• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১১ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

খাই-খাই মহামারির ওষুধ কই? 

এস এম তানবীর আলম সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ২২ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ১৯:১৫, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
খাই-খাই মহামারির ওষুধ কই? 

এস এম তানবীর আলম সিদ্দিকী

অভাব-অনটনের কারণে কৃচ্ছতাসাধনের আহ্বানের মাঝেও প্রশাসনকে প্রনোদিত রাখার কোনো কমতি নেই। অনুমোদিত পদ না থাকলেও পদোন্নতিসহ সুযোগ-সুবিধার অংশ হিসেবে এবার প্লট দেয়া হচ্ছে সচিবদের। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিবসহ ১৮ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব প্লট উপহার পাবেন রাজধানীর অভিজাত আবাসিক প্রকল্প পূর্বাচলে। ডিসি-এসপি- ইউএনওদের উপহারের তুলনায় সচিবদের এ প্রাপ্তি বেশি নয়। ডিসি এবং ইউএনওরা বিলাসবহুল গাড়ি পেলে সচিবরা হেলিকপ্টারের হকদার। সেই তুলনায় তাদের সামান্য বা একটি করে প্লট বরাদ্দটা এক অর্থে কমই।

 

গত মার্চে কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে নতুন গাড়ি কেনা যাবে না বলে সরকার পরিপত্র জারি করলেও মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। শুরু হয় মাত্র ৩৮০ কোটি টাকায়  ডিসি-ইউএনওদের জন্য বিলাসবহুল ২৬১টি গাড়ি কেনার তোড়জোর। আইনমন্ত্রী ডেমকেয়ারে সাংবাদিকদের বলে দিয়েছেন, যাঁদের জন্য নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে, তাঁরা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। কথা একদম পরিস্কার। মানে যে যেখান দিয়ে যা পারবে গিলে খাবে। তা রিজার্ভে যতো টানই থাক, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যতো খারাপই হোক, বাজারে গিয়ে সাধারণ মানুষের যতো নাভিশ্বাসই উঠুক। এই খাই খাই রোগ ও রোগ রাজধানী থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। তাহলে মাত্র সাড়ে ১১ কোটি টাকা খরচ করে পানি সরবরাহের জ্ঞান নিতে ৩০ কর্মকর্তা বিদেশ যাবেন না কেন? পরমাণু শক্তি কমিশনের ৩০ কর্মকর্তার পানি সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ ভ্রমণও অপরিহার্য।  


সেভাবে অপরিহার্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাচ্চাদের ওজন মাপার সাড়ে সাত হাজার টাকার স্কেল ঠিক করতে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯০০ টাকা ব্যয়ও । কেনা দামের চেয়ে মেরামতে ৫৪ গুণ বেশি । এতো সুন্দর করে খেতে পারা একটি বিশাল যোগ্যতা। সরকারি বিশাল অংকের টাকায় বিদেশ ভ্রমণ, বালিশ কেনা, পুকুর কাটা শেখা, এইরকম হাজারো খরচ করতে বুকের পাটা লাগে। পুকুর চোর এদের কাছে তুচ্ছ। সাগর চুরিতেও এরা রেকর্ডধারী। সরকারের অন্যতম ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গৃহহীনের গৃহদান প্রজেক্ট খেয়েছে কেউ কেউ। কবর খেতেও না লাজ, না ভয়। তা’হলে মসজিদই বা বাকি থাকবে কেন? দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি হিসেবে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে তারা কি-না করেছে! তা ধরা পড়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে নির্মাণ পর্যন্ত পরতে-পরতে খাই-খাই। 


মসজিদ-মন্দির, কবর আর শ্মশান সেই ভাবনা চোরদের থাকে না। মৃতকে জীবিত বা পুরুষকে নারী, তাও বিধবা বানালেও গুনাহ না হওয়ার একটা গ্যারান্টি তারা হাছিল করেছে। দুস্থ ও পিছিয়ে পড়াদের প্রশিক্ষণে ৫০৩ কোটি টাকার পকল্পে নয়-ছয় করতে তাদের বাধবে কেন? কেনই বা দুনিয়া-আখেরাতের ভয় পাবে? প্রকল্পগুলোর উদ্দেশ্য শোনানো হয় কতো চমৎকার করে। বাড়ির আঙিনায় ‘গ্রিনহাউসে’ কীভাবে সবজি চাষ করা যায়, তার প্রশিক্ষণ দিতে সরকারের কাছ থেকে ৪৯ কোটি টাকা নিয়েছিল প্রগতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা। কথা ছিল, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাঁরা পাবেন ৩০ হাজার টাকা দামের একটি করে গ্রিনহাউস। তাতে সবজি চাষ করে নারীরা স্বাবলম্বী হবেন। বাস্তবে কী হয়েছে? 


বিধবা বা স্বামী নিগৃহীত নন-এমন নারীকে সামনে এনেও যা করার করে নিয়েছে খাই-খাই রোগীরা। করোনাকালে দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি ও স্বাবলম্বী করে তোলার নামে এমন ২১টি প্রকল্পে সমাজসেবা অধিদপ্তর ৫০৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ১৩টি প্রকল্পের কাজ শেষ, ৮টির কাজ শেষের পথে। সেগুলোতেও অবিশ্বাস্য চুরি, দুর্নীতি, অনিয়ম পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত এনজিওগুলোর কোনো কোনোটির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, চলচ্চিত্রের অভিনেতাসহ প্রভাবশালীরা।

 

২১টি প্রকল্পের ৭টিই একক অথবা যৌথভাবে গেছে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নির্বাচনী এলাকা লালমনিরহাটের আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায়। জামালপুর ও গোপালগঞ্জে বাস্তবায়ন হয়েছে তিনটি করে। দেশে সবজি চাষে বিস্ময় তৈরির আওয়াজে অবিশ্বাস্য কাণ্ডকীর্তি সেরে নেয়া হয়েছে এ ধরনের প্রকল্পে। সুফলভোগী হিসেবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকায় থাকা ৩১ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের একজন শুধু গ্রিনহাউস পেয়েছেন। তবে ব্যবহার করেন না। বিধবা বা স্বামী নিগৃহীত নারীদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকায় শিক্ষার্থী ও সচ্ছল ব্যক্তির পাশাপাশি রয়েছেন পুরুষও। দুস্থ, বিধবা, বেকার, প্রতিবন্ধী, হিজরাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের নামে এসব দুস্কর্মে খোদার আরশ কি কাঁপছে? দুস্কর্মের হোতাদের কাছে তা খোদার আরশ দূরে থাক, চকি কাঁপার মতো অপরাধ নয়। 

লেখক : সম্পাদক বাংলাপোষ্ট

মন্তব্য করুন: