• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সংসদ সদস্যদের প্রতি খোলা চিঠি: ‘উন্নয়ন হোক পরিকল্পিত টেকসই’

মাঈন উদ্দিন

প্রকাশিত: ১২:৩৫, ১৫ মার্চ ২০২৪

ফন্ট সাইজ
সংসদ সদস্যদের প্রতি খোলা চিঠি: ‘উন্নয়ন হোক পরিকল্পিত টেকসই’

মাঈন উদ্দিন

* চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে ফেনীতে মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়ন জরুরি।

* ফেনী ও আশপাশের নাগরিকদের শিক্ষায় এগিয়ে দিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। 

* ফেনীতে মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন যুগের পর যুগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, যা সরকারের চলমান মেয়াদেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়। টেকসই উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী সুফল নিশ্চিত করে। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম প্রধান মাপকাঠি হিসেবে স্বীকৃত হলেও এটা নিয়ত পরিবর্তনশীল।

আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী গাড়িসমূহ ছাগলনাইয়া-শুভপুর-বারইয়ারহাট হয়ে চলাচল করত। কালের বিবর্তনে ঢাকা-চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটে। নিত্য নতুন সংযোগ সড়কের মাধ্যমে এটি একটি মহাসড়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়। পূর্বের ন্যায় ছাগলনাইয়া-শুভপুর-বারইয়ারহাট রুট এর পরিবর্তে মহাসড়কের সরল গতিপথ এখন ফেনীর মহিপাল দিয়ে অতিক্রম করে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় ৬ টি বৃহৎ জেলাকে একমাত্র বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় সংযুক্ত করেছে। 

খুব সহসা এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অতি আধুনিকতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গতিপথ মহিপাল থেকেও সরে যেতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে চলমান এ পরিবর্তনের ধারা আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে। 

জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম আরেকটি স্বীকৃত স্তম্ভ হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত। নিশ্চল, অবিচল রূপে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ সভ্যতার আদি আর অন্তকে একই রূপে ধারণ করে আছে। যতদিন সভ্যতা ও পৃথিবী থাকবে ততদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও অভিন্ন রূপে বিদ্যমান থাকবে। ইউরোপ তথা শিল্পোন্নত জাতি সমূহের ইউনিভার্সিটিগুলোর যাত্রা শুরু হয় মধ্যযুগে। পৃথিবীর অন্যতম সুপরিচিত ও সুপ্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল দ্বাদশ শতকে। বহু প্রজন্মের ধারক কালোত্তীর্ণ এসব প্রতিষ্ঠান আজ অবদি উচ্চ শিক্ষার সূতিকাগার হিসেবে খ্যাতিমান।

আমাদের ফেনী জেলায় ১৯২২ সালে স্থাপিত ফেনী সরকারি কলেজ জেলার শিক্ষাঙ্গনে অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আজও স্ব-গর্বে দণ্ডায়মান। ফেনী জেলার শিক্ষাঙ্গনে কালজয়ী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের অন্যতম প্রাপ্তির স্বীকারোক্তি হলেও দীর্ঘ ১০০ বছরের ব্যবধানে এ জেলায় এখন পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে সরকারি কোনো উদ্যোগ গৃহীত হয়নি, স্থাপিত হয়নি কোনো পাবলিক ইউনিভার্সিটি কিংবা সরকারি মেডিকেল কলেজ। এ ঐতিহাসিক ব্যর্থতার দায়ভার মোচনে ফেনীবাসী এখন ফেনী জেলার অভিভাবক ও নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকগণের মুখাপেক্ষী।

সংসদ সদস্য ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক হিসেবে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ তিনজন সংসদ সদস্যই নিজ নিজ অঙ্গনে সুকৌশলী ও প্রভাব বিস্তারে পারঙ্গম, যাদের অদৃশ্য রথ ফেনীতে পাবলিক ইউনিভার্সিটি ও সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে অনায়াসে।

নিকট অতীতে ফেনী জেলায় ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ ও কম্পিউটার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এক সময়ে ফেনীর এ অঞ্চল থেকে ক্যাডেট কলেজে তেমন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে না পারলেও ফেনীতে স্টার লাইন ক্যাডেট কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চল থেকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য অধিক হারে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। 

আমাদের সম্মিলিত ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুব দ্রুত অর্থ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সবধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় ত্বরান্নিত হবে এবং ফেনীতে একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি ও একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কার্যকরী উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখবে নিঃসন্দেহে।

বর্তমানে দেশে ৫৪টি পাবলিক ইউনিভার্সিটি ও ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ৬টি মেডিকেল কলেজ। ইত্যবসরে কুড়িগ্রাম, পিরোজপুর ও সুনামগঞ্জ জেলায় ১টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ২টি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। 

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার একাধারে প্রায় ১৫ বছর দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে এবং বর্তমান মেয়াদে আগামী ২০২৮ সাল পযন্ত সরকারের মেয়াদ বহাল থাকবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্যতীত স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এত দীর্ঘ সময় কোনো রাজনৈতিক দল একনাগাড়ে সরকার ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিল না। এ দুর্লভ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য বিশ্বজুড়ে আলোচিত। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা কর্ণফুলী টানেল এর মতো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিষয়টি এখন প্রশ্নাতীত। এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদী সরকারের অধীনে ঐতিহাসিক জনপদ ফেনী জেলায় পাবলিক ইউনিভার্সিটি ও সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের ব্যর্থতা হবে হতাশাজনক। 

ঐতিহাসিক জনপদ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা শহীদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী, নাট্যকার, সাংবাদিক, মানবধিকারকর্মী, শিক্ষাবীদ, অর্থনীতিবিদ ও রাজনিতীবিদসহ অসংখ্য গুণিজনের পদচারণায় অলংকৃত হয়েছে ফেনী জেলা। 

শীর্ষস্থানীয় রেমিট্যান্স উপার্জনকারী জেলা হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে ফেনী জেলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব সর্বজন বিদিত। অপার সম্ভাবনাময় এ ঐতিহাসিক জনপদের অদূরেই গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম শিল্প পার্ক বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ভৌগলিক গুরুত্ব, স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক ও অর্থনৈতিক মজবুতি, উত্তরোত্তর ব্যবসায়ীক সমৃদ্ধি, জনসংখ্যার ঘনত্ব, চট্টগ্রাম কিংবা কুমিল্লার বিভাগীয় পট পরিবর্তন, বিভিন্ন মানদণ্ডে ফেনী জেলায় উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে পাবলিক ইউনিভার্সিটি ও সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের এখনই উপযুক্ত সময়।

সমসাময়ীক বহু উত্থান-পতন ও সাফল্য-ব্যর্থতার মধ্যেও বিশ্ব অর্থনীতির গ্লোবাল ইনডেক্সে বর্তমানে বাংলাদেশ ৩৫তম অবস্থানে রয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। 

আগামী দিনে জাতীয় অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের প্রতিযোগিতায় যোগ্য প্রতিযোগী হিসেবে অবতীর্ণ হতে নিজ জেলায় মান সম্পন্ন ও সহজলভ্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগের দাবিতে ফেনীবাসী সোচ্চার থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

লেখক: মাঈন উদ্দিন, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক স্টার লাইন
 

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: