• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

প্রধানমন্ত্রীকে ঢাবি অধ্যাপকের খোলা চিঠি

অধ্যাপক ড. মোসা: রেবেকা সুলতানা

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১ আগস্ট ২০২৪

ফন্ট সাইজ
প্রধানমন্ত্রীকে ঢাবি অধ্যাপকের খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আসসালামু আলাইকুম।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করাটা অতীব জরুরি ছিল। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষকের পক্ষে তা প্রায় অসম্ভব। কারণ রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে এতো জটিলতা যে কথাগুলো সরাসরি বলার সুযোগ হয় না। বলতে পারলে হয়তো আপনি রাষ্ট্রের বিদ্যমান পরিস্থিতি, মানুষ, সম্পদ, আইন ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট ওয়াকিবহাল থাকতেন, যা আপনার রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেক ভূমিকা রাখতে পারতো। প্রাচীনকালে আমরা দেখেছি, রাজ-দরবারে সবচেয়ে সম্মানিত ও বিশ্বস্ত থাকতেন শিক্ষক ও পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ। বর্তমান সময়েও বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিভিন্ন পলিসি প্রণয়ন ও সোশ্যাল ইস্যু সমাধানে অভিজ্ঞ শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নেয়া হয়। যা যেকোনো রাষ্ট্রের উন্নয়নে ও সংকট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু বর্তমানে বড় সংকট হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজনীতিবিদদের সঠিক বার্তা বা প্রকৃত অবস্থা বর্ণনার ক্ষেত্রে চতুরতা অবলম্বন। এটি যেকোনো দেশকে বা দেশপ্রধানকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে, সেটি বোধহয় অনেকেরই ভাবনায় আসে না। কারণ, ২০১৮ থেকে ২০২৪ এর মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা আপনি পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন, আপনাকে যেভাবে দেশের সংকটগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিংবা উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে সঠিক চিত্রটি পুরোপুরি উঠে আসেনি। যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমাদের এ ধরনের রক্তাক্ত ২০২৪ দেখতে হয়েছে। ঝরে গেছে বাংলাদেশের অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যারা অনেকেই দেশকে বিশ্ব দরবারের অনেক উঁচুতে পৌঁছে দিতে পারতো।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের একটি কথা সবার স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদেরও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেননি। কাজেই শব্দ ব্যবহার যখন সাধারণভাবে হয়, তখন মানুষের আবেগ ও আত্মসম্মানে লাগে। এতে সে জীবনের থেকে তার আত্মসম্মান ও আবেগকে বেশি প্রাধান্য দেয়। তখনি সৃষ্টি হয় এধরনের জীবনবাজি রাখার মতো পরিস্থিতি। কিন্তু আমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে, বর্তমান সময়ের তরুণেরা শুধু বক্তৃতা, লেখা বা গল্পে বাংলাদেশকে ভালোবাসে না। তারা বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করে। ফলে তারা বাংলাদেশের যেকোনো বৈষম্যমূলক সিস্টেমকে সহ্য করতে বা মেনে নিতে অস্বীকার করে। এটি শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা বা অন্যান্য কোটার বিষয় নয়। আপনি যদি গভীরভাবে লক্ষ্য করেন দেখবেন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন খাতে যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও আইনের অপব্যবহার রয়েছে তা যেকোনো সচেতন নাগরিকের পক্ষে মেনে নেয়া ঢের কঠিন। আপনার কাছে প্রকৃত চিত্রটি উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ, আপনার মতো একজন চৌকস নেতা ও ব্যক্তির কাছে এর সমাধান অনেক সহজ হতো যদি প্রকৃত চিত্রটি আপনার কাছে থাকতো। আপনি আমাদের তরুণদের ধৈর্য দেখুন। তারা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাদের দাবি-দাওয়া ও চাওয়ার কথা শান্তিপূর্ণভাবে জানিয়েছে। তারা সহিংসতার আশ্রয় নেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে ছাত্রদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে তৃতীয়পক্ষ সংঘাতময় ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কখনোই এধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে না। আমার মনে হয় তারা শুধু এতটুকু চেয়েছিলো যে, আপনার সাথে তাদের একবার সাক্ষাৎ হোক। তাদের দেখা ও উপলব্ধির সত্যিকার চিত্রটি আপনার সামনে তুলে ধরাই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু তা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সিস্টেমে আটকে যাওয়ায় এবং বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বক্তব্যের দায়বদ্ধতার বিষয়টি না থাকায় তরুণ সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। যার ফলে ১৬ জুলাই থেকে বাংলাদেশ রক্তাক্ত হয়। তবে এর মাঝেও বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য এবং যে বক্তব্য আপনার কাছ থেকে আসার কথা সেই বক্তব্য যখন আপনাকে পাশ কাটিয়ে অন্য কারও কাছ থেকে আসে তখন সক্রিয় নাগরিক সমাজ ও তরুণ সমাজ তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। কারণ আপনার বক্তব্যে যে সহনশীলতা ও মমত্ববোধ থাকত তা তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। ফলে দেশ এক গভীর সংকট অতিক্রম করছে। এছাড়া বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী ও মিশ্র মতাদর্শের নেতৃত্বের জটিলতায় প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী ও আওয়ামী লীগের চেতনাধারীরা এক ধরনের নিষ্পেষিত, যা আপনি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারবেন। তবে ছাত্রদের রক্ত ব্যবহার করে যারা দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে ও সীমাহীন অরাজকতা তৈরি করেছে তাদেরকে ধিক্কার জানাই ও প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই। ছাত্রদের একটি সুষ্ঠু আন্দোলনকে যারা অন্যদিকে নিয়ে গেছে ও রাষ্ট্রদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়েছে তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ ব্যক্ত করছি। আমাদের তরুণ সমাজ অত্যন্ত সচেতন ও দায়বদ্ধ। যা ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই আমরা দেখেছি।  তাই আপনার মতো একজন মহান নেতা ছাত্রদের এ চাওয়াটুকু তাদের মুখে শুনবেন এটিই বোধহয় তারা আশা করেছিল। কিন্তু সেখানে কেন অদৃশ্য দেয়াল আসলো সেটা এখন প্রতিটি সচেতন ও সক্রিয় নাগরিকের জানার ইচ্ছা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একটি দল যদি অনেকদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করে সেখানে কিছু উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা দূরদর্শিতার সাথে মোকাবেলা করাই হলো একজন রাষ্ট্রনায়কের পারদর্শিতা। সে পারদর্শিতা আপনার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আপনি সঠিক তথ্য ও অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকায় এ ধরনের গভীর সংকট তৈরি হয়েছে বলে আমার মনে হয়। তাই আপনি তরুণদেরকে মিডিয়া বা রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে নয় বরং তাদের ডেকে সরাসরি মনের ভাব প্রকাশ করার সুযোগ করে দিন। আর বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সংগঠনের সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারলে অনেক অরাজকতা কমে আসবে বলে মনে হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নিরীহ শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণকে শাস্তি দেয়া বা গ্রেফতার করার যে অভিযোগ উঠেছে তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। ফলে অনেক মেধাবী ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলীসহ অনেক স্বশিক্ষায় শিক্ষিত সচেতন মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। কারণ দেশটিকে আমাদের অনেকদূর নিয়ে যেতে হবে। চৌকস নেতৃত্ব তৈরি করে দেওয়াও আমাদের পবিত্র নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পরে। তাই ভবিষ্যতে আর কোনো রক্তপাত নয়, সরাসরি আলোচনাই হোক যেকোনো সমস্যা সমাধানের পথ। শুধু রাজনীতিবিদরা নয়, সক্রিয় সচেতন ও সুনাগরিকরাও যেন আপনার সংস্পর্শে থেকে আপনাকে সঠিক চিত্রটি তুলে ধরতে পারে এটাই হোক গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ভিত্তিক চর্চা। বাংলাদেশ ভালো থাকুক। ভালো থাকুক আমাদের তরুণ প্রজন্ম।

লেখক: অধ্যাপক ড. মোসা: রেবেকা সুলতানা  
দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2