• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

রাজধানীতে সকলের জন্য নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা চেয়ে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২৩ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১৫:১৪, ২৩ মার্চ ২০২৫

ফন্ট সাইজ
রাজধানীতে সকলের জন্য নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা চেয়ে মানববন্ধন

ছবি: নিরাপদ পানির নিশ্চয়তার দাবিতে মানববন্ধন

পানি বিষয়ে সচেতনতা ও গুরুত্বকে তুলে ধরার নিমিত্তে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ২২ মার্চ ‘বিশ্ব পানি দিবস’ পালন হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এ বছরও ‘বিশ্ব পানি দিবস’ পালিত হয়েছে। এবারের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘হিমবাহ সংরক্ষণ’, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা ও নিরাপদ পানির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। মানুষসহ পৃথিবীর প্রাণীকুল ও উদ্ভিদের জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও সুপেয় পানি অপরিহার্য। দূষিত পানিতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে। 

সকলের জন্য নিরাপদ পানির নিশ্চিত করার দাবতে শনিবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বারসিক, বাংলাদেশ স্কাউট এন্ড গাইড ফেলোশিপ, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, ছায়াতল বাংলাদেশ, লাইফ সার্ভ বাংলাদেশ ও গ্রিন ফোর্স- এর যৌথ উদ্যোগে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের (বানিপা) সভাপতি প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বারসিকের সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম। স্বাগত বক্তব্য ও সুপারিশ তুলে ধরেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবার সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। 

বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পবার সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ, বাংলাদেশ স্কাউট অ্যান্ড গাইড ফেলোশিপের সাধারণ সম্পাদক মুকুল আনোয়ার, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, গ্রীন ফোর্সের আহসান হাবিব, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান, ছায়াতল বাংলাদেশের উপ-প্রচার সম্পাদক মো. ইমন, লাইফ সার্ভ বাংলাদেশের ফাউন্ডার ও সিইও মো. আজাদ হোসেন। মানববন্ধনে পবা’র ও গ্রীন ফোর্সের নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাগত বক্তেব্যে পবার সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন বলেন, এ বছরের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘হিমবাহ সংরক্ষণ’ বিশ্বের জন্য খুবই সময়োপযোগী। শুধু জীব ও পরিবেশ নয়, পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় পানি একটি অমূল্য সম্পদ। পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশই পানি। তবুও বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির জন্য আমাদের কী পরিমাণে বেগ পেতে হয় তা কারো অজানা নয়। পানির প্রাপ্যতা এবং ব্যবস্থাপনা মানুষের জীবনে একদিকে সংকট এবং অন্যদিকে সৌভাগ্য। কারণ পৃথিবী নামের এই গ্রহের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ হলো পানি। তাই পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার নিমিত্তে সঠিক ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং সংকট নিরসনের বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করে তরুণ প্রজন্মকে পানির ব্যবহার, অপচয় এবং দূষণ বিষয়ে সচেতন করা সময়ের দাবি। জাতিসংঘের প্রতিবেদন মতে বিশ্বের ২৬ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ৪১ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় না।

প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পানির স্তর নেমে যাওয়া ও ভূ-পরিস্থ পানির মানের ক্রমাবনতির কারণে বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনা আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সরকার কর্তৃক যে পানি সরবরাহ করা হয় তার গুণগত মান তা জনগণ জানতে চায়। দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের আবাস রাজধানী ঢাকায়। যে সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে পানির চাহিদা। আর ঢাকা ওয়াসা সেই চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানিই বেশি কাজে লাগাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজধানীতে ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের ওপর এই নির্ভরতা ৩০ ভাগে নামিয়ে আনতে না পারলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের সাথে সাথে ভূগর্ভে পানি প্রেরণের কৌশল তৈরি করতে হবে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,  আমাদের মোট পানির মাত্র ৩ ভাগ পানযোগ্য বাকী সব লবণাক্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের হিমবাহগুলে গলে গিয়ে আমাদের সমুদ্রপৃষ্ট এর উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি ঘুর্ণীঝড়, জলচ্ছাস বেড়ে গিয়ে উপকুলীয় এলাকার  সম্পদহানী ও সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে উপকুলীয় মানুষ  পানির অভাবে মানবিক জীবন যাপন করছে। এখন পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন কাজে প্রায় পুরোপুরি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। ঢাকাবাসীর পানির অভাব দূর করার জন্য ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করার কারণে পানির স্তর এখন অনেক নীচে চলে গিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন ঢাকা শহরকে পানিহীন শহর ঘোষণা করতে হবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন পরিকল্পনা ভুউপরিস্থ পানি ব্যবহার করার উদ্যোগ নিতে হবে। 

অন্যান্য বক্তারা বলেন, প্রতিবছর বিশ্ব পানি দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আমরা নিরাপদ পানির সংকট তুলে ধরি এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে নিরাপদ পানি সংরক্ষণের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করি।  আমরা মনে করি বিশুদ্ধ পানির আধার ও চিহ্নিত পয়:নিষ্কাশনের সমস্যা নিরসনের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবার এগিয়ে আসা উচিৎ। তাই সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ পানি অপরিহার্য পবার পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধলে মানববন্ধনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। 

সুপারিশসমূহ-

১.ভূপৃষ্টের পানি ব্যবহার ব্যবহারের বিষয়টি নগর পরিকল্পনা, বসতবাড়ি পরিকল্পনা বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করা। ঢাকা ওয়াসাসহ সকল নগরীতে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নদী বা জলাশয়ের পানি ব্যবহারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে স্বল্প মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী মাস্টার প্লান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

২.প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব পানি ব্যবস্থাপনায় চাষাবাদ পদ্ধতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা। কৃষি, শিল্পে ও ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার জন্য বিভিন্ন মেয়াদী মহাপরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হওয়া জরুরি।

৩.শিল্প-কারখানার পানির অপচয় রোধে পানির পুনর্ব্যবহারের নিমিত্ত ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) স্থাপনের মাধ্যমে পয়ঃপ্রণালী ও ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত পানি পরিশোধন করা।

৪.বৃষ্টির পানি সোককুপ এর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় আবাসিক/অনাবাসিক এলাকায় সেফটিক ট্যাংক ও সোককুপ স্থাপনের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

৫.জলাধার রক্ষায় পানি আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

৬.পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষকে আগামী ২ বছরের মধ্যে ভূপৃষ্ঠের পানি ৯০% ব্যবহারের জন্য বাধ্য করা।

৭.নাগরিকদের মাঝে পানির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৮.ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা এবং অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৯.খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

১০.অপরিশোধিত শিল্পকারখানায় বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করা।

১১.ঢাকার আশেপাশের নদীসহ অন্যান্য সকল নদী ও জলাশয় দখল, ভরাট ও দূষণ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

১২.নদী দূষণমুক্ত করা। নদীর পানি কৃষিও শিল্পে এবং পরিশোধন করে খাবার পানি হিসাবে ব্যবহার করা।

১৩.নদীর প্রবাহ ও নাব্যতা যথাযথ রাখার লক্ষ্যে নদীতে পিলারসমৃদ্ধ ব্রিজের পরিবর্তে ঝুলন্ত ব্রিজ বা টানেল নির্মাণ করা।


 

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2