• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১১ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

৫০ হাজার বৈধ অস্ত্র ব্যবহার হয় কোন কাজে?

মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিকী তালুকদার

প্রকাশিত: ১৫:০৭, ২১ নভেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১৫:০৮, ২১ নভেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
৫০ হাজার বৈধ অস্ত্র ব্যবহার হয় কোন কাজে?

ময়মনসিংহের নান্দাইলে আওয়ামী লীগের মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শন করেন সেখানকার সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের জামাতা জাহিদ হাসানের দেহরক্ষী কামরু

বরাবর বেখবরেই থাকে দেশের বৈধ অস্ত্রগুলো। বৈধ অস্ত্র দিয়ে কোথাও কোনো অবৈধ বা অঘটন ঘটে বসলেই কেবল কয়েকদিন টুকটাক আলোচনা হয়। এছাড়া, দেশে বৈধ অস্ত্রের হিসাব জানা যায় সাধারণত নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে। তখন অস্ত্রগুলো কয়েকদিন প্রশাসনের কাছে জমা রাখতে হয় হিসাবটা জানা যায়। কিছু আলোচনা হয়। এবারও হবে। 
কিছু শর্তে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার রীতি দেশে বহু আগ থেকেই চলে আসছে। আর অস্ত্র মানে আগ্নেয়াস্ত্র।  আইনের ভাষায় একে বলা হয় বৈধ অস্ত্র। কারো জীবনের ঝুঁকি থাকলে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন করা যায়। বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৭০ বছর । তাকে বা তাদেরকে লাইসেন্স  দেয়া না দেয়া প্রশাসনের বা সরকারের এখতিয়ার। নানান কিছু তদন্ত ও পর্যবেক্ষণ করে প্রশাসন ঠিক করে কাউকে লাইসেন্স দেয়া  যাবে কিনা?


আর বাস্তবতা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন ঘরানার হলে এ অস্ত্র পাওয়া কঠিন নয়। তাই বলে তারা কি  জীবনের ঝুঁকিগ্রস্ত? এর চেয়েও গুরুতর প্রশ্ন: এসব অস্ত্র দিয়ে তারা কী করেন? কোন কাজে লাগান? বৈধ কাজে না না অবৈধ কাজে? কার অস্ত্র কার কাছে থাকে, কোন কাজে ব্যবহার হয়, সেই খোঁজও থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রগুলো তেমন বৈধ কাজে খাটানো হয় না। কারো কাছে এ অস্ত্র ভাব-আভিজাত্য-গরিমার বিষয়। ভাব দেখানোর পাশাপাশি প্রতিপক্ষ বা বিরোধীদের ভয়ভীতি দেখানোর মতো অবৈধ-অনৈতিক কাজে লাগানো হয়।  কখনো কখনো যার নামে অস্ত্রের লাইসেন্স তার কাছে সেটি থাকেও না। সেটি ব্যবহার করেন তার বিশেষ পছন্দের কেউ। এছাড়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা দলীয় কোন্দলে এসব লাইসেন্সধারী অস্ত্রও ব্যবহার হয়।  এসব অস্ত্রের অপব্যবহার হলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হয় না। বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার যেমন হচ্ছে, তেমনি বৈধ অস্ত্রের দোকানের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র বিক্রির ঘটনাও ঘটছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বৈধ অস্ত্রের পরিচিতিমূলক কোড নম্বর ও কোম্পানির নাম মুছে বেশি মূল্যে বিক্রি করছে পিস্তল, রিভলবারসহ ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র থেকে শুরু করে একে-৪৭-এর মতো মারাত্মক অস্ত্র। দেশে ৮৪ জন বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা অস্ত্র আমদানি করেন। আবার কেউ কেউ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ করেন। কোনো কোনো অস্ত্র ব্যবসায়ী অস্ত্র সংগ্রহের সময় চাহিদাপত্রের বাইরে অস্ত্র কিনে থাকেন। অতিরিক্ত এই অস্ত্রের লিখিত দলিল গোপনই থাকে। 


গত বছর কয়েক ধরে এই প্রবণতা বেড়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। ময়মনসিংহের নান্দাইলে আওয়ামী লীগের মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শন করেন সেখানকার সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের জামাতা জাহিদ হাসানের দেহরক্ষী কামরুজ্জামান।  জাহিদ হাসানের নামে অস্ত্রটির লাইসেন্স নেয়া হয়েছে ঢাকা থেকে। সেদিন মিছিলের অগ্রভাগে জাহিদ তার স্ত্রী ওয়াহিদা ইসলামকেও সাথে রাখেন। এর আগে, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিল করে আলোচনায় আসেন সেখানকার এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন দমাতে ক’দিন আগে ঢাকা  মিরপুরের পল্লবীতে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মাঠে নামেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন ওরফে লাক্কু। তার নামে আরেকটি  অস্ত্রের লাইসেন্স আছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। সেদিন তিনি যে অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন, সেটি বৈধ না অবৈধ, তা জানার দরকার মনে করেনি পুলিশ।


মাঝেমধ্যে অঘটনের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে বা ঘটনা মিডিয়ায় প্রচার হয়ে গেলে প্রশাসন বৈধ অস্ত্রের ব্যাপারে কয়েকদিন তোড়জোর চালায়। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। মানুষও ভুলে যায় ওইসব ঘটনা। পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবির তথ্যভান্ডার বলছে, দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫১ হাজারের কাছাকাছি। পিস্তল, রিভলবার, একনলা-দুনলা বন্দুক, শটগান,  রাইফেল মিলিয়ে এগুলোর মধ্যে ৪৫ হাজার ২২৬টি বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে। বাকিগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে। ব্যক্তির কাছে থাকা অস্ত্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হাতে আছে সাড়ে ৭ হাজারের ওপরে। আর বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে আড়াই হাজারের বেশি। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে ৭৯টি।


অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি করে ভয় দেখানো হলে ওই অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা আছে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গের ঘটনা ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলেও দৃষ্টান্ত খুব কম। অস্ত্রগুলো কোথায়, কে কোন কাজে ব্যবহার করেন সে সবের তদারকিও হয় না । কেবল নির্বাচন এলেই বৈধ অস্ত্র কিছুদিন জমা নেয়া হয় জেলা প্রশাসনের কাছে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির শর্ত ও নীতিমালায় বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা দলীয় কোন্দলে লাইসেন্সধারী অস্ত্রও ব্যবহার হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। প্রশ্ন উঠছে, কাউকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার আগে তার যোগ্যতা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে কি না। কিংবা লাইসেন্স পাওয়ার পর ছয় মাস অন্তর পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তা আদৌ হচ্ছে কি না। অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার পর অস্ত্র রাখার যোগ্যতা তার আছে কি না, সেটিও দেখা হয় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে (চলতি বছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত) সারাদেশ থেকে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ভীতির সঞ্চার, প্রভাব বিস্তারে প্রদর্শনী, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি ও হত্যাকাণ্ডসহ আধিপত্য বিস্তারে লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু, বিহিত ব্যবস্থা নেয়ার খবর নেহায়েত কম। 


 লেখকঃ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলাপোষ্ট 

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

মন্তব্য করুন: