শর্ট কোর্সসমূহ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রাখার দাবিতে মানববন্ধন

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখছেন শর্টকোর্স ঐক্য পরিষদের নেতারা
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত বেসিক ট্রেড (৩৬০ঘন্টা) ৩/৬ মাস মেয়াদি শর্টকোর্স কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনেই চলমান রাখার দাবিতে শর্ট কোর্স মানববন্ধন করেছে ঐক্য পরিষদ। রবিবার (২১ মে) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য পেশ করেন শর্টকোর্স ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মোঃ নাসির উদ্দিন ভূইয়া।
তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহোদয় সমীপে আকুল আবেদন, আপনার সদিচ্ছায় ভিশন-২০২১ বাস্তবায়িত হয়েছে। আপনি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাকে দক্ষতা উন্নয়নে অগ্রাধিকার প্রদান করেছেন। আমরা স্ব-উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত কারিগরি বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ আপনার সহানুভূতি কামনা করছি। ২০২৩ সালের পূর্বে আমাদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহ পরিচালিত হতো বগুড়ার নট্রামস এর অধীনে। তারপর ২০০২ সাল হতে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বোর্ডের নীতিমালা, প্রবিধান ও শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম অনুসরণে সকল কারিকুলাম মেনে দীর্ঘ ২১বছর ধরে কম্পিউটার কোর্সসহ ১২১টি ট্রেডে অদক্ষ শিক্ষার্থীদেরকে (৩৬০ঘণ্টা) ৩/৬ মাস মেয়াদি ট্রেডকোর্সের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
বর্তমানে ৩৬১২টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শর্টকোর্স পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন ভূইয়া আরো বলেন, গত ১৩ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভর্নিংবোর্ডের সভার আলোচ্য সূচি ৬- এর সিদ্ধান্ত ৬.১ হতে ৬.৭ এর রেজুলেশনের মাধ্যমে জানতে পারি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত (৩৬০ঘণ্টা) ৩/৬ মাস মেয়াদী কোর্স সমূহ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারবে না। বিষয়টি আমাদের আহত করেছে এবং আমরা অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত, কারণ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সবেমাত্র ৫ থেকে ৬টি ট্রেড/অকুপেশনে এনটিভিকিউএফ লেভেল নিয়ে কাজ করছে।
এদিকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পরিচালিত জাতীয় দক্ষতামান বেসিক (৩৬০ঘণ্টা) মেয়াদি ১২১টি ট্রেড/অকুপেশনে সকল সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছেন। শিক্ষার যেমন বিভিন্ন স্তর রয়েছে তাদের মধ্যে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি এবং হায়ার এডুকেশনের মধ্যে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে (৩৬০ঘণ্টা) মেয়াদি কোর্স প্রাইমারি শিক্ষার মতো শুধুমাত্র সার্টিফিকেট কোর্সটি পরিচালনা করে সারাজীবনের জন্য সনদায়ন করে থাকেন। অন্যদিকে, এনএসডিএ শুধুমাত্র এনটিভিকিউএফ লেভেল ২ থেকে লেভেল ৪ পর্যন্ত পরিচালনা শুরু করেছেন এবং তাদের সনদের মেয়াদকাল মাত্র ৫ (পাঁচ) বছর।ফলে দুই কোর্সের মধ্যে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয় নেই, বরং সার্টিফিকেট কোর্স করার পর কোনো প্রশিক্ষণার্থী উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে এনএসডিএ'র অধীনে লেভেল ১ থেকে লেভেল ৬ পর্যন্ত কোর্স করে উচ্চ পর্যায়ের ট্রেইনার তৈরি করতে পারবে। শর্টকোর্সগুলো কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে বন্ধ করলে এনএসডিএ'র অধীনের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষণার্থী স্বল্পতায় পড়বে। সেই সঙ্গে দেশের কারিগরি শিক্ষার হার মুখ থুবড়ে পড়বে। যেহেতু জাতীয় দক্ষতামান বেসিক (৩৬০ ঘন্টা) শিক্ষাক্রম এবং এনএসডিএ কর্তৃক পরিচালিত কোর্সের শিক্ষাক্রম এক নয়, তাই কোর্সটি কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে বন্ধ না করে দুই প্রতিষ্ঠানেই এর কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আওতায় পরিচালিত শর্টকোর্স সনদায়নের কার্যক্রম স্থগিত করা হলে কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্টের হার হ্রাস পাবে। তাতে সরকারের এনরোলমেন্ট বৃদ্ধির টার্গেট ব্যহত হবে।তাই উক্ত প্রশিক্ষণ ও সনদায়ন কার্যক্রম চালু রেখে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এর আওতায় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পরিচালিত শর্টকোর্স পরিচালনা স্থগিত করার প্রস্তাব যুক্তি সংগত নয়, যদি শর্টকোর্সটি বন্ধ করা হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এনরোলমেন্ট ৩০ সালে ৩০%, ৪০ সালে ৫০% কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের লক্ষমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে বলে আশংকা করছি।
পূর্বের ন্যায় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বেসিক ট্রেড কোর্স সমূহ চলমান রাখার দাবীতে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা-উপমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শর্টকোর্স ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক মো. মোস্তাফিজার রহমান, মো. আফসার আলী, শামীম আরা বেগম, মো. মুনিরুজ্জামান আকনসহ স্ট্যান্ডিং কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: