• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

রোকন-উজ-জামান এর মন্তব্য কলাম

বিএনপির ভেতর কে সেই কংগ্রেসের শশী থারুর?

রোকন-উজ-জামান

প্রকাশিত: ১৫:০৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৬:৫৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
বিএনপির ভেতর কে সেই কংগ্রেসের শশী থারুর?

"কংগ্রেসের সংসদ সদস্য শশী থারুর কেরালা রাজ্যের তিরুবনন্তপুরম শহরের পৌর কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজেপির জয়ে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই জয়ের মধ্য দিয়ে ৪ দশকের বেশি সময় ধরে বামদের দখলে থাকা এই কর্পোরেশনটি দখল করে বিজেপি।

কেরালা রাজ্যে তিরুবনন্তপুরম পৌর করপোরেশনের নির্বাচনে বিজেপির জয়ের পেছনে কংগ্রেস সংসদ সদস্য শশী থারুরের ভূমিকা ভারতীয় নির্বাচনী রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। শশী থারুর কেরালার একজন শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতা হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা মূলত বিজেপির পক্ষে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বেশ কয়েক মাস ধরে থারুরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠতা চলছে। দুজনেই প্রকাশ্যে একে অপরের প্রশংসা করছেন। এমনকি, কংগ্রেসকে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে শশী থারুরকে যুক্ত করেছেন।

থারুর দলের অনুমতি না নিয়েই এসব দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। যেমন 'পেহেলগাম হামলা' ও 'অপারেশন সিঁদুরের' পর সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে মোদি তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা (রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গে) আমন্ত্রিত না হলেও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে শশী থারুরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তিনি তা গ্রহণ করেন।

তিরুবনন্তপুরম পৌর করপোরেশন দখলের পর জল্পনা শুরু হয়েছে যে আগামী বছর কেরালা বিধানসভার নির্বাচনে শশী থারুরই হতে পারেন বিজেপির মুখ।

কংগ্রেসের রাজ্য নেতারা বিশ্বাস করেন যে পৌর ভোটে প্রচার করলেও শশী থারুর কংগ্রেসের জয়ের জন্য কার্যকর কিছু করেননি। বরং, তিনি অনুগামীদের উৎসাহিত করেছিলেন যাতে বিজেপি ভোট পায়। যদিও এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত নয়, তবে ফল প্রকাশের পর তিনি বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মোদির এই কৌশলকে এক "অভিনব রাজনৈতিক কৌশল" হিসেবে দেখছেন। প্রতিপক্ষ দলের কাউকে নিজ দলে না এনে, তাকে ঐ দলে রেখেই রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার বা ভোটের মাঠে বাজি মাত করার এই কৌশলকে রামায়ণের বিভীষণের কাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রকাশ্যে রামের পক্ষে যোগ না দিয়েও, লঙ্কায় থেকে রামের লঙ্কা জয়ে ভূমিকা রাখার মতো ভয়ংকর কৌশল।

এই ঘটনা বাম জোট, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোট ও বিজেপির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ে বিজেপিকে লাভবান করেছে এবং কেরালার মতো ৪৫ বছরের বাম শাসিত রাজ্যে বিজেপির হঠাৎ উত্থানে এই 'শশী থারুর' কৌশল কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছে বলে ভারতীয় মিডিয়ায় জোর আলোচনা চলছে।

সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, প্রগতিশীল, গত চল্লিশ বছরে সবচেয়ে বিকশিত মধ্যবিত্ত সমাজে একটু দ্বিধা-আড়ষ্টতা থাকারই কথা। সেই আড়ষ্টতা কাটাতেই ভূমিকা রাখছেন সেন্ট্রিস্ট/মধ্যপন্থী দলের শীর্ষ নেতা এই শশী থারুর। মোদির সাথে উপরে উল্লেখিত এই দহরম-মহরমের ইমেজ ডানপন্থী বিজেপি, বিশেষ করে মোদি দেখিয়েছেন আগে কখনো না দেখা এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক কৌশল। এটি ভোট-জোটের রাজনীতিতেও নতুন। 

অর্থাৎ, প্রতিপক্ষ দলের কাউকে ভাগিয়ে নিজ দলে এনে নয়; বরং তাকে ঐ দলে রেখেই রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার বা ভোটের মাঠে বাজি মাত। মোদি রাজনৈতিক এই 'বিভীষণীয়' কৌশল হয়তো রামায়ণ থেকেই পেয়েছেন, তবে প্রয়োগে নতুনত্ব এনেছেন। বিভীষণকে প্রকাশ্যে রামের পক্ষে যোগ না দিয়ে, লঙ্কায় থেকেই রামের লঙ্কা জয়ে ভূমিকা রাখতে বলেছেন। কী ভয়ংকর এক শত্রুনাশী অব্যর্থ কৌশল!

বাংলাদেশেও জামায়াত শিবির (জাশি) এই কৌশলে আওয়ামী লীগকে তো উচিত শিক্ষা দিয়েছেই, ৫ আগস্ট পরবর্তী ডাকসু দখলেও কিন্তু এই কৌশলের এক ধরনের মিল রয়েছে।

৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনীতিতে একই কৌশল ব্যবহৃত হচ্ছে বিএনপির বিরুদ্ধে। জামায়াত এখন পর্যন্ত এই কৌশল নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও হেজিমনি বাড়াতে বেশ সফলভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে। আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাদের জামায়াতে যোগ দেওয়ার খবর আমরা দেখেছি। বিএনপির মতো বড় দলের এমন ঘটনায় তেমন কিছু যায় আসে না, তারা পাত্তাও দেয়নি।

তবে ছাত্রলীগের মধ্যে যেমন শিবির ছিল, বিএনপির মধ্যেও জামায়াতের শশী থারুর কেউ আছে কি না? মেজর আখতারুজ্জামান একটি সময় পর্যন্ত এই ভূমিকায় হয়তো ছিলেন। জামায়াতের পক্ষে বিএনপিতে এমন শশী থারুর আর আছে কি না?! থাকলে কয়জন? আগামী নির্বাচনে দলের ভেতর থেকে এমন শশী থারুরদের অভিঘাত ভোটের ফলাফলে কতটা প্রভাব ফেলবে? বিএনপির মধ্যে থাকা শশী থারুরদের নিয়ে বিএনপির ভাববার এখনই উপযুক্ত সময়।

লেখক

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2