বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান কি, কেন মুখ খুলছে না নয়াদিল্লি?(ভিডিও)
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে অভূতপুর্ব তৎপর আমেরিকা-ইউরোপিয় ইউনিয়ন। ঢাকায় রাষ্ট্রদুতদের লাগাতারদৌড়জাপের পাশাপাশি একের পর এক উচ্চপর্যায়ের ডেলিগেট এসে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিচ্ছেন। না হলে ভিসানীতি, স্যাংশন এমনকি বিদেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্তের খড়গও আছে আলোচনায়। পশ্চিমারা আদাজল খেয়ে লাগায় যেন হালে পানি পাচ্ছে বিএনপিসহ সরকারি বিরোধী দলগুলো। বিপরিতে আওয়ামী লীগ এসব তৎপরতাকে অযচিত হস্তক্ষেপ হিসাবেই দেখছে।
কিন্তু ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনে অনকটা প্রকাশ্যেই অবস্থান নেয়া ভারত এবার বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যেন মূখে কুলুপ এটেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মূখপাত্র অরিন্দম বাগচীকে সাংবাদিকরা এবিষয়ে জিজ্ঞেস করলেও তিনি এড়িয়েগেছেন বার বার। সংবাদ সম্মেলনগুলোতে নিয়মিত অংশ নেয়া ভারতের জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গৌতম লাহিড়ী বাংলাভিশনকে বলেন, আমেরিকা-ইউরোপ-চায়না ও রাশিয়া বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে কথা বলার পাশাপাশি হুঁমকি দিলেও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দেয়নি। তারমতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে সেটা যাতে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ নাহয় সে বিষয়ে দিল্লি সতর্ক। তবে বাংলাদেশে কোন পুতুল সরকার ভারত চায়না।’
গৌতম লাহিড়ী বলেন, ২০১৪ এবং ১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় ভারত এবার সংযত। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বরাজনীতিকে অনেকখানি পাল্টে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, ভারত তা কমিয়ে আনতে মধ্যস্থতা করবে বলে বিশ্বাস গৌতম লাহিড়ী’র।
কেবল কেন্দ্রীয় সরকার নয় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনারও নির্বাচন প্রসঙ্গ এড়িয়ে যা্চ্ছেন।
তবে সম্প্রতি ওপার বাংলার গণমাধ্যম আনন্দবাজার দাবি করেছে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকায় ভারত খুশি নয়, ওয়াশিংটনকে সে বার্তা পৌঁছে দেয়াহয়েছে। নয়াদিল্লি বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সরকার দুর্বল হলে তা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কারও জন্যই সুখকর হবে না। আনন্দবাজার জানায়, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক এটা ভারতও চায়। কিন্তু যে ভাবে হাসিনা সরকারকে অস্থির করার জন্য আমেরিকা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয়, এমনটাই বার্তা নয়াদিল্লীর।
আন্দবাজারে প্রতিবেদন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ কদিন টক অবদ্যা টাউন ছিল। প্রধান দুই দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছিলো।
তবে আনন্দবাজারের সূত্র উল্লেখ বিহীন সংবাদ ঘিরে উত্তাপ শেষ না হতেই ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ দাবি করেছে, সেপ্টেম্বরে জি-টুয়েন্টি সম্মেলনে যোগ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দু'টি স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় নয়াদিল্লী- যার প্রথমটি হলো, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। আর দ্বিতীয় বার্তাটি হলো- আওয়ামী লীগকে দলের ভেতরে থাকা সব চীন ও ইসলামপন্থি নেতা ঝেড়ে ফেলে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় প্রার্থী বেছে নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বৈঠকের পর এ দুই বিষয়ে নয়াদিল্লী-ওয়াশিংটনের ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানায় পত্রিকাটি। তাদের দাবি, ২০১৪ ও '১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকার বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মত পার্থক্য থাকলেও এবার তা নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের চীন ঘনিষ্ঠতা দিল্লি-ওয়াশিংটনের জন্য সমান উদ্বেগের বলে উল্লেখ করে পত্রিকাটি।
সাংবাদিক গৌতম লাহরি বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত উভয় দেশের জন্যই উদ্ভেগের কারণ। তাই দেশ দুটি চায় বাংলাদেশের চীনের সঙ্গ থেকে বেড়িয়ে আসুক।
দেশটির আরেক প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু’র এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা থেকে বিদায় কেবল ভারতের জন্য উদ্বেগের নয়, এতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহিংসতা ও অস্থিরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নয়াদিল্লিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগ বার্তা দিয়েছে, আঞ্চলিক স্থিতি বজায় রাখতে বিএনপি-জামাত জোট বিপজ্জনক।
নয়াদিল্লি মনেকরে আমেরিকা বাংলাদেশে জামাতকে আস্কারা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র দলটিকে রাজনৈতিক ইসলামিক সংগঠন হিসাবেই দেখলেও ভারত মনেকরে পাকিস্তানের ইশারায় চলা জামাত উগ্র মৌলবাদী সংগঠন। তাই জামাতকে ‘রাজনৈতিক ছাড়’ দিলে সীমান্ত সন্ত্রাস বাড়ার পাশাপাশি চীনের প্রভাব বাড়ার আশংকা দিল্লীর ।
এদিকে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসছে সেপ্টেম্বরে ভারতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন একই মঞ্চে বসবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী। তিন নেতার এই সাক্ষাতে কি আলোচনা হয় তা নিয়ে কৌতুহল থাকবে রাজনৈতিক মহলে।
মোটকাথা, প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভারত আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গেই কাজ করতে স্বচ্ছন্দ। কিন্তু চীনের সঙ্গে চলমান সীমন্ত সমস্যায় বৃহত শক্তিগুলোকে তার পাশে দরকার তাই বাংলাদেশে নিজেদের পছন্দর সরকার চাইতে গিয়ে এবার আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে চটাতে চাইবেনা দিল্লি-এমনটাই মনেকরেন সাংবাদিক গৌতম লাহড়ী।
মন্তব্য করুন: