• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

শীতের আগমনে গাছিরা খেজুর গাছ কাটায় ব্যস্ত

জয়নাল আবেদীন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ৯ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
শীতের আগমনে গাছিরা খেজুর গাছ কাটায় ব্যস্ত

আমাদের দেশে বছরের একটি মৌসুমে অর্থাৎ শীতকালে খেজুর গাছ কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছিরা।কারণ,এসময় খেজুর কাছ ছাটাই করে বা পরিষ্কার করে ভাড় টাঙিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করে। রস থেকে আবার রসের পিঠা, রসের ক্ষীর, খেজুরের গুড় ও পাটালি বানানো হয়। এটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার। খেজুর গাছ সাধারণত ১০ থেকে ৩০ ফুট লম্বা হয়। মাথায় ঝাঁকড়া বা চারদিকে ছড়ানো চুলের মতো পাতা ও সারা শরীরে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে খেজুর গাছ।

প্রথমে খেজুর গাছের পাতা পরিষ্কার করতে হয়, অনেকটা বাবড়ি চুল ছাঁটার মতো। এরপর গাছের গায়ে লম্বা হয়ে যাওয়া কাঁটাগুলো পরিষ্কার করা। তারপর ‘চাঁচ দেওয়া’। খিল লাগানো এবং ভাড় টাঙ্গানো পর্যন্ত গাছিকে তদারকি করতে হয়। বছরে একবারি খেজুর গাছকে ক্ষতচিহ্ন পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।তাও আবার রস সংগ্রহের জন্যে। এ সকল কাজ করে গাছিরা। আর তার জন্যে লাগে ধারালো দা যন্ত্র ও দড়ি রাখার টোং। 

বেশিরভাগ গ্রামে রাস্তার দু'ধারে ও জমির আইলে খেজুর গাছ বেশি উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। আবার শতক থেকে বিঘা বিঘা জমিতে লাগান খেজুর গাছ।তবে সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ রয়েছে যশোর জেলাতে। সারা বাংলাদেশে খেজুরের রসের জন্যে বিখ্যাত এই জেলাটি। বলা হয়, যশোরের যশ, খেজুরের রস।

শীতের রিক্ততা বাড়ছে অর্থাৎ শীতকাল শুরু হয়েছে।এখনি সময় হয়েছে গাছিদের গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করার। একটি খেজুর গাছে রস আনতে একজন গাছিকে কমপক্ষে চারবার গাছে উঠতে হয়। ভোর সকালে, ফজরের আযান দেওয়ার আগেই গাছিরা চলে আসে রসের ভাড় পাড়তে। কনকনি শীতে রস ভাড় থেকে রস আনার পরে তারা মনে একটা প্রশান্তি খুজে পায়। বাড়িতে আনার সাথে সাথেই এলাকার মানুষের কাছেই রস বিক্রি হয়ে যায়। গাছিরা নিজের পরিবারে খাওয়ার জন্যে ও গুড় করার জন্যেও রেখে দেয় রস। আবার রস সংগ্রহের একদিন আগেই অনেকে অর্ডার দিয়ে রাখে।

গ্রামাঞ্চলে শীত আসে এক ভিন্ন আমেজে।ভোর রাতে উঠে অনেকে কৃষি কাজে যাওয়ার জন্যে আবার কেউবা রস সংগ্রহের কাজে। মা-বোন-চাচিরা ওঠে ঘর গোছানোর কাজে।প্রায় শীতের রাতে ও সকালে একটি মহল্লার সবাই একসাথে বসে আগুন করে তাপ নিতে থাকে। খেজুর গাছের রস থেকে গুড় বানানোর সময় শিশু থেকে শুরু করে বালক-বালিকারা গুড় খাবার জন্য হুড়োহুড়ি সৃষ্টি করে। যেন এক অপরূপ গ্রামের দৃশ্য যা এখন শুধুই স্মৃতি। উনুনের পাশে বসে রস খাওয়া, গুড় বানানে দেখা এটা যশোরের এক ঐতিহ্য।

আগে প্রচুর খেজুর গাছ কাটা হতো। রসও প্রচুর হতো।ফলে গুড়,পাটালি বিক্রি করে গাছিদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসতো। এখন বেশি খেজুর গাছ তেমন নেই যে রস পাবে অনেক। বিকালে গাছ কেটে ভাড় টাঙিয়ে আসলে পরেরদিন সকালে প্রচুর রস পেত।সেইসময় অন্যরকম আমেজও ছিলো। নিজেদের মধ্যে তো ছিলই, গ্রামের প্রতিটি পরিবারেও ছিলো। এখন তেমন পরিলক্ষিত হয় না।

যশোর জেলার ৮টি উপজেলায় যে খেজুর গাছ ছিলো এখন তার সংখ্যাটি কমে গেছে।ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে চলেছে যশোরের এই ঐতিহ্য। জনসাধারণ এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন ইট ভাটা । বেশিরভাগ খেজুর গাছ পুড়েছে ইটভাটায়।এছাড়াও বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে যে সাদমান্য খেজুর গাছের অস্তিত্ব লক্ষ করা যাচ্ছে তা বাঁচিয়ে রেখে যশোরের এতিহ্যকে ধরে রাখতে জনমানুষের সচেতনতার আহ্বান করা যেতে পারে। শুধু কৃষকদের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়,সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এ শিল্পকে বাঁচাতে। গাছিদের নিয়ে,কৃষি বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যাপক হারে খেজুর গাছ রোপণ করতে হবে। তাহলে, যশোরের যশ আর বাংলার ঐতিহ্য এ খেজুর গাছের পরিসমাপ্তি ঘটবে না।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: