• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

দ্বৈত ভোটার সমস্যা: সমাধান মিলবে যেভাবে

প্রকাশিত: ০০:০৭, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
দ্বৈত ভোটার সমস্যা: সমাধান মিলবে যেভাবে

একাধিকবার ভোটার হওয়া নাগরিকরা ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। কারণ ইতিমধ্যে এই ধরণের অনেক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ‘লক’ করে দেওয়া হয়েছে। যার জন্য সেই এনআইডি দিয়ে আর কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। এনআইডি লক করার পাশাপাশি দ্বৈত ভোটার হওয়ার অপরাধে মামলাও করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে মাঠপর্যায়ে চারটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সহকারি সচিব মো. মোশাররফ হোসেন বাংলাভিশনকে বলেন, দ্বৈত ভোটার সমস্যা সমাধানের জন্য মাঠপর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে। যারা দ্বৈত ভোটার হয়েছেন, তারা এই কমিটির কাছে আবেদন করবেন। পরে কমিটি যাচাই-বাছাই করে কমিশনে সুপারিশ করবে। প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে। 

দ্বৈত ভোটারের জন্য ইসির গঠিত চারটি কমিটি হলো-

সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসভূক্ত উপজেলা নির্বাচন অফিসসমূহের জন্য প্রযোজ্য কমিটি:

এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে (অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকলে সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) আহ্বায়ক এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া  সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সমাজসেবা অফিসার ও অফিসার ইনচার্জকে সদস্য করা হয়েছে। 

জেলা নির্বাচন অফিসভূক্ত উপজেলা নির্বাচন অফিসসমূহের জন্য প্রযোজ্য কমিটি:

এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া  সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সমাজসেবা অফিসার ও অফিসার ইনচার্জকে সদস্য করা হয়েছে। 
 
থানা নির্বাচন অফিসসমূহের জন্য প্রযোজ্য কমিটি:

এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, পার্শ্ববর্তী যেকোনো থানা নির্বাচন কর্মকরা/সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জকে সদস্য করা হয়েছে। 

বিশেষ এলাকাসমূহের প্রযোজ্য কমিটি:

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দেশের চার জেলা- চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের ৩২টি উপজেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার সহকারী কমিশনার (ভূমি), অফিসার ইনচার্জ (এসআই/এএসআই পদমর্যাদার কম নয়), উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়) এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়)।

কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে- ভোটার তালিকায় একাধিকবার নাম অন্তর্ভূক্তকরণ রোধকল্পে যেকোনো গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবমুখী সুপারিশ/প্রস্তাব করা; ভোটার তালিকায় একাধিকবার নাম অন্তর্ভূক্তকরণে কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীর সম্পৃক্ততা/গাফিলতি/অবহেলা পরিলক্ষিত হলে শনাক্তকরণ; এ সংক্রান্ত আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক শুনানী গ্রহণপূর্বক সংশ্লিষ্ট আইনের আলোকে কমিশনে উপস্থাপনযোগ্য আইনসম্মত সুপারিশ করা; ভোটার এলাকার একাধিক নাম অন্তর্ভূক্তিকারীর প্লেস অব অকারেন্স হিসাবে যে উপজেলা/থানায় সংঘটিত হবে সে উপজেলা/থানায় রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক মামলা দায়েরের জন্য সুপারিশ করা; এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য যাবতীয় কার্যক্রম।  

গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে সংরক্ষিত ডাটাবেইজের তথ্যানুসারে দ্বৈত ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ২৯ হাজার ৯৯১ জন।  

দ্বৈত ভোটার হওয়ার কারণ- অজ্ঞতা; ভোটার হিসাবে নিবন্ধনের পর এনআইডি কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ মীর্ঘসূত্রিতা অর্থাৎ সঠিক সময়ে এনআইডি কার্ড হাতে না পাওয়া; দ্বৈত ভোটার হওয়া দন্ডনীয় অপরাধ- এতদবিষয়ে যথেষ্ট প্রচার প্রচারণার অভাব; বিবাহজনিত কারণে (মহিলা ভোটারদের পিত্রালয়ে ভোটার হওয়া এবং পরবর্তীতে স্বামী.শশুর বাড়িতে পুনরায় ভোটার হওয়া); তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বামীর নাম গোপন করে ভোটার হওয়া; ভাসমান ভোটার; বিভিন্ন অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করা যেমন-বিদেশ গমন, সরকারি চাকরি লাভ, অন্যের সম্পতি দখল; অপরাধ সংঘটনের পর তা হতে মুক্তিলাভ।

সর্বশেষ এই বিষয়ে বিগত কমিশনের ৭৮তম সভায় নিম্নরুপ সিদ্ধান্ত হয়; যারা দ্বিতীয়বার ভোটার হয়েছেন এবং এনআইডি নিয়েছেন, সেসব ভোটারের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া অ্যাফিস ম্যাচিংয়ের ব্যবস্থা থাকার পর ও যেসকল কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে দ্বৈত ভোটার হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; দ্বৈত ভোটার অন্তর্ভূক্তিরোধে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে; কারিগরি দিক বিবেচনা করে মাঠ কার্যালয়ে ভোটার নিবন্ধনের সময় অ্যাফিস ম্যাচিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের উগ্যোগ নিতে হবে; ভোটার কর্তৃক দ্বিতীয়বার অন্তর্ভূক্তির বিষয়টিসহ জাতীয় পরিচয় সংক্রান্ত অন্যান্য অনিয়ম নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্র বিশিষ্ট কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটি যথাযথ শুনানী গ্রহণ করে আইন সম্মত সুপারিশ প্রদান করবে। সে আলোকে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

এরআগে দ্বৈত ভোটারের আবেদন নিষ্পত্তির সুপারিশের জন্য তিনটি (উপজেলা, থানা ও বিশেষ এলাকার জন্য প্রযোজ্য) কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বাধীন গঠিত বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়।

সর্বশেষ গত ২ মার্চ ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী এবং ৪৫৪ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।

প্রথম থেকে এনআইডি হারানো ও সংশোধন সংক্রান্ত সেবা বিনামূল্যে দিলেও ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

বিভি/এইচকে/এজেড

মন্তব্য করুন: