রাষ্ট্র গঠনের প্রায়োগিক সৈনিক ফরহাদ মজহার
ফরহাদ মজহারের সঙ্গে লেখক
জ্ঞানীর সাথে আলাপে ও তর্কে মজা আছে, এতে নতুন জ্ঞানের পথ তৈরী হয়। ফরহাদ মজহার ভাই আমাকে স্নেহ করেন। এই প্রিভিলেজ আমাকে উনার সাথে এনগেইজ হতে সাহায্য করে। ফরহাদ ভাই গণঅভ্যুত্থান এবং রাষ্ট্র গঠনের তাত্ত্বিক কনসেপ্টগুলো নিয়ে নিরলস কাজ করছেন।
সমাজে মৌলিক জ্ঞানের বিশদ পরিসর দরকারি জিনিস। এটা নিক্তির মত কাজ করে, আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো এক বা একাধিক স্ট্যান্ডার্ড থেকে কতটা বিচ্যুত তা মাপতে মৌলিক জ্ঞান দরকার। দেশে দেশে রাষ্ট্র ও সংবিধান সংস্কারের বহু মডেল আছে, কয়েকটি স্কুল অফ থট আছে। দেশে দেশে স্ট্যান্ডার্ড আছে ৩/৪টা- ১. শুদ্ধ বিপ্লবী সংবিধান ও রাষ্ট্র কাঠামো (ফরহাদ ভাই প্রমোট করছেন), ২. স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস (রেফারেন্ডাম কিংবা কনস্টিটিউশনাল এসেম্বলি কেন্দ্রিক পরিবর্তন) কিংবা ৩. আধুনিক ইকোনোমিক থিউরি ভিত্তিক প্রায়োগিক সমাধান (যেমন প্রফেসর মুশতাক খানের 'থিউরি অফ পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট')। ৪. কিংবা হাইব্রিড।
আমরা কোন পথে যাব, সেটা নিয়ে সমাজে বিতর্ক থাকা জরুরি। গন্তব্যে যাবার পথ ও পদ্ধতি ভিন্ন হলেও আমাদের গন্তব্য এক। তা হচ্ছে সাম্য, মানবিক রাষ্ট্র গঠন এবং ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, অর্থাৎ গঠন। এসব নিক্তিতে বাংলাদেশ যেহেতু ভঙ্গুর তার গঠন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা দরকার। ফরহাদ বিষয়টি তুলেছেন, গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লব প্রশ্নে, সংস্কার এবং গঠন প্রশ্নে ফরহাদ ভাইয়ের অবস্থান জোরালো। উনার সাথে পদ্ধতিগত কিছু মতৈক্য কিংবা বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু আমি তাঁর দার্শনিক অবস্থানকে অত্যন্ত সম্মান করি।
বাংলাদেশে আমরা একটা 'ব্রুটাল ক্যাপিটালিজম' এ আছি, এখানে মুক্তবাজার অর্থনীতি নেই। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশ হয়ে গেছে মাফিয়াতন্ত্র, চোরতন্ত্র, ক্লিপটোক্রেসি। এখানে সবকিছুতেই মনোপলি। সব কিছুতেই 'সিন্ডিকেট' মুক্তবাজারের সমর্থক না। চাইলেই কেউ কোন আমদানি ও সেবার লাইসেন্স পায় না, বাজারে ঢুকতে পারে না। অথচ মুক্তবাজার অর্থনীতির মৌলিক দিক হচ্ছে মনোপলি ভাঙতে সক্ষম রেগুলেটর তৈরী, এবং উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার পরিবেশের নিশ্চয়তা। উদার মুক্তবাজার কৃষি পণ্যের উৎপাদন মূল্য নিশ্চিত করে এবং দারিদ্র্য তৈরীর পথ বন্ধে শিক্ষা স্বাস্থ্যে দক্ষতায় বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশে এসব এমন ক্ষীণ মাত্রায় করে, যেখানে খেলাপি ঋণ শিক্ষা বাজেটের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত দক্ষতাহীন শিক্ষায় পড়ে স্নাতক হয়ে চাকরির জন্য রাস্তায় ঘুরে, এসএমই ব্যাংক ঋণ পায় না, মাফিয়ারা ঋণ নিয়ে ৩০%+ মেরে দেয়, পাচার করে। এখানে ব্যাংক করা হইসে সাধারণ লোক থেকে অর্থ জমা নিতে, সাধারণকে অর্থ দিতে নয়। ব্যাংক সাধারণের সঞ্চয়ের টাকা বৃহৎ শিল্প ও সরকারকে ঋণ দেয়, যারা এটা মেরে দেয়। এখানে ডজন ডজন রেগুলেশন, মনিটরিং (পড়ুন কর্মসংস্থান, জবলেস গ্রোথ) এবং সেবা না হয়েই জিডিপি বাড়ে।
এই রাষ্ট্র পুনর্গঠন লাগবে। আমরা রাষ্ট্র গঠনের বিপ্লবী কিংবা প্রায়োগিক সৈনিক।
ফাইজ় তাইয়েব আহমেদের ফেসবুক থেকে
মন্তব্য করুন: