দ্বাদশ সংসদ ভোট: রোডম্যাপের কাজে হাত দিচ্ছে ইসি

ছবি: সংগৃহীত।
দায়িত্ব নেওয়ার পর পর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কোনো রোডম্যাপ তৈরি না করে সংলাপ শুরু করায় অনেকেই বিষয়টি ভালোভাবে দেখেনি। এবার সেই রোডম্যাপের কাজে হাত দিচ্ছে কমিশন। প্রাথমিকভাবে রোডম্যাপের খসড়া তৈরির বিষয়ে শুক্রবার (২৪ জুন) ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
রোডম্যাপ নিয়ে সবার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলাভিশনকে বলেন, রোডম্যাপের কাজ করবে কমিশন। তার জন্য খসড়াটা আমরা প্রস্তুত করে দেই। সচিবালয় কমিশনকে সহায়তা করে। আমরা খসড়া করে দেওয়ার পর কমিশন সেটি দেখে ঠিক করে দেবে।
রোডম্যাপ তৈরি করার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও কমিশন ঠিক করবে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নতুন কমিশন নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি অফিস শুরু করে কাজী হাবিবুল আউয়ায় কমিশন। এরপর ১৩ মার্চ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, ২২ মার্চ নাগরিক সমাজ, ৬ এপ্রিল প্রিণ্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ১৮ এপ্রিল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ৯ জুন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি এবং ১২ জুন নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময় করে কমিশন।
এছাড়া প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে ইতোমধ্যে মত বিনিময় করেছে কমিশন। এখন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে যন্ত্রটি প্রদর্শন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কারিগরি বিষয়ে প্রশ্নোত্তর, মত বিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে মতবিনিময় করছে কমিশন। ১৯ ও ২১ জুন দুই দফায় ২৬টি দলকে ডেকেছিল কমিশন। যদিও প্রথম দফায় তিনটি ও দ্বিতীয় দফায় পাঁচটি দল এতে অংশ নেয়নি। আগামী ২৮ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ আরো ১৩টি দলের সঙ্গে এই বিষয়ে মতবিনিময় করবে কমিশন।
সূত্র জানায়, যেহেতু হাতে সময় আছে, তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল। সেটিকে বেইজ ধরে সবকিছুর সময় একটু এগিয়ে নিয়ে আসার কথা ভাবছে কমিশন। এই জন্য এবার নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম আগেই হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী বছর মে মাসের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চায় কমিশন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মপরিকল্পনায় সাতটি করণীয় ঠিক করে ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিল কেএম নূরুল হুদা কমিশন। এই রোডম্যাপকে ধরে আরো কি কি এর সঙ্গে যুক্ত করার যায়, তা নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ করতে চায় ইসি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির কর্মপরিকল্পনার মধ্যে ছিল- আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার; নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ; সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ; বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ভোটকেন্দ্র স্থাপন; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়ার শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিভি/এইচকে
মন্তব্য করুন: