• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

মানুষের কৃতকর্মে বিষাক্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী

মো. বেল্লাল হাওলাদার

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ফন্ট সাইজ
মানুষের কৃতকর্মে বিষাক্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী

ভালো নেই দেশের মানুষ। একদিকে তীব্র রোদ আর প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ, গরমের মধ্যে বাহিরে কাছে বের হওয়া অনেক লোক হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। আরেক দিকে প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় অনলাইনে খবর ভেসে বেড়াচ্ছে খুন, ধর্ষণ। প্রকাশ্য অশ্লীলতা, অমানবিকতা, অন্যায়, দুর্নীতির খবর। সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রাণ ঝরেছে। দুর্ঘটনায় মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হচ্ছে সন্তান। দিশেহারা মা-বাবা সন্তানকে হারিয়ে।

 

ছেলে নেশার টাকা না পেয়ে জন্মদাত্রী মাকে মারধর, অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাবা ছেলেকে মেরে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় অহরহ ঘটছে অনেক প্রাণহানির ঘটনা। মাদকের টাকার জন্য ছেলে মা-বাবাকে খুন করছে। কি অমানবিক, কি নির্মম ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটা পাপে জর্জরিত। এভাবেই কি পৃথিবী ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ধ্বংসের দিকে! 

মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি না খোশ হয়ে মাঝেমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে ফেলেন যাতে কেয়ামতের যে কঠিন ও ভয়ংকর শাস্তি তা একটু হলেও মানুষ অনুধাবন করতে পারে। শুক্রবার মসজিদে ইমাম সাহেব খুৎবায় বলেছেন, ‘জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা মাঝেমধ্যে বেড়ে যায় সে আগুন দুনিয়ায় নিঃশ্বাস ফেলে, যার ফলে দুনিয়ায় তীব্র গরমের সৃষ্টি হয়।’ দুনিয়ার এই গরমের থেকে জাহান্নামের গরম ৭০ হাজার গুণ বেশি। এই দুনিয়ার গরম আমরা সহ্য করতে পারি না, তাহলে কিভাবে জাহান্নামের আগুন সইবো!

মহান আল্লাহর সৃষ্টির আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে সব থেকে বেশি জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা মানুষকে দান করেছেন। স্বাধীনতা দিয়েছেন, ভালো মন্দ পরখ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। দুনিয়া এবং আখেরাতের সম্পর্কে প্রতিটি মানুষ জানেন এবং বোঝেন, তারপরও মানুষ মন যা চায় তাই করে!
লোভ-লালসা-কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার শয়তানি বুদ্ধি কিছু মানুষকে প্রতি মুহূর্তে প্ররোচিত করতে থাকে। মানুষকে যদি মহান আল্লাহ স্বাধীনতা না দিতেন তাহলে এত অন্যায়, ব্যভিচার, খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, হিংসা বিদ্বেষ, লোভ- লালসা, ফেৎনা-ফ্যাসাদ থাকতো না। নিষ্পাপ মানুষ নশ্বর পৃথিবীতে বসবাস করত আল্লাহর এবাদত বন্দেগীতে।

যেন মানুষের কৃতিকর্মে পৃথিবীর বাতাস ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠছে। যার ফলশ্রুতিতে যে গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে তাতে অচিরেই বিশ্ব ভয়াবহ সংকটে পড়তে পারে। 

পানি খেয়ে তৃষ্ণা মিটাবে সে পানিও প্রচন্ড রোদের তাপে গরম। তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে বেঁকে যাচ্ছে রেলের পাত। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গরমের মাত্রা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাইরে বের হওয়া মানুষগুলোর কাছে দিনের বেলায় সব কিছুই ফুটন্ত কড়াইর মতো। শুধু মানুষ নয়, হাঁসফাঁস অবস্থা প্রাণ প্রকৃতিরও। অসহনীয় গরম আর অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি কামনায় মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করে বিশেষ মোনাজাত করা হচ্ছে। তারপরও বৃষ্টির আভাস পাওয়া যায়নি। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে মে মাসের ২/৩ তারিখ থেকে ঝড় বৃষ্টিতে সম্ভাবনা রয়েছে। মহান আল্লাহ সহায় হলে  এই অশান্ত অস্থির পৃথিবীকে রহমতের বৃষ্টি দিয়ে ধুয়ে মুছে দিতে পারেন।

গাছ-গাছালি, নদ-নদী, খাল-বিল মহান আল্লাহর অনিন্দ্য সৃষ্টি। গাছের সঙ্গে মানুষের জীবন-প্রভাব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাণিদের বেঁচে থাকার জন্য গাছের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যিক। কারণ, সবুজ পাতায় ছেয়ে থাকা বৃক্ষ প্রাণে শিহরণ জাগায়। শহরে কিংবা গ্রাম্য রাস্তায় রিকশা-ইজিবাইক, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানরিকশা নিয়ে বের হয়ে যারা ঘেমে একাকার হয়ে যায়, একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে থাকে। ঝিরঝির হিমেল বাতাসে দেহ-মন জুড়িয়ে আসে। অথচ আমরা সেগুলো দিন দিন ধ্বংস করে দিয়েছি। যার ফলে, দেশে দিন দিন নদ-নদীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে, ভরাট করে সবুজ কর্তন করে গড়ে উঠেছে শহর। শহরের জলধরগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। মাঠ ও পার্কগুলো যেভাবে দখল হচ্ছে এতে সবুজের পাশাপাশি ওপেন স্পেস কমে যাচ্ছে।

রাজধানী ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী এখন প্রাণহীন। স্বচ্ছ পানির কল কল ঢেউ আর নদীর বুকে দেখা যায় না। কালো দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত পানির এক নিথর মরা নদী বুড়িগঙ্গা। নাব্য সংকট, বিভিন্ন কল-কারখানা ও ট্যানারির দূষিত বর্জ্য, অবৈধ দখল, ঘর গৃহস্থালীসহ অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা স্তুপ করে নদীতে ফেলা ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত বুড়িগঙ্গা এখন দূষিত বাঘার। সেই সাথে এক সময়ের প্রাণচঞ্চল স্রোতস্বিনী নদী এখন প্রাণহীন এক মরানদীতে পরিণত হয়েছে। এভাবে দেশের অনেক নদ-নদী হারিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে গীষ্মের উষ্ঞতা শুষে নেয়ার মতো জলাধার থাকছে না।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ আরেক বড় সমস্যা। একটি বিল্ডিংয়ের ঘাগেসে আরেকটি বিল্ডিং, এতে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্তচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, সবুজ আর জলাধার নিধনের কারণে আমাদের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকছে না। ফলে প্রতিবছর তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হচ্ছে।

খবরে দেখলাম, তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, তখন দেশের সচেতন নাগরিকরা গাছ লাগানোর পক্ষে ক্যাম্পেইন করছেন। ঠিক এই সময়েই দেশের নানা জেলায় কেটে ফেলা হচ্ছে হাজার হাজার গাছ। স্বয়ং বন বিভাগ মেতেছে এই ধ্বংসযজ্ঞে। এটা একটা অমানবিকতা। আবার তারাই স্লোগান দেয় ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান।’ গাছ আমাদের ছায়া-অক্সিজেন দানসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা দেয়। পরিবেশ রক্ষা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়রোধে গাছের কোনো বিকল্প নাই। যত্রতত্র গাছ কাটা জনজীবনসহ পরিবেশের জন্য চরম হুমকি।

লেখক: কবি, সাংবাদিক ও সংগঠক

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2