• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভুলে ভরা প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের বই

মাজহারুল ইসলাম শামীম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ভুলে ভরা প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের বই

একটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপ শুরু হয় প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনা দিয়ে। কিন্তু যদি এই শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপটা যদি ভুল বানান আর অসামঞ্জস্য পড়াশোনা নিয়ে শুরু হয় তাহলে বিষয়টা কেমন হবে?

২০২৩ সালের অনেক শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ভুলে ভরা। আর এই ভুল পড়াশোনা নিয়ে শিক্ষার্থী এবং অবিভাবক সবাই অস্বস্তিতে রয়েছে। এই ভুল পড়াশোনা থেকে শিক্ষার্থীরা কতদূর এগিয়ে যেতে পারবে তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ! আমাদের এত জ্ঞানী ব্যক্তিরা বই লিখেন, সম্পাদনা করেন তারপরও এত ভুল কিভাবে সম্ভব! নিম্নে প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা স্তরের বইয়ে কিছু ভুল যা আমি খুঁজে পেলাম তা হলো:

প্রাথমিকের তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রথমেই শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশনা শিরোনামের পর্যায় ২ এ 'ভাষা-দক্ষতা' শব্দটা তিন শ্রেণির বইতে তিনভাবে (ভাষাদক্ষতা/ভাষা-দক্ষতা) লেখা হলো। অথচ,লাইনগুলোতে বিস্তারিত অন্য লেখা সব শ্রেণির বাংলা বইতে এক।

পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ৬ নং পৃষ্ঠায় (অচিন্ পুরে) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ  বানান অচিনপুরে। আবার কবিতায় (পাতাল ফেড়ে) লেখা হলো,কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে পাতাল ফেঁড়ে।

পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে ৪০ পৃষ্ঠায় (বৌদ্ধ) শব্দটি দুই রকমের বানান লেখা হলো। একই পৃষ্ঠায় (কুমারপাড়ার) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে কুমার-পাড়ার।

পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে ৪৭ পৃষ্ঠায় (ডিসেম্বর) বানানটি সঠিক যুক্তবর্ণ হয়নি। যেটি ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১ নং পৃষ্ঠায় ডিসেম্বর বানান শব্দটি দেখলে বুঝা যায়। পঞ্চম শ্রেণির ৯৫ পৃষ্ঠায় (আরবদেশের) লেখা আছে, কিন্তু শুদ্ধ বানান আরব দেশের হবে। একই পৃষ্ঠায় [মুহাম্মদ (স)] লেখা,কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে মুহাম্মদ (স.)।

পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ৯৬ পৃষ্ঠায় (পরস্পরের) শব্দটি ও বানান ভুল লেখা হলো। একই পৃষ্ঠায় (আসে নি) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে আসেনি। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ৯৮ পৃষ্ঠায় (যিলকাদ) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে জিলকদ। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ১০৩ পৃষ্ঠায় (নামে নি) লেখা,কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে নামেনি। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ১০২ পৃষ্ঠায় (ঝর্ণার) লেখা, কিন্তু একই বইয়ের ৩১ পৃষ্ঠায় (ঝরনা) এভাবে লেখা। তাই ১০২ পৃষ্ঠার (ঝর্ণার) সঠিক বানান  হবে ঝরনার।

তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইতে ৪৬ পৃষ্ঠায় (১৮ ই) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে ১৮ই। যেটা ৪৩ পৃষ্ঠায় ১৮ই লেখা থেকে প্রমাণিত। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে ৬২ পৃষ্ঠায় (বাঁধো নি) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ বানান বাঁধোনি।

তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে ৯৯ পৃষ্ঠায় হযরত আবু বকর (রা) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে হযরত আবু বকর (রা.) এবং নবিজি (স) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ বানান নবিজি (সা.) হবে। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে ১০২ পৃষ্ঠায় (খোলাফায়ে রাশিদিন) লেখা, কিন্তু শুধু শুদ্ধ বানান হবে খোলাফায়ে রাশেদিন হবে। একই পৃষ্ঠায় [হযরত আলি (রা),হযরত উমর (রা) এবং হযরত উসমান (রা) লেখা]; কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে হযরত আলি (রা.),হযরত উমর (রা.),হযরত উসমান (রা.)।

নিম্নে ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বানান ভুলসমূহ তুলে ধরা হলো:
২ নং পৃষ্ঠায় লেখা (দেখবো),কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে দেখব। ৪ নং পৃষ্ঠা লেখা আছে রুমার, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে রুমানার। একই পৃষ্ঠায় লেখা ডিসকোভারি, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে ডিসকভারি। একই পৃষ্ঠায় লেখা পায় নি, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে পায়নি। একই পৃষ্ঠায় লেখা করেছো, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে করেছ। একই পৃষ্ঠায় লেখা বললো, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে বলল। একই পৃষ্ঠায় লেখা আত্মপরিাচিতি, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে আত্মপরিচিতি। একই পৃষ্ঠায় লেখা  আত্মপরিাচিতি পত্র, কিন্তু শুদ্ধ বানান  আত্মপরিচিতিপত্র। একই পৃষ্ঠায় লেখা পরিচিতি পত্রও, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে পরিচিতিপত্রও। একই পৃষ্ঠায় লেখা তার পরিচয়ের ছক, কিন্তু শুদ্ধ বানান  তাঁর পরিচয়ের ছক। একই পৃষ্ঠায় লেখা গলগতভাবে, কিন্তু শুদ্ধ বানান দলগতভাবে। একই পৃষ্ঠায় লেখা মনীদের, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে মনীষীদের। ৬ নং পৃষ্ঠায় লেখা ধানক্ষেত, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে ধানখেত। এছাড়া (দেখে নি, করেন নি, চান নি) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ বানান (দেখেনি, করেননি, চাননি)।

৭ নং পৃষ্ঠায় লেখা (বড়, হয় নি, এল, দেয় নি) লেখা, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে বড়ো, হয়নি, এলো, দেয়নি। একই পৃষ্ঠায় লেখা লুৎফর রহমান, কিন্তু শুদ্ধ বানান শেখ লুৎফর রহমান। একই পৃষ্ঠায় লেখা সরকারি অফিসের কেরানি, কিন্তু শুদ্ধ হবে আদালতের সেরেস্তাদার। একই পৃষ্ঠায় লেখা ফার্সি, কিন্তু শুদ্ধ বানান ফারসি। একই পৃষ্ঠায় লেখা (তোমরা তাঁর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লে এছাড়াও তাঁর জীবনের আরও অনেক কথা জানতে পারবে।), কিন্তু শুদ্ধ হবে (এছাড়া তোমরা তাঁর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লে তাঁর জীবনের আরও অনেক কথা জানতে পারবে।)। ৮ নং পৃষ্ঠায় লেখা সঙ্গতিও, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে  সংগতিও। বইয়ের ১১ নং পৃষ্ঠায় লেখা একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবলেন, কিন্তু শুদ্ধ হবে মেয়েদের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবলেন। একই পৃষ্ঠায় লেখা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল, কিন্তু শুদ্ধ হবে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস’ স্কুল। একই পৃষ্ঠায় লেখা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল, কিন্তু শুদ্ধ হবে  সাখাওয়াত মেমোরিয়াল উর্দু প্রাইমারি স্কুল। একই পৃষ্ঠায় লেখা রোকয়োর,কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে রোকেয়ার। একই পৃষ্ঠায় লেখা সাহত্যি, কিন্তু শুদ্ধ বানান হবে সাহিত্য।

শিক্ষার্থী,ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ফেনী সরকারি কলেজ।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: