• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

জিগনেস মেভানি: একজন দলিত তরুণের লড়াই 

মো. নিজাম উদ্দিন

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৬ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
জিগনেস মেভানি: একজন দলিত তরুণের লড়াই 

জিগনেস মেভানি।

এক.
জিগনেস মেভানি। গুজরাটের একমাত্র স্বতন্ত্র এমএলএ (সংসদ সদস্য)। ভারতে তিনি রাষ্ট্রীয় দলিত অধিকার পরিষদ নামে একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক। গুজরাটের মূল জনগোষ্ঠীর প্রায় সাত শতাংশ দলিত জনগোষ্ঠীর খুব জনপ্রিয় নেতার নাম জিগনেস মেভানি। ভারতে যে কয়জন তরুণ সংখ্যালঘু অধিকারের লড়াই করে রাজনীতিতে নিজের স্থান করতে পেরেছেন মেভানি তাদের অন্যতম।

কয়েক মাস পূর্বে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। একচল্লিশ বছর বয়সী এই তরুণ নেতা ২০১৭ সালে প্রথম বরের মতো গুজরাটের সংসদ সদস্য (এমএলএ) নির্বাচিত হন। জিগনেস মেভানি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হলেও কংগ্রেস তার সমর্থনে তার আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। ফলে সহজেই জিতে যান জিনগেস, হেরে যায় বিজেপি।

ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে একজন তরুণ সম্ভাবনাময় নেতা হিসাবে নিজের একটা জায়গা অলরেডি তিনি তৈরি করতে পেরেছেন। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে ছিলেন একজন তরুণ পেশাদার সাংবাদিক। এখন আইনজীবী ও রাজনৈতিক। জিগনেস মেলানিকে নিয়ে এজন্যই লিখছি, তিনি শুধু ভারতের গুজরাট কিংবা আসামে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সীমানা ছাড়িয়েও প্রাসঙ্গিক। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সামাজিক গণমাধ্যমে লিখে জেল কেটেছেন এমন দেশ শুধু ভরত নয়, অনেক আছে আমাদের জানা শোনা! সুতরাং কর্তৃত্ববাদী শাসকদের চরিত্রের ভিন্নতা নেই, ভিন্ন দেশ হলেও।

দুই.
সম্প্রতি তিনি ভারতের রাজনীতিতে একদম আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসছেন তার বিরুদ্ধে দুটি মামলাকে কেন্দ্র করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে পোস্ট করায় বিজেপির এক নেতা জিগনেস মেভানির বিরুদ্ধে আসাম পুলিশের কাছে মামলা করে। পরবর্তীতে ২০ এপ্রিল তাকে গ্রেফতার করা হয় ।নয়দিন পর মুক্তি পেলেও সাথে সাথে আরেকটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। দ্বিতীয় অভিযোগটি হচ্ছে- তিনি একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছেন, যেখানে ঐ নারী পুলিশের সাথে আরো দুজন পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তা ছিল। প্রথম মামলাটি থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন আর দ্বিতীয় মামলাটির অভিযোগ নিয়ে আদালতের বিচারকই প্রশ্ন তুলেছেন-দুজন পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে কিভাবে একজন সংসদ সদস্য একটি গাড়ীর মধ্যে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করতে পারে? এমন মিথ্যা ষড়যন্ত্র মূলক মামলাই হয় যারা জনগণের পক্ষের শক্তি হয়ে উঠেন, শুধু ভারত নয়, সব দেশেই! জিগনেস মেভানি গুজরাটের দলিত সম্প্রদায়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা, দলিতদের আপনজন। তাকে গ্রেফতার করায় সরকারের বিরুদ্ধে দলিত সম্প্রদায়সহ গুজরাট তো বটেই, ভারতের অনেক কিনারেই প্রতিবাদের আওয়াজ উঠেছে।

তিন.
সম্প্রতি তিনি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি আলোচিত সাবেক ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের সাথে কংগ্রেসে যোগদান করেন। কানহাইয়া কুমার, জিগনেস মেভানি এবং হার্দিক প্যাটেলদের মতো তরুণ জনপ্রিয় নেতাদের কংগ্রেসে যোগদান বিজেপিকে হয়ত কিছুটা টেনশনেই ফেলে দিয়েছে। ২০২৪ সালে গুজরাটের লোকসভার নির্বাচন। এই নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির জন্মভূমি গুজরাটে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সম্ভাব্য পোস্টার বয় হতে পারেন এই জিগনেস মেভানি! বিজেপির মেভানিকে ভয়ের কারণ তো এটাও। কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থাকে যারা চ্যালেঞ্জ করে বসে, তার আতংক তো তাড়িত করবেই, সেটা যত ছোট শক্তিই হোক না কেন?

না হয় দলিত সম্প্রদায়ের একজন নেতা, একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কেন সরকার ঝাপিয়ে পড়বে? দুনিয়ার সব স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী এবং জালিমের একটা জায়গায় দারুণ মিল, তারা যারা জনগণের পক্ষের শক্তি, যারা জনগণের পক্ষে কথা বলে, তাদের উপর নির্মম নির্যাতত চালায়, মিথ্যা মামলা দেয়, চরিত্রে কালিমা লেপন করে বা করতে চায়। জিগনেস মেভানিরা শুধু ভারত নয়, বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী শাসকের জন্য হুমকি, আর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের শেষ ভরসা। সুতরাং জিগনেস মেভানিরা জালিম, ফ্যাসিবাদ এবং কর্তৃত্ববাদের ভয় এবং আতংকের কারণ হবেই। সেটা শুধু ভারত নয়, সব দেশেই।

-মো. নিজাম উদ্দিন 
-সাবেক ছাত্র নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: