• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ক্লাসরুমে ভিডিও কন্টেন্ট ব্যবহার

ফাহমিদুল হক

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ১৪ মে ২০২৩

আপডেট: ১৯:৩৫, ১৪ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ক্লাসরুমে ভিডিও কন্টেন্ট ব্যবহার

ক্লাসরুমে ইউটিউব কন্টেন্ট ব্যবহার

আমি আমেরিকান ক্লাসরুমে পড়াতে গিয়ে দেশের পাঠদানের পদ্ধতির সঙ্গে বেশ কিছু পার্থক্য দেখতে পাই, একটা প্যারাডাইম শিফটের মতো হয় আমার। প্রথম সিমেস্টারে আমার স্টুডেন্ট ইভালুয়েশন বেশ খারাপ আসে। পরের সিমেস্টারে আমাকে একজন অধ্যাপক, সিমেস্টারজুড়ে ট্রেইন-আপ করতে থাকেন। পরের সিমেস্টারেই ভালো ফলাফল আসে। আমার প্যারাডাইম শিফট হয়ে যায়। 


আমেরিকার ক্লাসরুমের পাঠদান পদ্ধতিকে বলে ‘একটিভ লার্নিং’ বা ’এনগেইজড লার্নিং’, দেশেও এখন অনেকে জানেন সেটা। এই পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে এই পদ্ধতিতে স্টুডেন্টরা ক্লাস থেকেই কিছু না কিছু শিখে বের হয়। এই পদ্ধতির পূর্বশর্ত হচ্ছে, শিক্ষক টানা কথা বলবেন না। বা টপিকের সবটা বলবেনও না। লেকচার অনেকগুলো উপাদানের একটা। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে থাকে গ্রুপ ডিসকাশন, মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট প্রদর্শন, শ্রেণিকক্ষের এক্টিভিটি ইত্যাদি। পরিস্থিতিকে বাড়িয়ে বলা যায়, নাচে-গানে ভরপুর উপায়ে পাঠদান।  


এজন্য অনেকেই ক্লাসরুমে ইউটিউবের বা সামাজিক মাধ্যমে কন্টেন্ট ব্যবহার করেন। আমি প্রতি ক্লাসেই করি, এক বা একাধিক ইউটিউব ভিডিও ব্যবহার করি। রিডিং ম্যাটেরিয়াল ও লেকচারের সাথে সেটা ভিন্নমাত্রা যোগ করে। আমি যেধরনের কোর্স পড়াই (যেমন, সাউথ এশিয়ান সিনেমা, আন্ডারস্ট্যান্ডিং সোশ্যাল মিডিয়া), তার সাথে এসব ভিডিও কেবল যায় না, অনেকখানি এগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। ক্লাসিক বা রেকমন্ডেড সিনেমার ট্রেলার/মূল ছবি ইউটিউবে পাওয়া যায়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, এলগরিদম, বা ডিপ ফেইক বোঝাতে মুখের কথার চাইতে ভিসুয়্যাল ম্যাটেরিয়াল বেশি কার্য়কর। তবে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, যেকোনো কোর্স, নেইম এনি কোর্স, ইউটিউব বা অনলাইন কন্টেন্ট ব্যবহার করা সম্ভব। খোঁজার টেকনিক জানা ও খোঁজার অভ্যাস থাকাটাই হলো মূল বিষয়। 


আমার এই প্যারাডাইম শিফটের বেশিরভাগটাই আমি ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। একটানা ও মনোটনাস ক্লাসরুম লেকচার আসলেই কম কার্য়কর। আর আমার মতো মাঝারি মানের বক্তার জন্য এটা অবশ্যই প্রযোজ্য। অনেকে আবার ক্লাসরুম জমিয়ে রাখতে পারেন, কথা দিয়েই; কিন্তু ক্লাসের মূল লক্ষ্য তো শিক্ষার্থীর লার্নিং, শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে ঘরে কী নিয়ে যাচ্ছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বক্তৃতা দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখা, তা নিশ্চিত করে না। বরং একটিভ বা এনগেইজড লার্নিং তার নিশ্চয়তা দেয়। হয়তো তাত্ত্বিক গভীরতায় প্রবেশের জায়গায় সীমাবদ্ধতা থেকে যায়। এসব নিয়ে বিতর্ক অবশ্য চলমান আছে। 


যেটা বলছিলাম, যে আমি ক্লাসে প্রচুর ইউটিউব ভিডিও ব্যবহার করি। এবার নিজেই ক্লাসে ব্যবহারোপযোগী ভিডিও প্রস্তুত করা শুরু করেছি। যেহেতু আমার বেড়ে ওঠা ও শিক্ষকতা জীবনের বেশিরভাগটাই বাংলাদেশের একাডেমিয়ায়, তাই একটা দায়িত্বও বোধ করি, যে এখানে বাড়তি যতটুকু শিখছি, কোনো উপায়ে তা স্থানান্তর ঘটানো। উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছি ফেসবুক ও ইউটিউব ভিডিও।


টেক্সট লিখে একটিভিজমের পাশাপাশি লাইভ শো বা রিল করছি। এখন একাডেমিক মনোভঙ্গিতে নির্বাচিত বিষয়ে মোটামুটি ১০ মিনিটের ইউটিউব ভিডিও করছি; সেসবে একটু প্রফেশনাল লুক দেবার চেষ্টা করছি, কথার পাশাপাশি সাপোর্টিং ডকুমেন্ট দেবারও চেষ্টা করছি। সিরিজটার নাম দিয়েছি ‘ভিডিও নিবন্ধ (Video Essay)’। আমার এক্সপার্টিজ অনুযায়ী একেকটা টপিক ধরে ভিডিও করছি। এখন অব্দি ৬টা ভিডিও আপলোড করেছি, আমার ‘হককথা’ ফেসবুক পেইজে ও ‘Haq Kotha’ ইউটিউব চ্যানেলে। আমি বহু প্রকাশনা সম্পাদনা করেছি, সম্পাদনার কাজটি একইসঙ্গে ক্লান্তিকর ও আনন্দদায়ক। মুদ্রণ সম্পাদনায় সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু ভিডিও সম্পাদনা বরাবরই আমার বিরক্তিকর লাগতো। সেই বিরক্তিকর কাজটাও কিছুটা শিখেছি। সম্পাদনার সফটওয়্যার কিনেছি। এখন আইফোন ১৩-তে রেকর্ড করি আর ল্যাপটপে সেটা ট্রান্সফার করে সম্পাদনা করি। এসবই চিন্তাশীল ও যত্নশীল এই সিরিজের ভিডিওগুলোর জন্য। 


আমার নিবেদন আপনারা আমার এই কন্টেন্টগুলো ক্লাসরুমে ব্যবহার করতে পারেন। ক্লাসরুম টিচিংয়ে ভিডিওগুলো কেবল ভ্যারিয়েশনই আনবে না, আমি দাবি করছি, সমৃদ্ধও করবে। এরমধ্যেই আমি ভিডিও করেছি, সামাজিক মাধ্যমের গোড়ার কথা, ম্যাকলুহানের ম্যাজিক, ডিজিটাল যুগে সেন্সরশিপ, ইনফ্লুয়েন্সার ক্যাপিটালিজম, সাংবাদিকতার শক্তি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। আরো করতে থাকবো। সোশ্যাল মিডিয়া কোর্সের নানান বিষয়ই এগুলো, তবে অন্যান্য কোর্সেও প্রয়োজনানুযায়ী ব্যবহার করা যাবে। ইউটিউবেই এসব বিষয়ে ভিডিও আছে, কিন্তু বাংলায় তেমন কিছু নেই। আর বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তো বাংলা কন্টেন্টই পছন্দ করবে। দুয়েকজন ইতোমধ্যে ব্যবহার শুরু করেছে। আপনারাও ট্রাই করতে পারেন। 

ফাহমিদুল হক

লেখক : সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 ১৪ই মে, ২০২৩

মন্তব্য করুন: