মধ্যবিত্তরা কেমন আছে?

শহরটা বেশি খরচার, সঞ্চয় বরাবরই জাদুঘরে। তবুও ‘ভালো থাকার’ আশায় এখানে লাল-নীল সংসার পাতে মানুষ। প্রতিদিন ‘অসহ্য’ যানজটে বাসে ঝুলতে ঝুলতে যায় গন্তব্যে। দামি রেস্তোঁরায় খাওয়ার বিপরীতে উদরপূর্তি করে রাস্তার ধারের ভ্রাম্যমাণ সস্তা হোটেলে, দু’টো মোটা রুটি আর গুড়ে। সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফেরে ‘ঘামের দামে’ খাদ্য কিনে। এই রুটিন, এই চিত্র জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহর, ঢাকার। বসবাসরত সকল মধ্যবিত্ত মানুষের।
‘হাত পাততে না পারা’ এই সম্প্রদায় সর্বদা সমস্যার ‘জরুরি বিভাগে’ থাকলেও ভান ধরে দিব্যি আছে। নির্লিপ্ত হাসিতে বলে, দ্রব্যমূল্য আজ এক লাগামহীন ঘোড়া। কথায় কথায় লাফিয়ে বাড়ছে দাম। শুধু বাড়ছে না বেতনটাই। ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে, বাস-ট্রেন স্টেশনের মতো। কিন্তু কী আর করা, এভাবেই চলতে হবে। খেয়ে না খেয়ে গ্রামে টাকা পাঠাতে হবে, গলা অবধি ডুবে থাকা ঋণ শোধ করতে হবে কচ্ছপের গতিতে। পূরণ করতে হবে প্রিয়জনের ছোট-ছোট বায়নাও। হাসতে হবে সবার অলক্ষ্যে, একান্তে চোখ মুছেই।
‘বুকের ভেতর’ মালবাহী ট্রাকের মতো ভারী দুঃখ বয়ে বেড়ানো এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ বাড়ি থেকে ফোন আসবে। শুনবেন, পিতামাতা কিংবা স্বজনদের কেউ একজন নেই। আপনাকে ‘সাত জনমের পর’ করে চলে গেছেন অনন্তলোকে। তখন সাময়িকভাবে নিজের ভাগ্য আর ভদ্রপল্লীর ঈশ্বরকে কিছু সময় দোষারোপ করবেন। বলবেন, আমার সাথেই কেন এমন হয়?
এটাই জীবন, মধ্যবিত্তরা এভাবেই বাঁচে। উৎসব-পার্বণ এলে মাথা নিচু করে বলে, আমার আগের পোশাকটারই তো এখনো ভাঁজ ভাঙেনি। নতুনের কী দরকার? ইলিশের বদলে পাঙ্গাস-তেলাপিয়াই খাই না, সমস্যা কোথায়?
শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস, পবিত্র মাহে রমজান। এই সময়েও ‘উপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’ নীতি নিয়েই চলছে বিত্তের কাতারে নেহাতই ক্ষত-বিক্ষত এই সারির মানুষরা। সেহেরি-ইফতার সারছে, সাদামাটাভাবেই। অথচ মুখ ফুটেও বলছে না, মেহেদী পাতার মতো ভেতরটা রক্তাক্ত-ছিন্নভিন্ন।
মাস শেষ হয়ে আসে, বয়স বেড়ে যাওয়া হাতঘড়ি জানান দেয়, তার ব্যাটারি শেষ। বাড়িওয়ালা অ্যালার্মের মত সতর্কবার্তা ছুঁড়ে দেয়, ভাড়া কিন্তু ৫ তারিখের ভেতরই চাই। হেরফের যেন না হয়। সঙ্গে গ্যাস বিল, পানি বিল, ময়লার বিল, দারোয়ানের হাদিয়া, ওষুধ-পথ্য, মোবাইল বিল, বাজার-সদাইয়ের ব্যাপার তো আছেই।
সোমালিয়ার ভিখারির গর্ভে না জন্মে, এদেশে জন্মগ্রহণ। মধ্যবিত্তরা ভাবেন, এটাই হয়তো আজন্ম পাপ। কিন্তু আংশিক না, পূর্ণরূপেই এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেমন আছি’র জবাবে খারাপ থাকলেও দাঁত বের করে ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার আমির খানের মতো বলতে হবে, আল ইজ ওয়েল।
আসলেই কী সব ঠিক আছে? মধ্যবিত্তরা ভালো আছে?
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, গীতিকার ও নির্মাতা
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: