• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১১ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ইসরাইল-হামাসের সামনে কোন দুনিয়া?  

মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিকী তালুকদার 

প্রকাশিত: ১০:০০, ১২ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ১০:০৪, ১২ অক্টোবর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ইসরাইল-হামাসের সামনে কোন দুনিয়া?  

বৈশ্বিক মহামারি করোনা, রুশ-ইউক্রেন, আর ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের আপদে ভারাক্রান্ত গোটা বিশ্ব। এরইমধ্যে বিশ্ববাজারে আবার চড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। তা ইসরাইল-হামাস পাল্টাপাল্টি হামলা ও প্রাণহানির ২৪ ঘণ্টা না যেতেই। ইসরাইল ও ফিলিস্তিন তেল উত্তোলন ও পরিবহনে না থাকলেও সহিংসতার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে ওপেক জোটভুক্ত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও। সোমবার এশিয়ার বাজারে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের সরবরাহ করা তেলের দাম ব্যারেল প্রতি চার শতাংশ বা ৮৬ মার্কিন ডলার বেড়েছে। ব্রেন্টের অপরিশোধিত তেলে বেড়েছে প্রায় পাঁচ শতাংশ, আটাশি দশমিক সাত ছয় ডলার। অথচ গত সপ্তাহজুড়েই কমতির দিকে তেলের মজুদ, যা গত মার্চের পর সর্বনিম্ম। সামনে কেবল তেল নয়, বিশ্ব কূটনীতি-অর্থনীতি কোন দিকে মোড় নেবে, কোন দুনিয়া দেখবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ববাসী?  

ইসরাইলের ভেতরে হামাসের হামলাকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নিন্দা জানালেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসী। হামাসের নজিরবিহীন হামলার শোধ নিতে গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। "কোন ধরণের আগাম সতর্কতা ছাড়াই এফ-সিক্সটিন বিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে বাধা তৈরির অভিযোগ উঠেছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। এতে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। ধারাবাহিক বিমান হামলার জবাবে গাজা থেকে ইসরাইলের দক্ষিণের শহর আশকেলনে রকেট হামলা হয়। আগুন ধরে যায় কয়েকটি ভবনে।

হামাসের শনিবারের হামলার পর ইসরাইলে দক্ষিণাঞ্চলে একটি সংগীত উৎসবের ভেন্যু থেকে অন্তত আড়াইশ'র বেশি মানুষের লাশ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে তেল-আবিব। এমন পরিস্থিতিতে গাজা সীমান্তবর্তী এলাকায় কমপক্ষে এক লাখ রিজার্ভ সেনা মোতায়েন করেছে ইসরাইল। হামাসের নজিরবিহীন অভিযানের সমালোচনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নেতার সরব বক্তব্য দিলেও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসী। তেহরানে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি জানান, হামাসকে দেয়া প্রশিক্ষণ ও সমরাস্ত্র সরবরাহের মাত্রা দ্বিগুণ করা হবে। 

এদিকে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে হামাস বিরোধী জোরালো অবস্থান তুলে ধরেছে ওয়াশিংটন। হামাসের হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলেছেন ইসরাইলের প্রতিনিধি। উত্তাল-ঘোলাটে এমন পরিস্থিতিতে তেল আবিবকে আশ্বস্ত করে বিমানবাহী রণতরীসহ একাধিক যুদ্ধজাহাজ ইসরাইল উপকূলে মোতায়েন করতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

হুট করে ঘটেনি এতো কিছু। কয়েক মাস ধরে ইসরাইলের অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা অত্যাচার ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছিল। ফিলিস্তিনিদের ওপর আর এসব অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পর গাজার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। অন্যদিকে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ বাড়ছিল। আর এসব চাপের মধ্যেই সবাইকে চমকে দিয়ে  ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে তারা। 

গত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলে চালানো হামাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার প্রধান লক্ষ্য ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-অরোরি বলেছেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য তাঁর দল যুদ্ধ শুরু করেছে। আর এই যুদ্ধের সবচেয়ে খারাপ পরিণতির জন্যও প্রস্তুত রয়েছে হামাস। 

এত খ্যাতি, নিরাপত্তা ও নজরদারি সরঞ্জাম থাকার পরও ইসরায়েল কেন হামাসের হামলার বিষয়ে আগাম আঁচ করতে পারল না, এ প্রশ্ন ঘুরছে। এ নিয়ে কি আগাম তথ্য ছিল না? বলা হয়ে থাকে, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সক্রিয় ও চৌকস গোয়েন্দা সংস্থা হচ্ছে ইসরাইলের। অঞ্চলটিতে গোয়েন্দাদের পেছনে ইসরায়েলের মতো এত বেশি অর্থ অন্য কোনো দেশ ব্যয় করে না। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী, লেবানন, সিরিয়া ছাড়াও অন্যত্র তাদের গুপ্তচর ও তথ্যদাতা আছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, শিন বেত ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দাদের কেউই জানতো না, হামাস এ ধরনের একটি হামলা করতে যাচ্ছে? ইসরায়েলিদের কাছে এটা খুবই অবাক করার মতো বিষয়। নাকি গোয়েন্দাদের কেউ কেউ হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য পেলেও সে অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন? –এসব প্রশ্নের জবাব পেতে আরো বহু সময় চলে যেতে পারে। তবে, পেছনের কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণে এসব প্রশ্নের কিছু জবাব মিলতে পারে। 

নরওয়ের রাজধানী অসলোতে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে এবং ওই চুক্তির জন্য তখনকার পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন নোবেল শান্তি পুরষ্কারও পেয়েছিলেন। এ চুক্তিও কাঙ্ক্ষিত সফলতা এনে দিতে পারেনি বরং উভয়পক্ষ একে অপরকে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করে প্রায়শই হামলা-পাল্টা হামলায় লিপ্ত হয়েছে। তবে ওই চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছিল এবং কথা ছিল পরবর্তী পাঁচ বছর এ কর্তৃপক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে সংঘাত নিরসনে আলোচনা চালিয়ে যাবে ও অন্য বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। পরে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের জায়গায় একটি নির্বাচিত সরকার সেখানকার ক্ষমতায় আসার কথা, যারা পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা মিলিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। ফিলিস্তিনিদের দাবি ছিল, তাদের এই স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুসালেম, যদিও এই বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কখনো সমঝোতা হয়নি।

ওই চুক্তিতে ফিলিস্তিনিরা স্বশাসনের আংশিক অধিকার পাবে, ইসরায়েল প্রথমে পশ্চিম তীরের জেরিকো এবং পরে গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে- এ ধরনের কিছু সমঝোতা হয়। কয়েক দশকের সংঘাতের শেষে এই সমঝোতাকে তখনকার প্রেক্ষাপটে বিরাট সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। সেই শান্তি চুক্তির পর থেকে গত তিন দশকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সঙ্কট ভেতরে-ভেতরে আরো শানিত হয়েছে। অসলোতে শান্তি চুক্তি হলেও কয়েকটি বিষয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল কখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি এবং এগুলোকে কেন্দ্র করেই বারবার সংঘাত সহিংসতা হয়েছে উভয় পক্ষের মধ্যে। এখন বা সামনে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়ে কী হবে? পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি থাকবে কি-না? 

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: