• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

‎বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জিয়াউর রহমান: এক অনন্য বিশ্বনেতা

মিনহাজ আহমেদ প্রিন্স

প্রকাশিত: ১৮:২০, ২৬ জুন ২০২৫

ফন্ট সাইজ
‎বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জিয়াউর রহমান: এক অনন্য বিশ্বনেতা

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট রয় জেনকিন্স ও সদস্য হাফারক্যাম্পের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের আলোচনা

‎তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশংকায় পুরো বিশ্ব আজ প্রকম্পিত। ক্ষমতার লড়াই প্রদর্শনে বিশ্ব রাজনীতির শক্তিধরেরা ধ্বংসের খেলায় আজ মত্ত, যেই ধ্বংসের বলি নিরীহ সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন, ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ বিশ্ব শান্তি ধ্বংসের মূল কারণ। এমতাবস্থায় পুরো পৃথিবী যেনো অপেক্ষা করছে এমন এক বিশ্বনেতার যিনি শান্তির পায়রা হয়ে পৃথিবী জুড়ে শান্তি-সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের ভিত স্হাপন করবেন। এমনই এক শান্তির পায়রা সত্তরের দশকে বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে জন্ম নেন যিনি তাঁর অসাধারণ কূটনৈতিক দক্ষতায় বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য মাত্রা যোগ করেন।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক এবং সম্মুখ সারির একজন যোদ্ধাই শুধু ছিলেন না, স্বাধীনতা পরবর্তী জনগণের বাংলাদেশ নির্মাণে তিনি যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন, তা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় পরিমন্ডলেই প্রশংসনীয় হয়েছে। তবে জিয়াউর রহমান শুধুমাত্র জাতীয় নেতৃত্বেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি; অনেকটা স্বভাবসুলভভাবেই বিশ্বজুড়ে চলমান তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন। 

বিশেষত ইরান-ইরাক যুদ্ধ সমাপ্তিতে কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত সার্ক গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ কিংবা ১৯৮০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ তাঁকে এক উদীয়মান বিশ্বনেতার পদমর্যাদায় আপনা-আপনিই অধিষ্ঠিত করেছিলো।

ফিলিস্তিনের সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াসির আরাফাতের সাথে জিয়াউর রহমান।

‎জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একটি ঐক্যজোট গড়ে তুলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের চিন্তা করেন। এ লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট আঞ্চলিক সহায়তা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাবনা দেন। তাঁর এই দূরদর্শিতার ফলই হচ্ছে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক। তবে সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ার যে দর্শন থেকে তিনি সার্ক প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁর শাহাদাত বরণের কারণে এবং ফলশ্রুতিতে কুচক্রী মহলের অসহযোগিতার কারণে তা যথার্থরূপে বাস্তবায়িত হয়নি। 

একটি সাম্য ও সৌহার্দ্যর পৃথিবীতে বিশ্বাস করতেন বলেই তিনি ১৯৮০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, "আমরা যদি অবিভাজ্য মানব সমাজে বিশ্বাস করি তবে এই সমাজের প্রতি আমাদের পারস্পরিক কর্তব্য ও দায় দায়িত্বকেও স্বীকার করে নিতে হবে"। 

বিশেষত আজ একবিংশ শতাব্দীতেও যখন ভারত-পাকিস্তান  উত্তেজনা বা নেপাল-ভারত দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে তখন সার্কের মাধ্যমে সংলাপ চর্চার যে প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়ে আছে তার কার্যকারিতা রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ প্রবলভাবে উপলব্ধি করেন। 

বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির যে অস্হির সময় আমরা পার করছি তখন জিয়ার শান্তি দর্শন আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা ও এর পরবর্তী সময় একটি রাষ্ট্র কত বিশৃঙ্খলা এবং অসহায়ত্বের শিকার হয় তা তিনি জানতেন দেখেই ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধে তৎপর ছিলেন। তবে ন্যায্য দাবি আদায়ে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশেও তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন এবং আল-কুদস কমিটিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন যুদ্ধ বন্ধে ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারীর সম্মানে আসীন হন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য তাঁর এসকল ভূমিকা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বেশ প্রশংসা পেয়েছিলো। একইসাথে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে (NAM) তিনি কার্যকরী ভূমিকা রাখেন এবং অনুধাবন করেন  শীতল যুদ্ধের সময় ৩য় বিশ্বের দেশগুলোর জোট নিরপেক্ষ অবস্থানই বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য উত্তম পন্থা। ১৯৭৬ সালে কলোম্বোতে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগদান করে বাংলাদেশকে ৭ জাতি গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে তিনি স্হাপন করেন। 

মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সময় বিশ্বনেতাদের সাথে ভূমিকা রেখেছিলেন জিয়াউর রহমানও।

‎‎বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের যে ধারা শুরু করেছে তার ভয়াবহতা কত মারাত্মক এ সম্পর্কে বোধকরি এই রাষ্ট্রপ্রধানরা উদাসীন৷ তবে জিয়াউর রহমান বিশ্বাস করতেন যুদ্ধে একপক্ষ কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়না বরং এর প্রভাব ব্যাপক ও বিশ্বজোড়া। 

আর এজন্যই তিনি দৃঢ় কণ্ঠে জাতিসংঘের ভাষণে বলেছিলেন, "শান্তির অবিভাজ্যতা সম্পর্কে কারো মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ আছে কি? উত্তর কি মনে করে যে সে দক্ষিণের বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি ও আলোড়ন থেকে গাঁ বাঁচিয়ে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবে? এই কি তার বিশ্বাস যে যখন যুদ্ধ-বিগ্রহ, বঞ্চনা আর স্থবিরতা বিষিয়ে তুলবে আমাদের এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা, তখন তার এলাকাতে বিরাজ করবে অব্যাহত শান্তি, প্রগতি আর সমৃদ্ধি?" বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাই ঐ একই ভাষণে তিনি সকল রাষ্ট্রনায়ককে  উদাত্ত কণ্ঠে শান্তির পথে আহ্বান করেছিলেন, "শান্তি যেমন অবিভাজ্য তেমনি শান্তিকে বিপন্ন করে বিশ্বকে ধনী আর দরিদ্র এই দুই ভাগে ভাগ করা যায় না"।

‎৩য় বিশ্বের এক রাষ্ট্রনায়ক হয়েও জিয়াউর রহমান বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেভাবে নিজেকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁর তীক্ষ্ণ কূটনৈতিক বুদ্ধির জোরে তিনি অনুধাবন করেছিলেন অর্থনৈতিক বৈষম্য বিশ্ব শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তাইতো জাতিসংঘে দেওয়া তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি অকুতোভয় চিত্তে প্রশ্ন রেখেছিলেন: "সারা দুনিয়ায় প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের পরিমাণ কেন বাড়তে বাড়তে এখন বছরে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে অথচ সেই তুলনায় অর্থনৈতিক সহায়তার মাত্রা সত্যিকার অর্থে দিন দিন কমেই চলেছে কি কারণে?" 

তিনি বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়কদের দৃঢ়চিত্তে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে অস্ত্রখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে যখন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সহায়তা কমছে, তা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। জিয়াউর রহমান আজীবন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে ন্যায্য দাবির পক্ষে এবং অন্যায্য আচরণের বিপক্ষে শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছেন। ১৯৭৮ সালে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয় এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার জিয়ার এই  অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, "নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক দুর্যোগের মাসগুলোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে"। 

‎বর্তমান বিশ্বে যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধ এবং এসকল কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট বিশ্ব শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলেছে, তখন জিয়াউর রহমানের শান্তি দর্শন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং নতুন করে মূল্যায়নযোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান তাঁর "শহীদ জিয়া : অস্থির সময়ের সুস্থির রাষ্ট্রনায়ক" প্রবন্ধে জিয়াউর রহমানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন "কেবল বাংলাদেশই নয়, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন অগ্রসরমান বিশ্বের একজন উদীয়মান নেতৃত্ব। যার ভবিষ্যতদর্শী নেতৃত্ব সেনা বাহিনীর ব্যারাক থেকে বেরিয়ে শেকড় গেড়েছিল গণমানুষের ভেতর"। 

জিয়া বিশ্বাস করতেন যুদ্ধের অনুপস্থিতির অর্থই শুধু শান্তি নয়, বরং ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতেই বিশ্বজুড়ৈ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। তাই তো তিনি ৩য় বিশ্বের একজন দরিদ্র রাষ্ট্রনায়ক হয়েও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার এক প্রেরণা হয়ে উঠেছিলেন। 

লেখক: মিনহাজ আহমেদ প্রিন্স।

‎লেখক: এফ. ফিল শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ।

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2