এম আমিনুল ইসলামের মন্তব্য কলাম
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: আমার ভাবনায় বাংলাদেশ
বাঙালী জাতির জন্য আজ এক অবিস্মরণীয় দিন। দেশের মানুষ আজ লন্ডন প্রবাসী এক রাজনৈতিক মহীরুহের গৌরবময় স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে যাচ্ছেন। কোটি কোটি জাতীয়তাবাদীর বটবৃক্ষ, গণতন্ত্রকামী গণমানুষের মুক্তির দিশারী ও রক্ষাকবচ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সুদীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে আজ ২৫ ডিসেম্বর রোজ বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে উনি একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা জায়মা রহমান ও সহধর্মিনী কার্ডিওলজিস্ট জুবাইদা রহমানসহ লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন।
দুই উদ্দীন (ফকরুদ্দিন ও মঈনুদ্দিন) পরিচালিত ১/১১-পরবর্তী তত্ত্বাবধায়কের নাট্যমঞ্চ, রাজনৈতিক ডামাডোল ও প্রতিহিংসার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে ২২ মাস কারাবরণ শেষে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে সপরিবারে বিলেত পাড়ি জমান তিনি। ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো পরিবার নিয়ে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তিনি সেখানেই না ফেরার দেশে চলে যান। তাঁদের মা ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও প্রথমে জেলে ও পরে গৃহবন্দী থেকেছেন। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আমলের শুরুতেই উৎখাত হলেন স্মৃতিবিজড়িত মইনুল রোডের বাসা থেকে। তারপরের কাহিনী সবার জানা।
দফায় দফায় দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে, দেশের মানুষ তাদের প্রিয় পিনুর (তারেক রহমানের ছোটবেলার ডাকনাম) শুভাগমনের বার্তায় যারপরনাই আবেগআপ্লুত, উচ্ছ্বসিত ও উদ্বেলিত ছিল। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মা, মাটি ও মানুষের টানে তিনি আসছেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত ছুটে এসেছেন রাজধানী ঢাকায় তাদের দেশনায়ককে এক ঝলক দেখার আশায় কিংবা নেশায়। জড়ো হয়েছেন পূর্বাচলের সুপ্রশস্ত ৩০০-ফুট রাস্তায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে যেখানে উপস্থিত হয়েছেন কয়েক মিলিয়ন নেতা-কর্মী, সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী। আমরা প্রত্যাশা করি "বাংলার ম্যান্ডেলার" প্রত্যাবর্তন আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের ১২ তারিখের ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঐতিহাসিক ভোটৎসবে পরিণত করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে আরো সুসংগঠিত ও সাফল্যমন্ডিত করবে। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ইতিহাসের পাতায় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। প্রিয় স্বদেশভূমিতে আপনাকে সুস্বাগতম, শুভেচ্ছা ও শুভকামনা, প্রিয় তারেক রহমান। আপনার আগমনে আলোকিত হোক সমগ্র বাংলাদেশ।
আমার ভাবনায় বাংলাদেশ
জনাব তারেক রহমানের ফেরা যতটা না উৎসবের তার চেয়ে বেশি দায়িত্বের। উনি দেশের মুক্তিকামী জনতার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবেন অন্য সকলের মত এই আমার দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস উনি যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করেই দেশে ফিরেছেন মানুষের কল্যাণে কাজ করার। যেহেতু শুধু বিএনপিকেই নয়, দলের কর্ণধার হিসেবে তারেক রহমান পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন, উনার তৈরি রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা (যা প্রকারান্তে বিএনপি'র নির্বাচনী ইস্তেহার) দেশের পুনর্গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
বারবার হোঁচটখাওয়া ও কন্টকাকীর্ণ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া, গ্রামীণ ও জাতীয় অর্থনীতির টেকসইতা, ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সুনীল অর্থনীতির বিকাশ, একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ, বাজার নৈরাজ্যের লাগাম টানা ও মনগড়া দাম বাড়ানো নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট ও দালালমুক্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, কংগ্লোমারেট ও অলিগার্কদের দৌরাত্ব, চৌর্যবৃত্তি বন্ধ এবং সর্বোপরি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরির জন্য এই দফাগুলির বাস্তবায়ন আবশ্যক। অধিকন্তু, আপনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সামাজিক ও গণযোগাযোগ মাধ্যমে, সেসবের পূর্ণাঙ্গ সম্পাদন মানুষ দেখতে চায়। মানুষ দেখতে চায় তাঁর অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। মানুষ চায় তাদের বহু বছরের লালিত স্বপ্নের পূরণ হোক আগামীতে আপনার দুরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে।
আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করলে আপনি স্বাস্থ্য সেবায় আমূল পরিবর্তন এনে একটি সুস্থ ও সুরক্ষিত জাতি গড়তে চান যেখানে সবাই উন্নত চিকিৎসা পাবে। কিভাবে পাবে সেটার একটা ছকও আপনি এঁকেছেন। দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির চালক কৃষক ভাইয়েরা তাদের অধিকার ফিরিয়ে পাবে, তাদের উৎপাদিত পণ্য ন্যায্য মূল্য পাবে। প্রথাগত শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে দক্ষ যুবশক্তি তৈরি ও বেকারত্বহীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন যা জনমনে আশার সঞ্চার করেছে। আরো কিছু জনপ্রিয় পদক্ষেপ যেমন কৃষক কার্ড ও প্রত্যেক পরিবারের প্রধান নারী সদস্যকে ফ্যামিলি কার্ড প্রদানের প্রতিশ্রুতি যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিতান্তই ভালো খবর। গ্রামীণ অর্থনীতিতে জনাব তারেক রহমানের এক নীরব বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন বিএনপি'র সর্বশেষ ২০০১-২০০৬ মেয়াদের শাসনামলে। সেই সময় দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি বিতরণ বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
দেয়া হয়েছে আরো কিছু ঘোষণা বা পদক্ষেপ যেমন বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসলে কোরআন বা সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাশ করবে না এবং কওমি মাদ্রাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এসব যেন রাজনীতির মুখরোচক বাণীতে পরিণত না হয় সেটাই দেখার বিষয় হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় উগ্রতা, ধর্মান্ধতা, চরমপন্থা কিংবা জঙ্গিবাদ দমনে এবং সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘুর সমানাধিকারে কাজ করবে দেড় যুগের অধিক রাষ্ট্রক্ষমতাহীন এই জাতীয়তাবাদী দল।
এছাড়াও, বাংলাদেশের জনগণ আশা করে আপনার দল ভবিষৎতে মুক্ত গণতন্ত্র, মুক্তচিন্তা ও মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মবতন্ত্রের বিনাশে কাজ করবে। দেশে ভালো কূটনীতিক তৈরি করতে হবে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আর নয়। এটাকে আরো শক্তিশালী করে বহির্বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরো পাকাপোক্ত করতে হবে। এর কোনো বিকল্পই নাই।
শেষ কথা হচ্ছে, আপনার একটা স্লোগান "আমার আগে আমরা, আমাদের আগে দেশ, ক্ষমতার আগে জনতা, সবার আগে বাংলাদেশ" ইতোমধ্যে মানুষের মনে বেশ জায়গা করে নিয়েছে। সুতরাং, জনসাধারণ মনে করেন দেশের নেতৃত্ব শূণ্যতা পূরণে আর অপেক্ষা, আর প্রত্যাখ্যান নয়। ফেব্রুয়ারীতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের ম্যান্ডেট দিতে চান তাদের স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকার সুযোগ্য প্রার্থীকে। দেশবাসীর উচিত, সমাজের সব অংশীজন উচিত তারেক রহমানের দিকে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা যাতে দেশের জন্য, দশের জন্য তিনি কাজ করতে পারেন। দেশকে স্বনির্ভর করতে, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। কথা নয়, কাজে পরিচয় দিতে হবে বিএনপিকে। কাজেই এখন শুধুই কাজ আর কাজ।

লেখক: এম আমিনুল ইসলাম একজন জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক ও বগুড়া মিডিয়া অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি, ঢাকা'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এজেড




মন্তব্য করুন: