড়ি ফেলে পালিয়ে গেছে। সড়কে পাওয়া জব্দ হওয়া এসব গাড়ির কোনো নেমপ্লেট পাওয়া যায়নি। এতে ওই গাড়ির মালিকদের চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। নেমপ্লেট খুলে নেয়ার কারণ হচ্ছে যে, যাতে ওই গাড়ির মালিক খুঁজে না পাওয়া যায় এবং মালিকের বিরুদ্ধে মামলা না করা যায়।
বিভি/এনএম
মন্তব্য করুন: