• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

দল মেরামতের মোক্ষম সময়ে বিএনপি

মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার

প্রকাশিত: ১৪:৪১, ১৬ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৪:৪৩, ১৬ মার্চ ২০২৪

ফন্ট সাইজ
দল মেরামতের মোক্ষম সময়ে বিএনপি

ঠিক ঝড় না হলেও বিএনপিতে পুনর্গঠনের হাওয়া বইছে। হাওয়াটা মৃদুমন্দ নয়, ভেতরে ভেতরে বেশ গতিময়। এ নিয়ে কিছু তোড়জোরও আছে। পুণর্গঠনের ব্যাপারে শীর্ষ থেকে তৃণমূল একমত। মতভিন্নতা কেবল পুণর্গঠনের রকমফের নিয়ে। আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থবারের ক্ষমতার বিপরীতে বিএনপির অবিরাম দুর্গতি দেশের রাজনীতির জন্য একটি বড় ঘটনা। এর ফুলস্টপ বা জের কোথায় গিয়ে শেষ হতে পারে-এ আলোচনাও আছে। বিএনপির প্রতিপক্ষ কে, প্রতিপক্ষটি কেন ২১ বছর দুর্গতি সয়ে ক্ষমতা টেক ব্যাক করতে পেরেছে-বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে সেই আলোচনাও ব্যাপক। আলোচনার সঙ্গে রয়েছে পরামর্শও। 


বিএনপির চৌহদ্দিতে ২০১৪ থেকে এবারের সংসদ নির্বাচনের পটভূমিতে নেতৃত্বের ব্যর্থতা-সফলতা নিয়ে আলোচনা-আত্মসমালোচনা একটি ভালো লক্ষণ। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারান্তরীণ থাকাসহ নানা কারণে দলটির কাউন্সিল হয়নি। লন্ডন থেকে  ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার তাগিদ দিয়ে আসছেন অবিরাম। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে  নেতাকর্মীদের ভূমিকা রাখার এ পথরেখাটি এক সময় সেভাবে ছিল না দলটিতে। ওয়ান ইলেভেনের সিডরে এখনো ক্ষত-বিক্ষত বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ কেবলই সিডরটির বেনিফিসিয়ারি। তাদের বিশেষ এজেন্ডায় হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকা।  দৃশ্যত, আওয়ামী লীগ এতে সফল। আর ব্যর্থ বা নীপিড়নে রোধে অসহায় বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীমত। 


এ বাস্তবতা মেনেই এখন দল মেরামত বা পুণর্গঠন করতে হচ্ছে বিএনপিকে। নিতে হচ্ছে, ধীরে চলো নীতি। বিনা ভোট, রাতের ভোট, ডামি ভোটসহ ক্ষমতার রাজনীতির শিকারে পড়া বৃহৎ কোনো দলের জন্য এটি হজম করাও কষ্ট। ক্ষমতাসীনদের ধারনা বা বিশ্বাস ছিল জেল-জুলুম, মামলা-হামলার অবিরাম তোড়ে ধীরে ধীরে জাসদের মতো হারিয়ে যাবে বিএনপি। সেই আশার অংশ হিসেবেই ‘কোথায় দলের চেয়ারপারসন, কোথায় টেমস নদীর পাড়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’- এ ধরনের রঙ্গ করা প্রশ্ন অবিরাম ছোঁড়া হচ্ছে বিএনপির দিকে। মাজাভাঙ্গা-কোমরভাঙ্গা দল বলে গালি তো আছেই। তা হজমের প্রশ্নেও শৈথিল্য সৌন্দর্য এখনো বিদ্যমান বিএনপিতে। সরকারের অন্যান্য ইয়ার্কিতেও গা মাখছে না। নিপীড়ন তো সইছেই। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করতে হচ্ছে। মোটকথা বিএনপিকে কেবল পুণর্গঠিত হলেই চলছে না। শক্তিও বাড়াতে হচ্ছে। আন্দোলনের সহযোগীদের মনও রক্ষা করতে হচ্ছে। 


নামকাওয়াস্তে পুণর্গঠন বা কাউন্সিল নয়, বিএনপিকে শক্তিবৃদ্ধির টনিক নিতেই হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে রসায়ন বাড়ানোর পাশাপাশি সহযোগীদের সঙ্গে মিতালির দূরত্ব কাটানোও জরুরি। এখানে শক্তির সাথে সাহস ও দৃঢ়তার প্রশ্ন। কর্মীদের সেই সামর্থ এরইমধ্যে প্রমাণিত। তারা সেই সক্ষমতা দেখিয়েই চলছে। বিগত এক দশকে অন্যায়-অত্যাচারে দীর্ণ-বিদীর্ণ হতে হতে তাদের কেউ কেউ এক একটা আগুনের চাক্কা পর্যায়ে। বিএনপি কর্মীরা আদতে এমনটি হতে পারবে বলে অনেকের ধারনার বাইরে। দলের অভ্যন্তরের সুবিধাবাদী অংশ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নেতৃত্বের লোভ-মোহতে আচ্ছন্নরা ঘটনাচক্রে চিহ্নিত হয়ে গেছে। সদ্য সম্পন্ন নির্বাচনে দলের এ ধরনের হাতে গোনা কয়েক পিসের তৈমুরি –শমসেরি করুণ পরিণতি বিএনপিকে কিছুটা সুবিধাই দিয়েছে। 

চেয়ারপারসনের বন্ধিত্ব-অসুস্থতা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশান্তরের মাঝেও দলীয় শৃঙ্খলা অনেকটা অবিশ্বাস্য। কারো কারো কাছে ঈর্ষা করার মতো। সচরাচর বুর্জোয়াশ্রেণির দলে এমনটি হয় না। এটিও বিএনপির রাজনীতির জন্য একটি সুযোগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ি চেয়ারপারসন, মহাসচিব, জাতীয় নির্বাহী পরিষদ এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা- সবাই নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার কথা। মনোনীত হবেন শুধু চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা। এখন সময় এসেছে পার্টির সব স্তরে- তৃণমূল পর্যায় থেকে স্থায়ী কমিটি- সর্বত্র গণতন্ত্রের নিয়মিত অনুশীলন। শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতির মাঝেও সেই চর্চা অবশ্যই মানুষকে ভাবাবে। যেমন ভাবাচ্ছে, ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন-ভয়ভীতিতেও দলটির অভ্যন্তরীণ ঐক্য। পরিবার পরিজন ছেড়ে পথে-ঘাটে,ক্ষেত-খামারে পালিয়েও কর্মীদের টিকে থাকার দৃষ্টান্ত। 


আন্দোলনের সহযোগী ও মিত্র দলগুলোর মধ্যেও এ নিয়ে বেশ আলোচনা। তাদেরও ভাবনায় আসেনি বিএনপি নেতাকর্মীদের এতো ভোগান্তি সয়ে টিকে থাকার হিম্মত হয়েছে। মিত্রদের এমন অনুভূতি বিএনপির জন্য অবশ্যই আশা জাগানিয়া। তাদের চোখ এখন আরো দীপ্যমান বিএনপির দিকে। কী হতে যাচ্ছে দলটিতে? কেমন হতে যাচ্ছে পুণর্গঠন?- এসব জিজ্ঞাসা ও চাহনি সারাক্ষণ মিত্র দলগুলোতে। এমন কি বিগত আন্দোলন-কর্মসূচির দুর্বলতার পর্যালোচনায় নিজেদের ব্যর্থতা-সীমাবদ্ধতাও আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে। নিজ নিজ দলেও মেরামত নিয়ে কথা হচ্ছে। এমন কি আন্দোলন, মিতালি ‘পুনর্গঠন’ আলোচনাও বাদ যাচ্ছে না। 


বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা একাধিক দল ও জোটের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, নানা বাস্তবতায় এপ্রিল বা মে মাস পর্যন্ত রাজপথে বড় কর্মসূচির সম্ভাবনা কম। বিএনপির অভিযোগ, এখনো তাদের প্রায় ১৫ হাজার নেতা-কর্মী জেলে। তাদের মুক্ত করার আগে বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। নিয়মিত কর্মসূচিতে মাঠে থাকাকেই কৌশল হিসেবে দেখছে তারা। শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, আন্দোলনে ব্যর্থতার পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য দুটি বিষয় অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। একটি হলো, যার যার সংগঠন পুনর্গঠন। অন্যটি হচ্ছে আন্দোলন ‘পুনর্গঠন’ করা। চলমান সময়টিকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব বাছাই বা পুণর্গঠনের মোক্ষম সময় মনে করছেন বিএনপির হিতাকাঙ্খীরা। আন্দোলনের মিত্ররাও।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলাপোস্ট

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

মন্তব্য করুন: