• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

‘ক্ষুধিত শিক্ষকদের’ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার

প্রকাশিত: ১৭:০১, ৮ মে ২০২৫

আপডেট: ১৭:০২, ৮ মে ২০২৫

ফন্ট সাইজ
‘ক্ষুধিত শিক্ষকদের’ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের কোন একটি দিন। তখন আমাদের বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক/ আলিম পরীক্ষার ফরম পূরণের নির্ধারিত ফি ছিল ৮শ' টাকা বা এর কিছুটা কম-বেশি। কিন্তু তখন নির্বাচনী পরীক্ষায় আমাদের আমরা যারা সকল বিষয়ে কৃতকার্য হয়েছিলাম তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকা। যা বোর্ড থেকে নির্ধারিত ফি থেকে প্রায় ৫গুণ বেশি। আর যারা নির্বাচনীতে সকল বিষয়ে কৃতকার্য হতে পারেনি তাদের জন্য আরো বেশি। 

আমি তখন ৩ হাজার টাকা মাদরাসায় জমা দিয়েছিলাম। এরপর পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগের দিন আমি প্রবেশপত্র চাইতে গেলে ৫শ' টাকা আদায়ের জন্য আমার প্রবেশপত্র আটকে দেয়া হলো। তখন আমার কাছে বাড়ি যাওয়ার ভাড়ার টাকা ছাড়া কোন টাকাই ছিল না। আজ প্রবেশপত্র না পেলে কাল পরীক্ষা দিতে দেয়া হবে না। ৩-৪ ঘণ্টা আমি মাদরাসার বারান্দায় ঘুরেছি, কেউ আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। এক পর্যায়ে আমি অসহায় হয়ে বারান্দার একপাশে বসে কান্নাকাটি শুরু করেছি। তবুও সেদিন প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ কোন শিক্ষকের হৃদয় গলেনি। অথচ আমাদের কাছ থেকে তখন টাকাটা নেয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ অন্যায় ও অবৈধভাবে। 

পরে আমার এক বন্ধু তার পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য রাখা গাড়ি ভাড়ার টাকা থেকে সে অবৈধ ও অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করে সেদিন আমাকে জিম্মিদশা উদ্ধার করে। অথচ তখন আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রধান ছিলেন সে এলাকার অন্যতম জনপ্রিয় ওয়ায়েজ। বিভিন্ন মাহফিলে তিনি মানুষের হেদায়াতের জন্য ওয়াজ-নসিহত করতেন। 

এর আগে আমাদের মাদরাসার উপধ্যক্ষের সঙ্গে একদিন বাজারে সাক্ষাত হয়। তখন বাজারের কোলাহলের মধ্যে আমি তাকে সালাম দিলেও তিনি হয়ত শুনতে পাননি। পরবর্তীতে তিনি তাকে সালাম না দেয়ার অপরাধে আমাকে মাদরাসার অফিসরুমে ডেকে নিয়ে সকল শিক্ষক-কর্মচারির সামনে লাঞ্চিত করেন এবং মারধর করেন। অথচ রাসুল (স:) বলেছেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম দেবে সে ব্যক্তি অহংকার থেকে মুক্ত। তোমাদের দু'জনের মধ্যে যখন সাক্ষাত হবে তখন একে অপরকে সালাম দেবে। সাক্ষাতের পর সালাম দেয়ার এক মুসলমানের প্রতি আরেক মুসলমানের অধিকার। 

রাসুল (স:) এর সালামের বিধান অনুসারে সেদিন আমি সালাম না দিলেও তিনি আমাকে সালাম দিতে পারতেন। কারন ছাত্র হলেই শিক্ষককে সালাম দিতে হবে বা শিক্ষক হলে ছাত্রকে সালাম দেয়া যাবে না এমন কোন কিছু সালামের বিধানের মধ্যে নেই। 

আবার ২০২০ সালে যখন সারা বিশ্বের মানুষ করোনা মাহামারির ছোবলে দিশেহারা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানে টাকার জন্য আমাকে পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয়নি। মূলত টাকা উপার্জনের জন্যই মহামারির মধ্যেই তখন পরীক্ষার আয়োজন করেছিলেন শিক্ষকরা। সারা দেশের মানুষ যখন অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন টাকা দিয়ে পরীক্ষা দেয়া এটাই হলো আইন। তাদের আইনের কাছে সেদিন আমার আর্থিক সংকট, অসহায়ত্ব ও মানবিকতা হেরে গিয়েছিল। 

আজকে যখন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করাচ্ছেন তখন অনেকেই শিক্ষকদের কদর ও সম্মান শেখাচ্ছেন। শিক্ষাগুরুর মর্যাদার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আমার জীবনে সর্বপ্রথম প্রতারণা, বাটপারি, অন্যকে ঠকানো এবং চুরি শিখেছি শিক্ষকদের কাছ থেকেই। শিশু অবস্থায় সবার হৃদয় সরল-সহজ ও কোমল থাকে। একইভাবে আমার অন্তরেও শিশু অবস্থায় কোন জটিলতা ছিল না। শিক্ষকদের কাছ থেকেই বিভিন্ন ভাবে আমাদের অনেকেরই অপকর্মের হাতেখড়ি। 

লেখক: মুখপাত্র. মুক্ত গণমাধ্যম মঞ্চ

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: