• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বিশ্ব ওজোন দিবস আজ

ওজোনস্তর ক্ষয়: গরম, ক্যান্সার ও ত্বকের রোগসহ বাড়ছে বহু ঝামেলা

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১৫:২২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ওজোনস্তর ক্ষয়: গরম, ক্যান্সার ও ত্বকের রোগসহ বাড়ছে বহু ঝামেলা

ওজোন বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে থাকা একটি উপকারি গ্যাসের নাম। যা পৃথিবীকে চাদরাবৃত করে রক্ষা করে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুতে নানান দূষিত পদার্থের আধিক্যের কারণে বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে তৈরি হয় ছিদ্র। সেই ছিদ্র দিয়ে পৃথিবীতে সরাসরি প্রবেশ করে সূর্যের তীব্রতাপ ও ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি। এতে পৃথিবীতে তাপ বা গরম বাড়ার পাশাপাশি মানুষের ত্বকের ক্ষতি, চোখের ছানি রোগ এবং ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। একইসঙ্গে উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে এবং পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করে। 

তবে বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তর পৃথিবীর মানুষের জন্য উপকারি হলেও গ্রাউন্ড লেভেলে (মানুষের বসবাস স্তরে এলে) তা চরম ক্ষতি বয়ে আনতে পারে মানুষের জন্য। ওজোন গ্যাসযুক্ত বায়ু গ্রহণ করলে মানুষের বুকে ব্যথা, কাশি, গলা জ্বালাপোড়াসহ তৈরি করতে পারে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী নানান সমস্যা। 

সাধারণত বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই অক্সাইডের আধিক্য হলে তা ওজন স্তর পর্যন্ত পৌঁছে এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড ও ওজোন গ্যাসের বিক্রিয়া ঘটে, এরফলে ওজনের অণু ভেঙে কার্বন-ডাই অক্সাইডের সাথে যুক্ত হয়ে বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। এভাবে ওজন স্তর ধ্বংস হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওজোনস্তরের ক্ষতির জন্য মূলত মানুষেরই কিছু আচরণ দায়ী। শিল্পায়ন, গাড়ির ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া, ইটের ভাটার ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহার দায়ী। বিশেষ করে সিএফসি গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে। নয়লে ওজোনস্তরের ক্ষয় ঠেকানো সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মাটি, পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শহিদ আখতার হোসেন বাংলাভিশনকে বলেন, ওজোন স্তর আমাদেরকে সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই রশ্মি যদি পৃথিবীতে আসে তাহলে আমাদের ত্বকের, চোখের ছানি হবে, অনেক রোগ বেড়ে যাবে এবং পশুপাখির ক্ষতি হবে। বিশেষ করে এই রশ্মির কারণে পৃথিবীতে ক্যান্সার বেড়ে যাবে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা সিএফসি গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে এই ওজোনস্তরের নষ্ট করে নিজেদের জন্য ক্ষতি ডেকে আনছি। আমরা যে গাড়ি চালাই, এসি ব্যবহার করি, ফ্রিজ ব্যবহার করি সেখানে সিএফসি গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। আমরা প্লাস্টিক পুড়িয়ে দেই এতে সিএফসি ছাড়াও পিএইচএসসহ মারাত্মক কিছু ক্ষতিকর উপাদান নিঃসরণ হয়। যা ওজোনস্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ওজোনস্তরের ক্ষতি মোকাবিলায় সিএফসিযুক্ত ফ্রিজ-এসি ব্যবহার না করা, নিরাপদ জ্বালানির গাড়ি ব্যবহার, গাড়ি কম ব্যবহার, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞ।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ার‌ম্যান বায়ুমান বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ওজোনলেয়ার যখন ক্ষয়প্রাপ্ত হয় তখন  সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীর যে কোনো দিকে প্রবেশ করতে পারে। এখন যে পৃথিবীতে ক্যান্সারের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়ে গেছে এটা ওজোন লেয়ার ক্ষয়ের কারণেই হচ্ছে। 

তিনি বলেন, বায়ুমণ্ডলের ওজোন লেয়ার আমাদের জন্য উপকারি হলেও এটি যখন নিচে নেমে আসে তখন তা আমাদের জন্য চরম ক্ষতিকর। বিশেষ করে গ্রাউন্ড লেভেলে ওজোন বেড়ে গিয়ে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের বায়ুতে মিশে শরীরে প্রবেশ করলে তা আমাদের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী নানান ক্ষতি করে। যেমন, ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে, বমি-মাথাব্যথাসহ তাৎক্ষণিক অনেক প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। 

ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্য ও গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ওজোনস্তর ক্ষয়ের কারণে এখন গরম বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে। ওজোনস্টরের কারণে যে গ্ল্যাসিয়ার বাড়ছে তাতে আমাদের সবচেয়ে দামি ভূমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই ভূমিতো আমি আর ফেরত পাবো না। কিন্তু আমার জনসংখ্যা বাড়ছে। 

তিনি বলেন, শুধু ভূমি নষ্ট নয়, এরচেয়েও খারাপ হলো স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। ভূরশ্মির কারণে নিঃসন্দেহে ক্যান্সার বাড়ছে, কিডনি সমস্যা বাড়ছে, স্কিনের রোগ বাড়ছে। সেখানে সরকারের স্বাস্থ্যগত খরচ বাড়ছে। আগে যা এক হাসপাতালে হতো এখন সেটা একশো হাসপাতালেও হচ্ছে না। এজন্য আলাদা আলাদা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল বানাতে হচ্ছে। আর ট্রিটমেন্ট দিলেও তারুণ্য যে নষ্ট হচ্ছে, কাজের ক্ষমতা যে কমে যাচ্ছে সেটাতো আর ফেরৎ আনা সম্ভব না।

জলবায়ু পরিবর্তন বা ওজোনস্তরের ক্ষয়ে বাংলাদেশ দায়ী না হলেও আমাদের ঠিকই ভুগতে হচ্ছে বলে জানিয়ে ক্লাইমেট পার্লামেন্টের এই সদস্য বলেন, ওজোনস্তরের ক্ষয়ের কারণে গরম বাড়ছে। গরম বাড়ার কারণে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। তখন সেটা সামলাতে গিয়ে co2’র ব্যবহার বাড়ছে। তাই এই সাইকেল ভাঙতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনকে বেঁধে ফেলতে বিশ্ব সভ্যতাকে আরও চাপ দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বছেন, ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব মুক্ত থাকতে ওজোনস্তর ক্ষয়রোধে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে, জনগণ সিএফসিমুক্ত ফ্রিজ ও এসি কিনতে পারেন। বায়ুতে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য যাতে নির্গমণ না হয় টেকনিশিয়ানগণকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ওজোনস্তরের গুরুত্ব ও এর রক্ষায় করণীয় বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2