বিএনপি ও গণমানুষের প্রত্যাশা

ছবি: মিনহাজ আহমেদ প্রিন্স
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ যখন একের পর এক রাজনৈতিক দুঃসময় এবং দিকনির্দেশনার অভাববোধ করছিলো, ঠিক সেসময় আমাদের মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে এদেশের রাজনীতির আকাশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র জন্ম হয়।
গণতন্ত্রহীনতা, স্বৈরাচারী শাসন ও দুর্নীতির চক্র এই রাষ্ট্রকে যখন পিছিয়ে দিচ্ছিলো, তখনই বাংলাদেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শনের ভিত্তিতে বিএনপির পথচলা শুরু হয়। সময়ের পরিক্রমায় বিএনপির পরিধি নিছক একটি রাজনৈতিক দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং প্রতিটি বাংলাদেশির প্রত্যাশা পূরণ, নাগরিক অধিকার পুনরুদ্ধার ও এদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনা বাস্তবায়নের এক অনিবার্য শক্তি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনীতি, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা-এই ৪টি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই রাজনৈতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকেই বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শের হাতেখড়ি হওয়ায় এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন কর্মী হিসেবে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বিএনপি তার আদর্শের জায়গা থেকে একবিন্দুও সরে আসেনি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের "বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ" এদেশের জনগণের রাজনৈতিক দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ এক দিকনির্দেশনা হয়ে আছে।ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সত্ত্বেও এদেশের প্রতিটি মানুষ যে এক ও অভিন্ন সত্ত্বা, সেই বোধটি প্রতিটি বাংলাদেশির হৃদয়ে জাগ্রত করতে সক্ষম হন তিনি। এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলটি সেই পরিচয়কে পুঞ্জি করেই রাষ্ট্র গড়ার লড়াইয়ে অতীতেও ভূমিকা রেখেছে, বর্তমানেও সংগ্রাম করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রাখবে।
বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের প্রথম প্রত্যাশা একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর স্বৈরাচারী শাসন, নির্বাচনবিহীন অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের পরাধীনতা, আর বিরোধী কণ্ঠ রোধের চর্চা এদশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও অংশগ্রহণকে অনিশ্চিত করেছে। এবং ঠিক একারণেই জনগণের এই অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই রাষ্ট্র কাঠামোর রূপরেখা পরিবর্তন এর দাবি নিয়ে ৩১ দফা ঘোষণা করেছিলেন এবং এই ৩১ দফার প্রথম দিকেই ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছিলো। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের করাল থেকে মুক্ত হওয়ার পরেও অন্তর্বতীকালীন সরকারের নিকট এই ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে দেশের সাধারণ জনগণ বৈষম্য, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের শিকলে বন্দী হয়ে ছিলো। বিএনপির কাছে তাই দেশের আর পাঁচজন সাধারণ নাগরিকের মতই আমার প্রত্যাশা উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ ব্যবস্হা, নতুন উদ্যোক্তা ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণের দ্বারা এদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করা। সেইসাথে মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা, নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধি তথা আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি সর্বদাই সোচ্চার ছিলো, আছে এবং ভবিষ্যতেও অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে দেশের শিক্ষাখাত সম্ভবত সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, অকার্যকর পাঠ্যক্রম এদেশের শিক্ষাব্যবস্হাকে একেবারে ভঙ্গুর করে রেখেছে। তাই তো বিএনপি তার ৩১ দফায় যুগোপযোগী ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি, শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি অর্থাৎ, শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে এসেছে। কারণ বিএনপি বিশ্বাস করে একজন প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তিই একজন প্রকৃত নাগরিক, সমাজ সংস্কারক ও দেশপ্রেমিক হতে পারে। ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত ‘গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান স্মরণ'-এ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কর্তৃক আয়োজিত এক সভায় প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান যেমন বলেছেন, "জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় যেমন জ্ঞানের আলো ছড়ায়, তেমনি তা সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তিও’।
এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, শ্রমজীবী মানুষদের স্বাস্থ্যকর ও মানসম্মত জীবনযাপনের ব্যবস্হা, ভঙ্গুর স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এদেশের আপামর জনগণ এখনো বিএনপির উপর বিশ্বাস রাখে। কারণ সেই আশা ও আস্হার স্হল এই প্রাণপ্রিয় সংগঠনটি তার অতীতের কাজ এবং বর্তমানের যুগোপযোগী ৩১ দফা ঘোষণার মাধ্যমে অর্জন করেছে। নোবেল বিজয়ী পাবলো নেরুদা যেমন বলেছেন— “You can cut all the flowers but you cannot keep spring from coming.” তাইতো, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর এদেশের গণমানুষের আস্হার জায়গা বিএনপি কারণ অতীতেও এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিএনপি যথাযথ ভূমিকা রেখে গেছে এবং ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়েই তারা জাতিকে নেতৃত্ব দিতে চায়।
লেখক: সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: