• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

এসডো’র গবেষণা প্রতিবেদন

ইরেজারের বিষাক্ত রাসায়নিক শিশুকাল থেকেই কমিয়ে দিচ্ছে প্রজনন ক্ষমতা

প্রকাশিত: ১৭:০১, ১৪ মার্চ ২০২২

আপডেট: ১৭:০৬, ১৬ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ
ইরেজারের বিষাক্ত রাসায়নিক শিশুকাল থেকেই কমিয়ে দিচ্ছে প্রজনন ক্ষমতা

সংগৃহিত

ছোট বেলায় অধিকাংশ শিশুর লেখা-লেখি শুরু হয় প্যান্সিল দিয়ে। আর সেই কালি মুছতে ব্যবহার করা হয় ইরেজার বা মুছোনি। স্কুলগামী শিশুদের একজনকেও পাওয়া যাবে না যার ব্যাগে ইরেজার থাকে না। অনেক শিশু মনের অজান্তে সেই ইরেজার নেয় মুখেও। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষা সামগ্রীতে ব্যবহৃত থ্যালেটস শিশুর মনোযোগের ঘাটতি তৈরির পাশাপাশি বাড়িয়ে দেয় মানসিক অস্থিরতা ও বিষন্নতার প্রবণতা।

এই রাসায়নিক লিভারের ভয়াবহ ক্ষতির পাশাপাশি প্রজনন ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। একইঙ্গে এটি অ্যালার্জি ও হাঁপানির  মতো রোগেরও সৃষ্টি করে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। 

সম্প্রতি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো’র করা একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (১৪ মার্চ) এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ‘টক্সিক কেমিক্যালস ইন কিডস্ স্টেশনারি: থ্যালেটস ইন ইরেজারস’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন তুলে ধরে এসডো।

পরিবেশবাদী গবেষণা সংগঠনটি জানায়, যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে এসডো, ফাইনানশিয়াল ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক ইন্টারেস্ট ফাউন্ডেশন এবং কোরিয়ার রাজধানী সিউল এ অবস্থিত ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকিউপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ - ডাব্লিওআইওইএইচ। দক্ষিণ এশিয়ার ৯টি দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, নেপাল এবং ফিলিপাইন থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ওনজিন ইনস্টিটিউট এ পিভিসি স্ক্রিনিং ও থ্যালেটস টেস্টিং এই দুই পর্যায়ে পরীক্ষা করেছেন তাঁরা।

এতে বাংলাদেশের স্থানীয় দোকান থেকে নেওয়া বিভিন্ন ব্র্যাণ্ড ও রঙের ৪৭টি ইরেজার পরীক্ষা করে ৩০টি নমুনাতেই থ্যালেটস এর উপস্থিতি পেয়েছেন তারা। সেই ৩০টির মধ্যে ২১টি নমুনাই থ্যালেটস নিরাপত্তা সীমাও অনেক বেশি ছিল। ৭টি প্রধান থ্যালেটসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য সবগুলো নমুনায় পিভিসি স্ক্রিনিং এবং থ্যালেটস টেস্টিং করেছিলেন তাঁরা। ৩০টি নমুনায় ৭টির মধ্যে প্রধান ৪টি থ্যালেটসই পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- ডিআইবিপি , ডিবিপি, ডিইএইচপি, ডিইএইচপি এবং ডিআইএনপি। যা লিভারের মারাত্বক ক্ষতির পাশাপাশি প্রজনন ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে এবং অ্যালার্জি ও হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে।

প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করা একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, শিশুদের মানসিক আচরণ বিকাশের উপর থ্যালেটস প্রভাব ফেলে বলে প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই স্কুল অফ মেডিসিনের নয় বছর ধরে চলা এই গবেষণায় শিশুদের মধ্যে আগ্রাসন, মানসিক অস্থিরতা, মনোযোগের ঘাটতি এবং বিষন্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে বলেও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে আইসিডিডিআর’বি-এর এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশন ইউনিটের প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কিছু থ্যালেটস এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষাক্ততার মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণিত হয়েছে। শিশুদের মধ্যে হাঁপানি এবং এডিএইচডি সিন্ড্রোমের মতো বিকাশজনিত রোগ, মনোযোগে ঘাটতি এবং হাইপারএক্টিভিটির মতো রোগ দেখা গিয়েছে। 

থ্যালেটস এর প্রভাব ভালভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন এবং থ্যালেটস আমদানি এবং ইরেজার তৈরিতে তা ব্যবহার করার উপর তাৎক্ষণিক বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী। 

আরও পড়ুন:

 

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, থ্যালেটসকে ‘এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার’ বলা হয়। কারণ এগুলো শরীরের হরমোনগুলোকে নকল করে বা ব্লক করে প্রভাবিত করে। এগুলো শরীরের ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন এবং অন্যান্য হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রায় হস্তক্ষেপ করে। এসব পদার্থের এক্সপোজার সীমিত করা উচিত যতক্ষণ পর্যন্ত না এসব ব্যবহার সীমিত করার জন্য যথাযথ আইন আরোপ করা হচ্ছে। অভিভাবকদের শিশুদের পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ সীমিত করতে হবে, বিশেষ করে যদি তার বয়স ৮ বছর বা তার কম হয়।

এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, অনেক দেশ ইতিমধ্যে কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কোরিয়াতে থ্যালেটস এর উপর একটি আইন আছে এবং এর ফলস্বরূপ, তাদের শুধুমাত্র একটি নমুনায় থ্যালেটস পাওয়া গেছে। সুতরাং এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, একটি সঠিক আইন অনেকাংশে ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। 

পণ্যগুলোতে বিশেষ করে শিশুদের স্টেশনারি যেমন ইরেজার যা তারা প্রতিদিন ব্যবহার করে, থ্যালেটসের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার জন্য একটি যথাযথ আইন আরোপ করার বিষয়ে সরকারকে এখনি নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

 সংগঠনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘ইরেজার একটি শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্টেশনারি কিন্তু এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, এই ইরেজারগুলো শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে থ্যালেটস এবং দৈনন্দিন পণ্যে এর উপস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এটি সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। তাদের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। কারণ এটি আমাদের বেশিরভাগের কাছে খুবই নতুন একটি বিষয়’।

থ্যালেটস কি?

থ্যালেটস হল বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের একটি গ্রুপ যা প্লাস্টিককে আরও টেকসই করতে ব্যবহার করা হয়। এদেরকে প্রায়ই প্লাস্টিসাইজার বলা হয়। এসব রাসায়নিক পদার্থগুলো অন্যান্য পদার্থকে একত্রে জোড়া লাগানোর কাজ করে এবং প্লাস্টিককে নমনীয় করে।  দৈনন্দিন ব্যবহারের বিভিন্ন পণ্যে থ্যালেটস পাওয়া যায়, যেমন ভিনাইল ফ্লোরিং, লুব্রিকেটিং তেল, এবং ব্যক্তিগত পণ্য (সাবান, শ্যাম্পু, চুল স্প্রে)।  থ্যালেটসকে ‘সর্বত্র রাসায়নিক পদার্থ’ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এগুলো আমাদের কর্মস্থানে ব্যবহার করা পানির বোতলে, আমাদের বাথরুমের মেঝেতে, আমাদের চুল পরিষ্কারের শ্যাম্পুতে এবং আমাদের ফাস্ট ফুডের আশেপাশে থাকা মোড়কগুলো সহ বিভিন্ন ধরণের পণ্যে পাওয়া যায়।

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2