• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া ফাতেমা ভালো আছে ছোটমনি নিবাসে(ভিডিও)

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ৩১ জুলাই ২০২২

আপডেট: ১৭:৩০, ১ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ

চোখের আলো ফুটেছে, দোলনা থেকেই অবাক নয়নে পৃথীবি দেখছে একটি ফুটফুটে শিশু। কিন্তু সে কি জানে, জন্মের আগেই হারাতে হবে মা-বাবাকে। বড় হতে হবে অনাথ আশ্রমে, যার জন্মই যেন এক ট্রাজেডি। বলছিলাম, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় বাবা-মা ও বোনের মৃত্যুর সময় অলৌকিকভাবে মায়ের পেটফেটে জন্ম নেওয়া ফাতেমার কথা। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিশুটির বর্তমান ঠিকানা সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত রাজধানীর আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে।

আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে ফাতেমা

ছোটমনি নিবাস, আজিমপুরের উপ-তত্ত্বাবধায় জুবলী বেগম রানু জানান, আপাতত, ছোটমনি নিবাসেই ৭ বছর বয়স পর্যন্ত পালিত হবে ফাতেমা। চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে সব কিছুই করবে সমাজ সেবা অধিদপ্তর পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠান। এরপর পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আইনী কাঠামো মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

ফাতেমার এক ভাই এবং এক বোন আছে। তবে বাবা-মা মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। কারণ একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার মৃত্যু তাদের জীবনে অমানিশার অন্ধকার নিয়ে এসেছে। অলৈকিকভাবে জন্মনেয়া এই শিশুটির বৃদ্ধ দাদা মুস্তাফিজুর রহমান বাবলু বেঁচে থাকলেও তার কোন উপর্যান নাই। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ছোটমনি নিবাসে ফাতেমাকে দিয়েছেন। তবে ফাতেমাকে এখনো দত্তক দেওয়ার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। 

পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন ০-৭ বছর বয়সী পরিত্যক্ত/পাচার হতে উদ্ধারকৃত শিশুদের ছোটমনি নিবাসে লালনপালন করা হয়। সমাজসেবা অধিদফতর ৬ বিভাগে অবস্থিত ৬টি ছোটমনি নিবাসে শিশুদের মাতৃস্নেহে প্রতিপালন, রক্ষণাবেক্ষণ, খেলাধুলা ও সাধারণ শিক্ষা প্রদান করে থাকে। 


গত ১৬ জুলাই বিকেল ময়মনসিংহের ত্রিশালে কোর্ট ভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাঁদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা। মারা যাওয়ার আগে প্রসব হওয়ায় বেঁচে যায় রত্মার গর্ভের সন্তান। পরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সত্তরোর্ধ্ব প্রতিবন্ধী মুস্তাফিজুর রহমান বাবলুর উঠানে পাশাপাশি তিনটি নতুন কবর

ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনিতে ফাতেমার দাদা মোস্তাফিজুর রহমানদের বাড়ি। ঘরের সামনেই উঠানে পাশাপাশি তিনটি নতুন কবর। যেখানে শায়িত হয়েছেন তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম(ফাতেমার বাবা), তার স্ত্রী রত্না বেগম(ফাতেমার মা) ও মেয়ে সানজিদা। একসঙ্গে তিনজনকে হারিয়ে কবরগুলোর পাশে নির্বাক বসে থাকেন নিহত জাহাঙ্গীরের বৃদ্ধ মা সুফিয়া আক্তার আর বাবা মুস্তাফিজুর রহমান বাবলু। জাহাঙ্গীর-রত্না দম্পতির শিশু কন্যা জান্নাত ও ছেলে এবাদত বাকরুদ্ধ। স্বজনদের ভিড়ে কেবল মা-বাবাকেই খোঁজে ফেরে তাদের চোখ।

এদিকে, সত্তরোর্ধ্ব প্রতিবন্ধী মুস্তাফিজুর রহমান বাবলু পরিবারের কাছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এখন এক আতঙ্কের নাম। এই সড়কে গত ২৭ বছরে প্রাণ গেছে ভাই ছেলে নাতিসহ ৫ জনের। সবারই কবর দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি, বাড়ির উঠানে। কাঁদলেও দুচোখ বেয়ে আর জল গড়ায় না। গলা ধরে আসা কণ্ঠে শুধু বললেন, ‘আমি কী নিয়ে বাঁচবো, আল্লাহ আমাকে কোন পরীক্ষায় ফেলেছেন।

মন্তব্য করুন: