মানুষের পর এবার এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স হচ্ছে ব্যাঙও: ঢাবি গবেষণা
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশের ব্যাঙেরা ভালো নেই। অপরিকল্পিত নগরায়ণে প্রতিনিয়ত আবাসস্থল হারাচ্ছে ব্যাঙেরা। এরই মধ্যে নতুন শঙ্কার খবর দিলেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষকরা বলছেন, শুধু মানুষ নয়, এবার এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স হচ্ছে ব্যাঙেরাও। যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়া ওষুধের বর্জ্যের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স হয়ে যাচ্ছে ব্যাঙের শরীর। এর মাধ্যমে কৃষকের বন্ধু ব্যাঙের প্রজাতি বিলুপ্তির আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।
বিশ্ব ব্যাঙ দিবস উদযাপনে সোমবার (২৭ মে) সেভ দ্য ফ্রগস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেচার কনজারভেশন ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির আয়োজনে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এই গবেষণা তথ্য তুলে ধরা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের করা এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুব আলম।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকার বিভিন্ন প্রাকৃতিক স্থান এবং আবর্জনার ভাগাড় থেকে ৫ প্রজাতির ব্যাঙের ত্বক থেকে নমুনা (skin swab) সংগ্রহ করা হয়। এরপর বিসিএসআইআর এর ল্যাবে সেই ব্যাঙগুলোর বাহ্যিক এবং মলিকুলার টেস্ট করে ১০টি ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ব্যাঙ থেকে প্রাপ্ত ব্যাক্টেরিয়াগুলো ৬টি এন্টিবায়োটিকের সাথে পর্যালোচনা করে, সবচেয়ে বেশি ভ্যানকোমাইসিন (Vancomycin) এর প্রতি রেসিস্ট্যান্স হতে দেখা যায়। তবে আবর্জনার ভাগাড় থেকে নেওয়া ব্যাঙে ভ্যানকোমাইসিনের (Vancomycin) প্রতি রেসিস্ট্যান্স বেশি পেলেও প্রাকৃতিক স্থান এবং বর্জ্যের ভাগাড় এই দুই স্থান থেকে সংগ্রহ করা ব্যাঙেই এমপিসিলিন (Ampicillin) এর প্রতি রেসিস্ট্যান্স পাওয়া গেছে। যা থেকে বুঝা যাচ্ছে, ব্যাঙেরা এই এমপিসিলিন এর প্রতি বেশি রেসিস্ট্যান্স হচ্ছে। তাই একে সবচেয়ে বেশি আশংকাজনক (alarming) বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিছু কিছু ব্যাঙে একাধিক (Ampicillin-Vancomycin-Erythromycin) এন্টিবায়োটিকের রেসিস্ট্যান্সও (multidrug resistance) পাওয়া গেছে। গবেষণায় তারা স্কিপার ফ্রগ (Skipper frog) নামের একটি প্রজাতির ব্যাঙে তিনটি এন্টিবায়োটিকের রেসিস্ট্যান্স হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বলেও জানান গবেষক দলের সদস্য সহকারী অধ্যাপক মো. মাহাবুব আলম।
এই গবেষণার আলোকে ব্যাঙদের ঝুঁকিগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা স্টাডি করে দেখেছি বাংলাদেশে এর আগে ব্যাঙের এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। যেহেতু প্রাণিটি পরিবেশের অবস্থার নির্দেশক (Bio-indicator), তাই আমরা এটিকে নিয়ে গবেষণা করেছি। যদিও আরও গবেষণা প্রয়োজন তবু আমরা ধারণা করছি, বেশি মাত্রায় এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স ব্যাঙ এর জন্য বড় রকমের হুমকি। হুমকি মোকাবিলায় গবেষণা থেকে যত্রতত্র ওষুধের বর্জ্য না ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
একই অনুষ্ঠানে ‘ব্যাঙ নিয়ে চলমান গবেষণা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আরও একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোখলেসুর রহমান।
এর আগে আলোচনা সভায় ব্যাঙ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শেফালী বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. হামিদা খানম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেচার কনজারভেশন ক্লাবের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. নিয়ামুল নাসের ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ছগীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে ব্যাঙ সংরক্ষণ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান।
আলোচনা সভা ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনের পাশাপাশি ব্যাঙ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যাতিক্রমী বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। ব্যাঙ নিয়ে পোস্টার আঁকা, ফটোগ্রাফি, ব্যাঙ চেনার কুইজ এবং বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙের ডাক চেনাতে ব্যাঙের ডাক নকল করারও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
পরে ব্যাঙসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে জনসচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখায় দুইজন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রকৃতির বার্তাবাহক সম্মাননাও দেওয়া হয়। এতে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ক্যাটাগরিতে এই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক কেফায়েত শাকিল, প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে বন্যপ্রাণী বিষয়ক গণমাধ্যম বেঙ্গল ডিসকভার ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে ফ্রিল্যান্সার রাইটার মনজুর হোসাইন মাহিকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: