• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১১ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

১ বছরের অসম যুদ্ধের পর

দেউলিয়া হবার পথে কে আমেরিকা না রাশিয়া?

তৌফিকুল ইসলাম পিয়াস, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ১৬ মে ২০২৩

আপডেট: ১৯:২৮, ১৬ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
দেউলিয়া হবার পথে কে আমেরিকা না রাশিয়া?

রেকর্ড পরিমাণ তেল বিক্রি করে রাশিয়ার আয় ’শূন্য’!

বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো এবং অধিকাংশ মানুষ জানে যে - রাশিয়া বহু আগেই এই যুদ্ধে জিতে গেছে; পুরো ইউক্রেন প্রায় রাশিয়ার হয়ে গেছে; নয়তো হবার পথে! 
রাশিয়ার অর্থনীতি তেজী হয়ে উঠেছে। আর আমেরিকার ডলারকে পেছনে ফেলে দিয়ে চায়নিজ রেনমিনবি (অবশ্য এরা চায়নিজ মুদ্রার নামটাও হয়তো জানে না ঠিকঠাক) বা আরএমবি অথবা ইওয়ান ইতমধ্যেই বিশ্ব মুদ্রায় পরিণত হয়ে গেছে। আমেরিকার অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। সেদিন তো সময় টিভি জানিয়েই দিলো যে, আমেরিকা দেওলিয়া হয়ে গেছে। অর্থাৎ ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকা পুরোপুরি পরাজিত হয়ে গেছে। 

প্রথমে বলি রাশিয়ার অর্থনীতির অবস্থা কেমন?

আমরা খবরে দেখছি রাশিয়ার তেল বিক্রি বহুগুনে বেড়ে গেছে। ভারত এবং চায়না যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রীতিমত প্রতিযোগীতায় লিপ্ত রয়েছে - কে কত বেশী তেল রাশিয়ার কাছ থেকে কিনতে পারে। দেশদু’টি (ভারত ও চায়না) সর্বকালের সকল রেকর্ড ভেংগে দিয়ে বিগত ১৫ মাসে রাশিয়া থেকে রেকর্ড পরিমান তেল ক্রয় করেছে এবং এখনও করে চলছে। সমস্যা হচ্ছে প্রকৃত পরিমাণ জানা সম্ভব নয়; কারণ ভারত-রাশিয়া বা চায়না কেউ-ই এসব ’বিষয়’ ডিসক্লোজ করে না; বা করার নিয়ম নেই। প্রকৃত সংখ্যা বা মুল্য ডিসক্লোজ করা চুক্তি বিরুদ্ধ কাজ যা চুক্তি ভংগের সামিল। সামান্য কিছু তথ্য পাওয়া যায় মাত্র যতটুকু তারা বলে ঠিক ততটুকুই। 

যাই হোক, রাশিয়া এবার তেল বিক্রিতে দীর্ঘ বহুবছরের শীর্ষ তেল বিক্রেতা সৌদী আরবকেও অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। যে বেশী বিক্রি করতে পারবে সে-ই-তো বেশী পয়সা পাবে। তাই না? তাহলে তো বলতেই হবে রাশিয়া বাম্পার ব্যবসা করেছে। কিন্তু আসলেই কি তাই!
রাশিয়া কি বাস্পার ব্যবসা করে ফেলেছে?
আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্বের ’নিষেধাজ্ঞা’ ভেদ করে রাশিয়া এতো এতো ব্যবসা করে ফেললে তো ‘বাম্পার’ই হবার কথা। কিন্তু আদৌ তা হয়েছে কি? এবার চলুন হাড়ির খবর নিই। রাশিয়া রেকর্ড পরিমান তেল চায়না এবং ভারতের কাছে বিক্রি করেছে - এতে বিন্দুমাত্র অসত্য নেই। অর্থাৎ ঘটনা শতভাগ সত্যি। তাহলে আর সমস্যা কি? 
বিক্রি মানেই তো টাকা; তাই না? রাশিয়া বিক্রি করেছে তেল আর কামিয়েছে টাকা। এটাই তো হবার কথা। সোজা সাপটা যুক্তিহীন চিন্তাবিদদের কাছে এটাই সত্য। 
কিন্তু বাস্তবতা যে বড়ই রূঢ় - সেটা কি আমরা জানি? বাংলাদেশের মানুষ বাংলায় কথা বলে। চাইনিজরা কথা বলে চাইনিজ ভাষায়। আর ওদিকে সৌদী আরবের মানুষ কথা বলে আরবীতে। এখন বলুন তো এই ৩টি দেশের ৩ জন মানুষ যদি একটি রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করে তাহলে তারা কোন ভাষায় কথা বলবে? 
উত্তরটা আমরা সকলেই জানি - ভাষাটা হবে ইংরেজীতে। বাংলা অথবা আরবী কিংম্বা ম্যান্ডারিনে নয়। কারণ এরা একজন অপরজনের ভাষার বুঝে না। আর ইংলিশ যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভাষা সেহেতু সকলে ইংলিশেই কথা বলবে। 

এবার আসুন আগের গল্পে। রাশিয়া তেল বিক্রি করেছে ভারতের কাছে। আমেরিকান ডলার তো রাশিয়ার সংগে ব্যবহার করা নিষেধ। তাহলে রাশিয়া কোন দেশের টাকায় তেল বিক্রি করেছে? আপনি উত্তরটি ভাবতে থাকুন। এই ফাঁকে আমি আরেকটি প্রশ্ন করে আসি। রাশিয়া আরও বেশী তেল বিক্রি করেছে চায়নার কাছে। আমেরিকান ডলার তো রাশিয়ার সংগে ব্যবহার করা নিষেধ। তাহলে রাশিয়া কোন দেশের টাকায় তেল বিক্রি করলো? উত্তর খুঁজে পেয়েছেন কি? ভারতীয় রুপি রাশিয়ায় চলে না। 
চাইনিজ আরএমবিও রাশিয়ায় চলে না। আর ভারত বা চায়না কারোর কাছেই রুবল নেই। আছে শুধুই নিজেদের টাকা। তাহলে রাশিয়া এতো এতো রেকর্ড পরিমান তেল বিক্রি করে কি পেলো? 
কি পেয়েছে শুনবেন? ঐ যে - বিশাল এক ‘লবডংকা’!


আমেরিকার ডলার ছাড়া পৃথিবীতে আর মাত্র ২টি দেশের কারেন্সী আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বা ব্যবহার করা যায়। সে দুটোর একটা হচ্ছে পশ্চিম ইওরোপের সিংগেল কারেন্সী - ইওরো। এবং অপরটি বৃটিশ মুদ্রা পাউন্ড। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে - ইওরো এবং পাউন্ডওয়ালারাও আমেরিকার সিদ্ধান্তের বাইরে কখনও নড়াচড়া করে না। কাজেই শুধুমাত্র আমেরিকান ডলারই নয়; ইওরো এবং পাউন্ড ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। 
চাইনিজ আরএমবি কোন আন্তর্জাতিক মুদ্রা নয়। বিশ্বের কোন দেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে আরএমবি ইউজ করে না - অদূর ভবিষ্যতে যে করবে; তারও কোন সম্ভাবনা নেই। চায়না যে সারা পৃথিবীর দেশে দেশে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ঋন বিতরণ করে যাচ্ছে - তাও মার্কিন মুদ্রা ডলারে; তাদের নিজস্ব মুদ্রায় নয়। কারণ চাইনিজ মুদ্রা এই বিশ্বের কেউ গ্রহন করে না। 


ভারতের রুপি, চাইনিজ ইওয়ান, বাংলাদেশী টাকা, আর রাশিয়ান রুবল - এদের সকলের একই দশা। বর্ডার পেরুলে কোন ভ্যালু নেই। কেউ পাত্তা দেয় না। 
তাহলে ভারত বা চায়না রাশিয়ান তেল কিনেছে কি দিয়ে? উত্তরটা হচ্ছে চায়না এবং ভারত উভয়েই খুবই চতুর। চায়না দিয়েছে আরএমবি; আর ভারত দিয়েছে রুপি! 
সমস্যা হলো- এই আরএমবি আর রুপি দিয়ে রাশিয়া কি করবে? বিধায় চাইনিজ আরএমবিগুলো চায়নাতেই রয়েছে আর ভারতীয় রুপিগুলো এখনও ভারতেই রয়েছে। 
অর্থাৎ সারমর্ম চচ্ছে - এখনও অবধি রাশিয়ান উপার্যন ‘শূন্য’ বা লবডংকা।  বিগ জিরো। 


এবার আসুন আরেক খবরে, ভারত রাশিয়ার কাছে আর্জি পেশ করেছে - আমরা তো তেল কিনলাম- আমরা না কিনলে এসব তেল কি করতে; এবার আমাদের হেল্প করো - এবার কম দামে আমাদের জমির জন্য সার দাও। রাশিয়াও খুশী মনে গত ১ বছরে  ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন সার ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে; কম মুল্যে কিন্তু টাকা-ছাড়া; আরও জানি কি কি পাঠিয়েছে; রাশিয়ান রুপি জমে আছে ভারতের ব্যাংকগুলোতে। 

ভারত দুই বছর আগে রাশিয়া থেকে দুইটি এস-৪০০ কেনার অর্ডার দিয়েছিলো - সেটা তো পুরাতন খবর; এবং আমরা সকলেই তা জানি। 
সেই অর্ডারের সর্বশেষ খবর কি - জানেন?
”মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে না এমন অর্থপ্রদানের পদ্ধতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত ভারতে সামরিক খুচরা যন্ত্রাংশ এবং দুটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরক্ষা সিস্টেম সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অস্ত্রের জন্য ভারতীয় অর্থপ্রদান প্রায় এক বছর ধরে আটকে আছে। মার্কিন ডলার ব্যবহার করার জন্য ভারত নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে যখন রাশিয়া বিনিময় হারের অস্থিরতার কারণে রুপি নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক। কর্মকর্তারা বলেছেন, মাধ্যমিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উদ্বেগের কারণে ভারত মার্কিন ডলারে বিলটি নিষ্পত্তি করতে পারছে না। অন্যদিকে রাশিয়া বিনিময় হারের অস্থিরতার কারণে রুপি গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক।“ এটি ছিল গত হপ্তার ব্লুমবার্গের রিপোর্ট। এস-৪০০ বিক্রি করে রাশিয়ার আয় ’শূন্য’।
তুরস্কে যে এস-৪০০ সরবরাহের চুক্তি করেছিলো রাশিয়া, সেটার কাহিনীও উপরের ঐ একই অবস্থা! 

ভারত আগে রাশিয়া থেকে যুদ্ধ বিমান ক্রয় করতো। ভারী ট্যাংকও আমদানী করতো। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ান ঐসব যন্ত্রপাতির পারফর্মেন্স দেখে ভারত তাদের সকল অর্ডার বাতিল করেছে গত বছর আগষ্ট মাসে। সে তো পুরানা খবর।
”তেল বিক্রি থেকে পাওয়া রাশিয়ার শত শত কোটি ভারতীয় রুপি ভারতের বিভিন্ন ব্যাংকে পড়ে আছে। ভারতীয় এসব রুপি মস্কোর কোনো কাজে আসছে না। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।” 
ভারতের গোয়ায় হয়ে গেলো ইউরো-এশিয়া অঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা জোট সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠক। সংস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। সেই বৈঠকেই ল্যাভরভ এসব তথ্য জানান।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে উল্লেখ করে ল্যাভরভ বলেন, ‘এটা আসলেই আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। আমরা এই অর্থ ব্যবহার করতে চাই, কিন্তু সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন রুপিকে অন্য কোনো মুদ্রায় রূপান্তর করা। কারণ, ভারত ব্যতীত আর কোনো দেশে এই মুদ্রা চলে না।’ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কীভাবে সমস্যাটির সমাধান করা যায়, তা নিয়েই আলোচনা চলছে।’


আরও একটা মজার খবর আছে, ’ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রাশিয়ায় ভারতের রপ্তানি ১১ দশমিক ৬ শতাংশ বা ২৮০ কোটি ডলার কমেছে। এদিকে আমদানি পাঁচ গুণ বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ১৫৬ কোটি ডলার।’
তাহলে বুঝুন কেমন আছে রাশিয়া?
চায়নার যে বিলিয়ন বিলিয়ন আরএমবি বেইজিং এর রাশানদের একাউন্টে জমা পরে রয়েছে; এবং তা যে ভারতীয় রুপির দশাতেই আছে - সেটা কি আর ব্যাখ্যা করে বোঝানোর প্রয়োজন আছে?

বাংলাদেশের গপ্প শুনবেন না? ঐ যে রুপপুরের পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণের টাকা। সেই টাকার খবর কি? জ্বি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ রাশিয়াকে আর একটি কিস্তিও পরিশোধ করেনি। মানে করতে পারেনি। কারণ আমেরিকার ডলার দিয়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। 
 
তাহলে রাশিয়া চলছে কি ভাবে?
সারা বিশ্ব থেকেই রাশিয়াতে ডলার যাওয়া বা বন্ধ রয়েছে। তারা মাল বিক্রি করছে ঠিকই কিন্তু কোন টাকা পাচ্ছে না। এই যদি কোন দেশের অবস্থা হয় - তাহলে ‘আমেরিকার তো দেওলিয়া’ হয়ে যাবারই কথা; তাই না! নাকি রাশিয়ার দেওলিয়া হবার কথা? আরও একটা খবর হচ্ছে - রাশিয়ার হাতে থাকা হাজার হাজার বোয়িং এবং এয়ারবাস বিমান যা দিয়ে রাশিয়া আকাশপথ সার্ভিস দিয়ে থাকে; সেসব বিমান কোন ওয়ারেন্টি পাচ্ছে না আমেরিকা বা ফ্রান্সের কাছ থেকে। বিমানগুলো একটা একটা করে বসে যাচ্ছে; কিছু বিমান ইরানের কাছে পাঠাচ্ছে হাতুরী ডাক্তার দিয়ে কোন রকমে ঠিক-ঠাক করে আকাশ পথের সার্ভিস সচল রাখতে! এভাবে কয়দিন চলবে কে জানে!

 সর্বশেষ দু’টো আপডেট দিই। প্রথমটি হচ্ছে বাখমুতে রাশিয়ান সন্ত্রাসী ওয়াগান গ্রুপ যারা ভাড়াটে সৈন্য হিসাবে প্রক্সি যুদ্ধ করে যাচ্ছিলো - তারা ঘোষনা দিয়েছে যেহেতু রাশিয়া আর অস্ত্র দিতে পারছে না সেহেতু তারা বাখমুত থেকে পিছিয়ে চলে যাবে। আর দ্বিতীয় আপডেটটি হচ্ছে, ‘ইউক্রেনে বড় হামলা চালানোর সক্ষমতা আর নেই রাশিয়ার; না আছে পর্যাপ্ত অস্ত্র, ট্যাংক বা গোলবারুদ। ইরান ছাড়া অন্য কোন দেশ থেকে রাশিয়া অস্ত্র সংগ্রহ করতেও ব্যর্থ হয়েছে। শত অনুনয় করা সত্বেও চায়না তেল বেচার টাকার বদলে অস্ত্র দিতে রাজী হচ্ছে না।‘ 

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

মন্তব্য করুন: