খাগড়াছড়িতে পুকুর ভরাট, বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল
খাগড়াছড়িতে পুকুর ভরাট, বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল
খাগড়াছড়িতে ভূমি খেকো চক্রের থলের বিড়াল বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। বাংলাভিশন ডিজিটাল প্লাটফর্মে ‘১০০ শতক পুকুর ভরাট করে জমি বিক্রি ভাগাভাগি হচ্ছে টাকাও’ সংবাদ প্রকাশের জেরে নানা গুঞ্জনের ডাল-পালা মেলতে শুরু হয়েছে। বেরিয়ে আসছে চক্রটির নানা তথ্য-উপাত্ত। সে সাথে পুকুর ভরাট করে বিশাল জমির ভাগভাটোয়ারা নিয়েও দেখা দিয়েছে বিরোধ। অপরদিকে জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘ দিন ধরে খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন স্থানে, ধানি জমি, পুকুর ও নালা নিরীহ মানুষের কাছ থেকে কিনে ভরাট করে বেশি দামে বিক্রি করে আসছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিতে কেনা ও বিক্রির ক্ষেত্রে কম মূল্য দেখানো হচ্ছে। এতে চক্রটি লাভবান হলেও সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অপর দিকে জায়গার মূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে হওয়ায় স্থানীয়রা জায়গা ক্রয় করতে পারছেন না। সমতলের লোকজন এসে সে সব জায়গা কিনে নিচ্ছে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহরের গঞ্জপাড়ায় ‘১০০ শতক পুকুর ভরাট’ নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে চক্রটি খাগড়াছড়ি শহরের জিরোমাইল থেকে শুরু করে জেলা শহরের সাধারণ পাহাড়িদের জমি নানা প্রলোভন দেখিয়ে কিনে নিচ্ছে। পরে সে সব জমি উপযুক্ত করে বেশি দামে বিক্রি করছে। জায়গার মূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় স্থানীয় সে সব জায়গা কিনতে পারছে না। ভূমি খেকোদের সহযোগিতায় ভূমি চলে যাচ্ছে সমতলের ব্যবসায়ীদের হাতে। গড়ে তুলছে নানা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
এ ক্ষেত্রে কেনা ও বিক্রির প্রকৃত মূল্য গোপন করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে চক্রটি রাতারাতি ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যাচ্ছে।
একটি সূত্র বলছে, গত রোজার মাসে খাগড়াছড়ি শহরের গঞ্জপাড়া এলাকায় প্রায় একশ শতক-এর একটি বিশাল পুকুর দিনে-রাতে মাটি ফেলেন ভরাট করেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো: আক্তার হোসেন। পুকুর ভরাটকারী মো: আক্তার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অকপটে স্বীকার করে বলেন, ৩০ লাখ টাকার চুক্তিতে এই পুকুর ভরাট করেছেন, এখানে কোন স্বার্থ নেই। জনৈক আব্দুল কাইয়ুম তার সাথে এ চুক্তিটি করেছেন। কিন্তু শেষ মূহুর্তে প্রশাসনের বাধার কারণে সামান্য কাজ শেষ করতে পারেনি।
তবে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফান উদ্দিন বলেন, গঞ্জপাড়ায় কোন পুকুর ছিল কিনা জানা নেই। যদি কেউ অভিযোগ করেন,তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গঞ্জপাড়ায় বিশাল পুকুর ভরাট করার পিছনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাসহ প্রভাবশালী চক্রের হাত রয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার যুবদলের আহবায়ক মো: ইব্রাহিম এখানে তারও ১০ শতক জায়গা রয়েছে দাবী করে সংবাদ পরিবেশ না করার অনুরোধ করেন। তার পরে জনৈক আব্দুল কাইয়ুম পুরো জায়গাটি নিজের দাবী করে নানাভাবে সংবাদ পরিবেশ বন্ধ করা চেষ্টা করেন।
অপর দিকে আব্দুল কাইয়ুমের দাবি, ভরাটকৃত পুকুরের সব জমির মালিক তিনি একা। অন্যদের তিনি শুধুমাত্র ব্যবহার করেছেন। তার মতে, অন্যদের নাম মাত্র রেখেছেন জায়গাটি কেনার সুবিধার্থে।
গঞ্জপাড়া আল আমিন বারিয়া মাদ্রাসার (এম এ হক) সহকারী শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ট্রেনিং-এ ছিলেন। ট্রেনিং-এ যাওয়ার আগে পুকুর ছিল। এসে দেখি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ পুকুরটি এলাকার একমাত্র পানির উৎস।
অনুসন্ধান বলছে, ভরাট করা পুকুরটির জমির পরিমাণ একশ শতক। যার বর্তমান প্রায় ৮ কোটি টাকা। ভরাটকৃত পুকুরটির একাধিক ওয়ারিশ থাকলেও দুইজনকে ওয়ারিশ দেখানো হয়েছে।
আরেক সূত্র জানায়, পুকুরটি ভরাট করার পর এখন চক্রটির মধ্যে ভাগভাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। সব জায়গা আব্দুল কাইয়ুম তার দাবি করা প্রসঙ্গে, মো: ইব্রাহিম বলেন, পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আমরা কি তাহলে আব্দুল কাইয়ুমের ক্যাডার বাহিনী নাকি?
প্রসঙ্গত, গত ৭ মে বাংলাভিশন ডিজিটাল প্লাটফর্মে ‘একশ শতক পুকুর ভরাট করে জমি বিক্রি,ভাগাভাগি হচ্ছে টাকাও’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। চক্রটি এ নিউজ যারা শেয়ার করেছে, তাদের বাড়ীতে হানা দিয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে,খাগড়াছড়ির ভূমি খেকো চক্রটি খাগড়াছড়ি শহর ছাপিয়ে রাঙামাটি সাজেক পর্যন্ত নিজেদের শক্তির জানান দিচ্ছে। ইমিতধ্যে সাজেকেও গড়ে তুলেছে বিলাল বহুল হোটেল, রিসোর্ট ও রেষ্টুরেন্ট।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: